মুখ ঢাকো কলকাতা
আজ বিষন্নতাকে বিষন্নতাই বলবো, রাগকে রাগ।
রূপক, অলংকার, ছন্দের আলপনা সরিয়ে রাখো।
যে যৌনতার পুজো করেছি
প্রেমের প্রকাশে, দেশ রাগের শৃঙ্গারে,
আজ তার কদর্য মুখ, রক্তের দাগ দুহাতে।
আমার শহর এক আজব হাসপাতাল -
সেই রাতে যে ফেরেনি ঘরে,
তার ছবি ভেসে থাকে চোখে।
তাই কেবল ই ভালোবাসা থেকে মুখ ফেরাই
দূরে সরিয়ে রাখি পরিযায়ী প্রতীক্ষা।
প্রেমহীন আজ শুধু একাকী যাপন।
মুখ ঢাকো কল্লোলিনী, শহর কলকাতা।।
আয় নেমে মা উগ্রচণ্ডা
সুশীল রায়
মা যদি তুই সত্যি থাকিস, পুজোই যদি চাস,
বিচার এনে দে আমাদের, এখনও একমাস।
আজ অসুরের, আজ অসুরীর অবাধ অনাচারে
ঘরছাড়া সব সন্তানেরা, লড়ছে অনাহারে।
তুই তো নারী; স্বৈরাচারী মুখ্য করছে ফোঁস!
আয় নেমে মা উগ্রচণ্ডা, এই যে জনরোষ
বিচার চেয়ে, আয় না মেয়ে, বিচার দিতে আয়,
মাস পেরিয়ে আরেকটা মাস, মানুষ অসহায়।
কীসের পুজো? কৈলাসে কি যায়নি খবর কানে?
ভূভারতে মা-মেয়ে-বোন মরছে মানে-প্রাণে।
মেঘ জমেছে আকাশ জুড়ে, জল জমেছে চোখে।
এমন দিনে বার্তাটি তোর চাইছি মর্তলোকে।
শোক রেখে লোক নাচবে নাকি! পুজোই যদি চাস
—বিচার পেলেই আচার; হবে উৎসবে উল্লাস।
কার মেয়ে?
সুশীল রায়
একটি মেয়ে ধর্ষিতা ও খুন হয়ে যায়। কার
মেয়ে?
—কার মেয়ে? কার মেয়ে? কার মেয়ে?...
প্রশ্ন ছেড়ে তাকাও যদি চোখ মেলে, বিচার
চেয়ে,
বুঝবে সে কেউ দূরদেশী নয়, বাস্তবে তোমার
মেয়ে।
একটি মেয়ে আর ফেরেনি, ফিরবে না আর। কার
মেয়ে?
—কার মেয়ে? কার মেয়ে? কার মেয়ে?
—আমার কিংবা সবার সে, এই দেশজোড়া সব মা'র
মেয়ে।
সেই মেয়েটি ভিনদেশী নয়, ভাগ্যহীন বাবার
মেয়ে।
ভাবছ যদি তোমার পাড়া শান্ত; যদি চুপ থাকো,
আঁধার হলে সব অচেনা, হায়না চেনে সব সাঁকো...
কোন পথে কোন ধর্ষকামী, আড়াল মেখে কোন
খুনি
কাল হয়েছে আরজিকরে, পরশু হ'লো কামদুনি
এবার যদি তোমার ঘরে, আমার ঘরে?... কষ্ট
হয়?
এ ঘোর অমানিশার কালে কী হবে স্পষ্ট নয়।
একটি মেয়ে ধর্ষিতা ও খুন হয়ে যায়। কার
মেয়ে?
—কার মেয়ে? কার মেয়ে? কার মেয়ে?
আমরা যখন আপোষ করি, যায় ঘনান্ধকার ছেয়ে।
আঁধার পথেই ঘুরছে যত শ্বাপদ; হিংস্র চারপেয়ে।
তোমার ভুলে, আমার ভুলে যাচ্ছে ওরা পার
পেয়ে।
আজও তুমি জানতে কি চাও
—কার মেয়ে? কার মেয়ে? কার মেয়ে?...
ভালো মেয়ে
অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়
তুমি তো
শুধু ভালো মেয়ে হয়েই থাকতে চেয়েছিলে গো মা।
সারাদিন
শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা,
সময়
পেলেই মায়ের আদর, একটু খুনসুটি।
হয়েও
ছিলে ভালো ছাত্রী, ভালো চিকিৎসক।
রোগীর
সেবায় নিয়োজিত পবিত্র সুন্দর মন।
বিনিময়ে
কি পেলে? নিষ্ঠুর লাঞ্ছনা।
ভেড়া,গর্দভ
শয়তানরা এটা জানলো না --
মেয়েরা
শুধুই একটা শরীর না
বিকৃত
ঘৃণিত পশুর লালসা মেটাবার।
বেশি
ভালোটা ভালো না গো মা
যেখানে
এতো দুর্গন্ধ, অন্ধকার।
আশে
পাশে হিংস্র জন্তুর উন্মাদ চীৎকার,
লালসার
লোল জিহ্বা, দন্ত ধারালো ছুরি।
কেন এতো
ভালো হলে, নিস্পাপ লবঙ্গ লতা?
মা কেন
গো শেখায়নি তোমায় হয়ে উঠতে কালী,
দ্রংষ্টা
করাল বদনা, হাতে খড়্গ, মুন্ড ?
চারিদিকে
পুঞ্জীভূত নরক অন্ধকার।
রক্ত
লোলুপ পিশাচের বিকৃত শীৎকার।
জানে না
ওরা মনুষ্যত্ব, জানে বলাৎকার।
ওদের
জন্য মানব তীর্থে করুণ হাহাকার।
নারী,
তুমি গর্জে ওঠো ধরো তরবারি।
বুকে
বাঁধো এটম বোমা নিতম্বে কাঁটা ছুরি।
মায়া,
দয়া, ভালোবাসা, কোমল গুণাবলী
লুকিয়ে
রেখে রণ রঙ্গে দাঁড়াও সারি সারি।
আঙুল
তুলে তোলো আওয়াজ, এসপার ওসপার।
ইশারায়
দাও বুঝিয়ে, কেউ পাবে না পার।
পরিবর্তন
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
আগামী
কাদের এখন ভাবার
অবকাশ নেই
হাতে;
আমি তো
দেখছি কলমগুলোই
তরবারি
হয় হাতে।
জানি না
কী করে আসন অটল
এত অভিশাপ
গিলে?
অটল যা
আজ, টলাবেই ঠিক
মেরুদন্ডীরা
মিলে।
আমরা
নিয়েছি কঠিন শপথ
আর সমঝোতা
নয়,
নির্ভয়
হোক প্রতিটি রাত্রী
কোনও
নির্ভয়া নয়।
জানি প্রতিবাদে
আমরা তোমরা,
এ দেখে ওর
দায়!
তাদেরই
মধ্যে বেছে নিতে হবে,
জগদ্দল কে
চায়?
বাঙালী
হওয়ার জন্য অনেক
মূল্য
হয়েছে দিতে,
তাই পথ
ভুলে বিচ্যুত জাতি
খণ্ডিত
হতে হতে।
নিজেদের
নিয়ে ঘৃণা উপহাসও
কম তো
করিনি আমি,
আজকে একটু
গর্ব হচ্ছে
জানো
অন্তর্যামী?
দিনরাত সব
একাকার করে
এত জনতার
ভিড়,
মেয়েটিকে
এনে দেবেই বিচার --
মনোবলে
নেই চিড়।
ঘটি-বাঙালের
চির খটাখটি
যখন
নির্বিবাদ,
তিলোত্তমার
সার্থক নাম,
সার্থক
প্রতিবাদ।
মুক্তি
পার্থ প্রতিম বিশ্বাস
অন্ধকার সেই রাতে
মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে ওরা জিজ্ঞেস করেছিলো,
কি কি আছে তোমার!
নাম বদনাম ধন সম্পত্তি শিক্ষা অশিক্ষা
যশ মান খ্যাতি সম্মান অসম্মান
রাগ ভালোবাসা যন্ত্রণা লোভ ক্ষোভ
প্রেম প্রাপ্তি অহংকার ইচ্ছা অনিচ্ছা
গোপন ও প্রকাশ্য সম্পর্ক,
যা কিছু মনে এলো, সব বলেদিলাম।
ওদের কঠিন চোখগুলো,
আরও কিছুর খোঁজ করছিলো।
বললাম, অজানা আরও যা কিছু,
খুঁজে পেলে দিয়ে দেবো সেসবও।
নিয়ে নাও সবগুলোই।
এত ভার যে আর বইতে পারছি না,
সবকিছু থেকেই মুক্ত করো আমায়,
আমি মুক্তি চাই।