১
যাত্রারম্ভ
২২শে জুলাই ২০২২
২২শে
জুলাই ২০২২ ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় বাড়ি থেকে বেরোলাম। চায়ের দুধ কাপে পড়ে রইল। ৯টা ৩৫ মিনিটের
উড়ান ধরব বলে গৃহকর্তা চা করার সময়টুকু না দিয়ে তাড়া লাগিয়ে ডট ছ’টায় বাড়ি থেকে বের
করে আনলেন। ওস্তাদ চালক। কল্যাণী এক্সপ্রেস ওয়ে, যশোর রোড — কোথাও যানযট
নেই। হুহু করে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। গন্তব্য দিল্লি হয়ে লে। মাসখানেক ধরে
নানা সূত্র ধরে গবেষণা করে নিজেদের শখ সামর্থ্য ও স্বাস্থ্যের পক্ষে সম্ভব, এমন একটা
ভ্রমণসুচি বানিয়েছি।
গাড়িতে এয়ারপোর্ট আসার পথে খবর পেয়েছি, আমাদের ‘ইনার
লাইন পারমিট’ হয়ে গেছে; তিনজনের মোট ১৬৮০ টাকা পড়েছে। এই পারমিট অত্যাবশ্যক, যেমন অত্যাবশ্যক
পোস্ট পেইড মোবাইল কানেকশন, কারণ লাদাখে প্রিপেইড সিম অকেজো। শুভঙ্কর ও আমার মোবাইলের
একটা সিম কার্ডকে পোস্ট পেইড করিয়ে নিয়েছি কিছুদিন আগেই।
ডিপার্চার টার্মিনালে পৌঁছে অতৃপ্ত চা তেষ্টা কফি তৃষ্ণায়
বদলে গেল। সঙ্গে সামান্য খাইখাই। আমি গবীব মানুষ। এয়ারপোর্টের বাইরেই কিছু মুখে দিয়ে
ঢোকার পক্ষপাতী। বিমানবন্দরে আমার মা বা মেয়ের মতো ভিআইপি-দের কদাচিত স্বাগত জানিয়ে
আনতে গিয়ে দেখেছি বাইরের স্টলগুলোয় দাম পড়তায় পোষায়, কিন্তু ভেতরে ছ্যাঁকা লাগে।
কন্যার পিতা তাতেও আপত্তি জানালেন — আগে বসি।
বাপসোহাগী মেয়েও তাল দিল। প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে ঢুকেই তারা উপলব্ধি করল, কিছু একটা
খেলে মন্দ হত না, সঙ্গে এক কাপ করে কফি। গরীবের কথা বাসী না হওয়া পর্যন্ত কানে তুলতে
নেই। তবে বাপ-মেয়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই চীজ় মাখন উদ্ধার করব বলে বাড়ি থেকে স্যান্ডুইচ
বানিয়ে এনেছিলাম। ‘ফ্লাইং বাইটস্’ ফলকিত একটি দোকানে কফির বরাত দিতে গিয়ে দেখলাম রেগুলার
২২০ টাকা, মিডিয়াম ২৪০ আর লার্জ ২৬০ টাকা। ব্যথিত চিত্তে ৬৬০ টাকা দিয়ে তিন কাপ কফি
কিনে স্যান্ডুইচের সদ্গতি করার পর দুঃখ ভুলতে ব্যাগ, জুতো, কাচের গৃহসজ্জা-সামগ্রী,
চিকনকারি পোশাক, বাংলার হস্তশিল্প ইত্যাদি প্রাণভরে উইনডো শপিং করে সময় কাটাতে লাগলাম।
শুভঙ্কর আর উর্বী, মানে আমার জীবনসঙ্গী ও কন্যা মাঝেমাঝেই
পালা দিয়ে আমায় ফোন করে ডাকছিল। বাপের চেয়ে মেয়ের শাসন বেশি। লাখখানেক টাকার ‘মানস
ক্রয়’ করে আমার তখন ‘টাপাটিনি নাচতে ইচ্ছা করছিল প্রবল। হল না। মনামি তারকা অভিনেত্রী
বলে স্পাইস জেটের শতখানেক সুন্দরীকে নাচে পাশে পেতে পারে, কিন্তু লাস্ট বেঞ্চার লেখিকা
নাচলে নাকি পুলিস ধরবে!
যাইহোক, ১০:৩৫-এ আমাদের বিমান রানওয়েতে এসে ১১টা নাগাদ
মাটি ছাড়ল। ২২ তারিখেই রাত পৌনে বারোটায় দিল্লি। টার্মিনাল দুই থেকে টিকিট কেটে বাসে
চড়ে যেতে যেতে মনে হল প্রায় ১০ কিলোমিটার বিমানবন্দর এলাকার বাইরে শহরের মধ্যে দিয়েই
যেতে হল। সেই সময়টা বিমানবন্দরসুলভ চাকচিক্য চোখের বাইরে হারিয়ে মনে মালপত্র যথাস্থানে
ফেরত পাওয়া নিয়ে চিন্তাটা দশগুণ বেড়ে গেল। দিল্লি এয়ারপোর্টের অনেক সুখ্যাতি শুনেছি।
কিন্তু আমার চোখে একই ছাদের তলায় লম্বা সুউচ্চ বাংলা অক্ষরসজ্জিত করিডোর বিশিষ্ট কলকাতা
বিমানবন্দরই তুলনায় বেশি রূপসী।
রাত জেগে অপেক্ষা করার সময় শুভঙ্করের এক সহকর্মীর সঙ্গে এয়ারপোর্টে সাক্ষাৎ হল। গন্তব্য অনুরূপ, তবে তিনি যাচ্ছেন শ্রীনগর; কার্গিল হয়ে লে ঢুকবেন।
পরবর্তী পর্ব : ২ ।। পদার্পণ