সাতকোশিয়া কপিলাশ

 সাতকোশিয়া কপিলাশ

শুভজিৎ তোকদার




বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট

২০২২ সালটা এলো সাথে করোনার তৃতীয় ঢেউ ওমিক্রনকে সাথে করে নিয়ে এলো একধাক্কায় পরপর দুটো ট্রিপ বাতিল একটা সান্ডাকফু অন্যটা রাজগির মনমেজাজ যখন খুবই খারাপ, তখন ভ্রমনবন্ধুদের ডাকাডাকি শুরু করলাম প্রথমে মানস দা, তারপর বাবুলাল দা, এরপর রাকেশ, নবারুণ দা (সাথে ওনার বন্ধু), এবং দেবকুমার দা যাকে যাকে হাঁকডাক করলাম সবাই সাড়া দিলো একসাথে কারন দুটো - প্রথমটা হল করোনার প্রভাবে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে কয়েকদিনের মুক্তিলাভ আর দ্বিতীয়টা হল যে জায়গা যাবো, সেটার নাম শুনে না বলা যায়না আমাদের গন্তব্য এবার "ওড়িশার কৈলাস" কপিলাশ এবং স্বর্গ বলে কিছু থাকে তাহলে সেই "স্বর্গ" ওড়িশার সাতকোশিয়া একডাকেই সাতজনের টিম তৈরি পরে যাওয়ার আগেরদিন, বাবুলাল দা, শারীরিক ব্যাপারে যেতে না পারায় ছয়জনের টিম হল কপিলাস সাতকোশিয়া যাওয়ার ২২ শে জানুয়ারি রাতে যাওয়ার ট্রেন কটক হয়ে, পরের দিন সকালে ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিনে ওনার কটকে জন্মস্থান দেখে কপিলাস রাত্রিবাস প্রথমদিন, দ্বিতীয়দিন ২৪ তারিখ কপিলাস থেকে সাতকোশিয়া গিয়ে সেখানে রাত্রিবাস শেষদিন ২৫ তারিখ সাতকোশিয়া ঘুরে ভুবনেশ্বর গিয়ে সেখান থেকে আমাদের ফিরতি ট্রেন রাতে এইছিলো আমাদের তিনদিনের ছোটো ছুটিতে দেদ্দার মজার উইকেন্ড ট্রিপের প্ল্যান

নির্ধারিত ২২ শে জানুয়ারি রাতে পুরী এক্সপ্রেসে ছয়জন রওনা দিলাম ট্রেন পাওয়া নিয়ে আরেক গল্প আমার ট্রেন প্রায় মিস হয়ে যাওয়ার মুখে শেষ মুহূর্তে গিয়ে ট্রেনে উঠতে পারি যাইহোক, পরেরদিন ভোরবেলা কটক স্টেশনে নেমে রেলের রিটারিং রুম ভাড়া নিলাম ফ্রেস হওয়ার জন্য তারপর ব্রেকফাস্ট করে আমাদের আজকের গন্তব্য কটক স্টেশনে কোনো বড় গাড়ি না পাওয়ায়, কপিলাস হোটেল থেকে বোলেরো গাড়ি ভাড়া করা হয় প্রথমেই আমাদের গন্তব্য জানকিনাথ ভবন নেতাজী সুভাষচন্দ্রবোসের জন্মস্থান সেদিন আবার ২৩ শে জানুয়ারি, ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী তাই বিশেষ দিনে যাওয়ার সৌভাগ্য হল সেদিন মিউজিয়াম বন্ধ থাকলেও, বাড়ির বাইরে অনুষ্ঠান দেখলাম, ঘুরে দেখা হল



কটকে নেতাজীর
 জন্মস্থান
    

এরপর আমাদের গন্তব্য আনসুপা লেক রাস্তায় পিকক ভ্যালি পড়ে কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না যাওয়ায় ময়ূরের দেখা মেলে না তারপর পৌঁছালাম আনসুপা লেক একটু খাওয়া দাওয়া করে দেশী ডিঙি নৌকায় সবাই বসে পড়লাম শীতকালে হরেকরকম পাখির মেলা খুবই ভালো লাগার মতো পরিবেশ পাশের ইকোপার্ক টা কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ আনসুপা লেক নৌবিহার সম্পন্ন করে আমাদের পরের গন্তব্য সপ্তশয্যা ঢেঁকানলের কাছে বনের মধ্যে রামসীতার মন্দির পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, বনবাসের সময় শ্রীরামচন্দ্র সীতা দেবী এখানে এসেছিলেন সপ্তশয্যায় বনের রাস্তার পাশে ছোটো একটা ঝর্ণা আছে বর্ষাকালে জলে ভরপুর থাকে

সপ্তশয্যা থেকে ফিরে আমরা দুপুরের খাওয়া ঢেঁকানলে সেরে নিয় ঢেঁকানল রাজবাড়ী পরের দিন দেখার প্ল্যান রাখি, এবং জোরান্দা সময়ের অভাবে বাদ দেওয়া হয় সেদিনের শেষ গন্তব্য ছিলো ওড়িশার কৈলাস কপিলাশকপিলাশ পাহাড়ের উপর একটা শিবতীর্থ প্রায় ১৩০০ সিঁড়ি পেরিয়ে পাহাড়ের উপরে চন্দ্রশেখর শিবের মন্দির গাড়ি করে পাঁচ কিমি পাহাড়ী বাঁকের রাস্তা ধরে মন্দিরে পৌঁছানো যায় কিন্তু কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য কপিলাশ মন্দির বন্ধ পায়ে হেঁটে ওঠার সিঁড়ির মুখ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ আর গাড়ির যাওয়ার রাস্তাও বাঁশ দিয়ে বন্ধ কপিলাশ চন্দ্রশেখর শিবতীর্থ এযাত্রায় দর্শন হল না



ঢেঁকানল
 রাজবাড়ী

তখন বিকেল হয়ে গেছে আমাদের বুকিং কপিলাশের সেরা হোটেল নিরুপমা হোটেলে এটা আগে ওড়িশা ট্যুরিজমের পান্থনিবাস ছিলো, বর্তমানে ব্যক্তিগত মালিকানায় নিরুপমা গ্রুপস অফ হোটেলের অধীনে পরিচালনা হয় বিকেল বেলায় নিরুপমা হোটেলে ঢুকে মনটা ভরে গেলো খুবই ভালো বিলাসবহুল হোটেল উপরের ছাদটা দারুন সন্ধ্যাবেলায় টিমের সবাই মজলিশ বসায় হোটেলের ছাদে রাতে ডিনার শেষ করে ঘুমের দেশে

দ্বিতীয়দিন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট সম্পন্ন করে হোটেলের গাড়িতেই আমাদের গন্তব্য সাতকোশিয়া বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট পথে দেখে নিলাম গতকালের না দেখা ঢেঁকানল রাজবাড়ী রাজবাড়ীর ভিতরে মিউজিয়াম এখন কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ হলেও রাজবাড়ীর বাইরে টা ঘুরে দেখলাম কপিলাশ পর্ব এখানেই শেষ এরপর ট্রিপের দ্বিতীয় অধ্যায় সাতকোশিয়া

দুপুর দুটো নাগাদ আমরা সাতকোশিয়া বাডমূল স্যান্ড রিসোর্টে পৌঁছায় ওড়িশা ইকো ট্যুরের মাধ্যমে বুকিং ছিলো ফুল দিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা করা হয় ভিতরে ঢুকে জাস্ট মুগ্ধ হয়ে গেলাম মনে হল স্বর্গে পৌঁছে গেলাম মহানদীর ধারে বালির চড়া তার উপর সুইস টেন্ট নদীর ধারে বালির উপর মরুভূমিতে টেন্টে থাকার মতো অভিজ্ঞতা সুইস টেন্টে চেক ইন করেই আগে লাঞ্চ টা সেরে নিলাম মাছের পদ দিয়ে লাঞ্চ বুফে সিস্টেম ডাইনিং এরিয়া টাও দারুন বালির উপর কটেজ করে স্যান্ড রিসোর্টে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা আছে খেলার জন্য তীরন্দাজি, বিচ ভলিবল, স্লাইকিং, ঝুলন্ত ব্রিজে ক্যানোপি ওয়ার্ক, রিডিং লাইব্রেরী সবই আছে আমরা ছয়জন লাঞ্চ সেরেই বেরিয়ে পড়লাম মহানদীর বালি চড়া পেরিয়ে একদম নদীর বুকে রাকেশ ঢুকে গেলো জঙ্গলে পাখির খোঁজে আমরা ফটো শ্যুটিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ছবি তুলতে তুলতেই সূর্যাস্তের সময় হয়ে গেলো আর সাতকোশিয়া মানেই অপরূপ সূর্যাস্ত মহানদীর বুকে দুই পাহাড়ের মাঝে গর্জের মধ্যে সূর্যাস্ত দর্শন জীবনের স্মৃতিখাতায় বহুদিন মনে থাকবে বাডমূল স্যান্ড রিসোর্টে আমরা সূর্যাস্ত দর্শন করে ক্যাম্পে ফিরে আসি ক্যাম্পে সন্ধ্যাবেলায় আদিবাসী নাচ এবং চা স্যাক্সস সাথে বনফায়ারের ব্যবস্থা ছিলো তারপর রাতের খাওয়া মুরগির ঝোল রাত টা ছিলো স্বপ্নের মতো ক্যাম্পফায়ার, গল্প, গান , আলো আধারী পরিবেশে সত্যি স্বপ্নের মতো ছিলো

তৃতীয়দিন ২৫ শে জানুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়লাম সাইকেল নিয়ে গ্রাম ঘুরতে তারপর ফিরে এসে আবার মহানদীর ধারে অপূর্ব সেই অভিজ্ঞতা এরপর ব্রেকফাস্ট সেরে আমারা রিসোর্ট থেকে উইঙ্গার গাড়ি নিয়ে চেক আউট করে প্রথমে ইকো ভিলেজ গ্রাম দর্শন করে মহানদীর ধারে বোটিং পয়েন্টে চলে যায় একটা স্পিড বোট ভাড়া করে ঘন্টাখানেক মহানদীর বুকে নৌবিহার তীরে রৌদ্দুর তাপ নেওয়ার জন্য কুমিরের দল শুয়ে থাকে আমরা গোটা পাঁচেক কুমির, একঝাঁক কচ্ছপ, বিভিন্ন পাখি দেখতে পায় কিন্তু আসল যেটা দর্শন পায় সেটা হল হর্নবিল মহানদীর বুক থেকে জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ১৫/১৬ টা হর্নবিলের দল আমাদের নজরে পড়ে যেটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো স্পিড বোটে পুরো সাফারিটা ছিলো অসম্ভব সুন্দর

 এরপর উইঙ্গার গাড়িতে করে আমরা সাতকোশিয়া জঙ্গল সাফারি করি ঘন্টাদুয়েক পূর্ণাপানী ঝর্ণা দর্শন করি অনেকটা খরস্রোতা নদীর মতো খুবই সুন্দর দেখতে দেখতে বেলা প্রায় তিনটে হয়ে যায় এবার ফেরার পালা ফেরার পথে লাঞ্চ সেরে আমাদের গন্তব্য এবার ভুবনেশ্বর রাতে ভুবনেশ্বর স্টেশনে পৌঁছে জগন্নাথ এক্সপ্রেস ধরে পরের দিন সকালে পৌঁছে গেলাম বাড়ির ঠিকানায়, আবার সেই রোজকার রুটিন জীবনে মনের স্মৃতিকোঠায় ধরে রাখলাম তিনদিনের কপিলাশ সাতকোশিয়া ভ্রমণ।

 

■■■ কিভাবে যাবেন সাতকোশিয়া:

 

ট্রেনে সাতকোশিয়া যাওয়ার সবচেয়ে কাছের স্টেশন ওড়িশার আঙ্গুল । কিন্তু হাওড়া থেকে আঙ্গুলের সরাসরি ট্রেন মাত্র একদিন শনিবার (ফিরতি ট্রেন শুক্রবার) । তাই শনিবার রাতে সাতকোশিয়া গেলে সম্বলপুর এক্সপ্রেসে সরাসরি আঙ্গুল পৌঁছানো যায়। সপ্তাহে অন্যদিন আঙ্গুল হয়ে সাতকোশিয়া যেতে চায়লে হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বর গিয়ে ভুবনেশ্বর রাউরকেল্লা রুটের ট্রেনে আঙ্গুল স্টেশনে নামা যায় ।

আঙ্গুল স্টেশন থেকে সাতকোশিয়া এন্ট্রি গেট পম্পাসার (টিকরপাড়া, ছোটকৈ, পূর্ণাকোট ইত্যাদির জন্য) দূরত্ব ৩০ কিমি। তারপর আরো ৩০ কিমি পথ পেরিয়ে নেচার ক্যাম্প ।

অন্যদিকে ভুবনেশ্বর স্টেশন থেকে সাতকোশিয়া (বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট) ১২০ কিমি । অনেকে ভুবনেশ্বর থেকে গাড়ি করে বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট আসেন।

তবে আঙ্গুল স্টেশনে দুইদিন বা তিনদিনের জন্য আঙ্গুল স্টেশন টু আঙ্গুল স্টেশন গাড়ি পাওয়া যায় । ভুবনেশ্বরের গাড়ির ড্রাইভার দের সাতকোশিয়া সম্বন্ধে ধারণা কম তুলনামূলক ভাবে । তাই আঙ্গুল দিয়েই সাতকোশিয়া আশা সুবিধাজনক ।

  বাসে প্রতিদিন রাতে বাবুঘাট থেকে আঙ্গুল যাওয়ার এসি ভলভো বাস সার্ভিস আছে। দশঘন্টার জার্নিতে আঙ্গুল পৌঁছে যাওয়া যায়।

■■■ সাতকোশিয়ায় থাকার ঠিকানা:

 সাতকোশিয়ায় থাকার জন্য ওড়িশা বনদপ্তর (ইকো ট্যুর ওড়িশা) থেকে অনেক জায়গায় এডভেঞ্চার ক্যাম্প তৈরি করেছে স্থানীয় মানুষজন দের সহায়তায় । এরমধ্যে টিকরপাড়া, ছোটকৈ, পূর্ণাকোট, বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট, তারাভা, বাঘমুন্ডা নামকরা ।

টিকরপাড়া, ছোটকৈ, পূর্ণাকোট একদিকে কাছাকাছি, বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট মহানদীর অন্যপাড়ে। নদীর এপার ওপার থেকে দেখা গেলেও, গাড়ী নিয়ে এক ক্যাম্প থেকে বাডমূল যেতে গেলে ফরেস্ট পেরিয়ে অন্যদিক দিয়ে যেতে হয়। বাডমূলটা তাই একপ্রান্তে আলাদা বলা যায়।

 টিকরপাড়া মহানদীর ধারে ক্যাম্প রিসোর্ট।

 বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট মহানদীর অন্য পাড়ে।

 ছোটকৈ অনেকটাই ফরেস্টের মধ্যে, প্রাকৃতিক জঙ্গল, পাহাড় বেষ্টিত। পূর্ণাকোটও জঙ্গলের মধ্যে ।

নদীর ধারে থাকতে চাইলে টিকরপাড়া কিম্বা বাডমূল সেরা ঠিকানা। জঙ্গলের আমেজ চাইলে ছোটকৈ কিম্বা পূর্ণাকোট।

তারাভা এবং বাঘমুন্ডা একটু ভিতরে অবস্থিত বলে পর্যটনস্টল হিসেবে কম জনপ্রিয়।

এসি, ননএসি সুইস টেন্ট, কটেজ সবরকম ব্যবস্থাপনায় আছে। তবে শীতকাল সাতকোশিয়া ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় বলে ননএসি টেন্টই ভালো, বিশেষ করে বাডমূল স্যান্ড রিসোর্টে ।

বুকিংয়ের জন্য ওড়িশা বনদপ্তর (ইকো ট্যুর ওড়িশা) ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে বুকিং করতে হয়। ননএসি সুইস টেন্টের ভাড়া সাথে সারাদিনের চারবেলার খাওয়া নিয়ে দুজনের জন্য জিএসটি নিয়ে প্রায় ৪,০০০ টাকা পড়ে। এরমধ্যেই সন্ধ্যায় ক্যাম্পফায়ার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কিম্বা বিভিন্ন স্পোর্টস এক্টিভিটি ইত্যাদির দাম ধরা থাকে। (জানুয়ারি, ২০২২)

অতিরিক্ত ব্যক্তি থাকলে তার খরচ এন্ট্রি গেটে অনস্পট নেওয়া হয়। টিম লিডার একসাথে ছয়জনের বুকিং করতে পারবে। আধার কার্ড অত্যাবশ্যক ।

 

◆◆◆ বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট:

 বালুকাতটের উপর ওড়িশা বনদপ্তরের নেচার ক্যাম্প হলো বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট। আক্ষরিক অর্থেই ওড়িশার স্বর্গ বলা যায়। এন্ট্রি গেট থেকে পাঁচ কিমি এগোলে বাডমুল গ্রামে এই রিসোর্টে পৌঁছোতে হয়। ঢুকলেই স্থানীয় গ্রামবাসী যাঁরা রিসোর্টের স্টাফ তাঁরা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা করবেন। চেকিং পর্বের পর যখন বালুকারাশির উপর সুইস টেন্টে পৌঁছাবেন মন ভরে যাবে। এসি সুইট টেন্ট কিম্বা কটেজ গুলো উপরে, ননএসি সুইট সটেন্ট গুলো বালির উপরে। খাওয়ার জায়গা, ক্যাম্পফায়ারের জায়গা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জায়গা সবটায় বালির উপর ননএসি টেন্ট গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। তাই এসি টেন্ট/কটেজে থাকলে বারবার নিচে আসতে হবে। শীতকাল বলে এক্ষেত্রে ননএসি সুইস টেন্ট নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। খাওয়ার ব্যবস্থা বুফে সিস্টেম।

বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি আছে এখানে। যেমন বিচ ভলিবল, তীরন্দাজী, সাইকেলিং, কানোপি ওয়াক ইত্যাদি। একটা লাইব্রেরী রুমও আছে। ড্রাইভারদের থাকার পৃথক রুম আছে।

মহানদীর ধারে স্নান করার জন্য জাল দিয়ে ঘেরা আলাদা ঘাট তৈরি করা আছে, যাতে কুমীর না আসতে পারে স্নানের সময়। টেন্টের পাশেই মহানদীর ধারেরই অপূর্ব সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাডমূল স্যান্ড রিসোর্ট আদর্শ জায়গা ।

 বোটিং: বাডমূল নেচার ক্যাম্প থেকে ২ কিমি গেলে ইকো ভিলেজ গ্রাম । ৬/৭ কিমি দূরে মহানদীতে বোটিং করার পয়েন্ট। অনেক গুলো বেসরকারী বোটিং পয়েন্ট গড়ে উঠেছে। পুরো স্পিড বোট ৭৫০/- আধঘন্টায়, এক ঘন্টায় ১৫০০/- । মাথাপিছু ১৫০/- । মহানদীতে বোটিং করলে মহানদীর তীরে রোদ্দুরের তাপ নেওয়া অবস্থায় প্রচুর কুমির, ঘড়িয়াল দেখা যায় । এছাড়া কচ্ছপ প্রচুর দেখা যায় । বিভিন্ন পাখি রিভারটার্ন, হর্নবিলের দর্শন পাওয়া যায় ।

 জঙ্গল সাফারি: বাডমুল স্যান্ড রিসোর্ট থেকে গাড়িতে দুঘন্টার একটা কোর এরিয়া জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা আছে । বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া টা অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার । কিন্তু এই সাফারির সময় দেখে নেওয়া যায় ফরেস্টের মধ্যে পূর্ণাপানি নদী তথা ঝর্ণা । পাহাড়ি পথে পূর্ণাপানি নদী অপূর্বভাবে বয়ে গিয়েছে । বর্ষাকালে এর জল অনেক বেশী থাকে, শীতকালেও জলের পরিমান কম কিছু না ।

◆◆◆ টিকরপাড়া/ছোটকৈ/পূর্ণাকোট নেচার ক্যাম্প:

আঙ্গুল থেকে ৩০ কিমি দূরে পম্পাসার এন্ট্রি গেট দিয়ে প্রবেশ করে সাতকোশিয়ায় প্রায় কাছাকাছি তিনটে নেচার ক্যাম্প - মহানদীর ধারে টিকরপাড়া, টিকরপাড়া থেকে দশকিমি দূরে জঙ্গল পাহাড় বেষ্টিত পূর্ণাকোট বাংলো এবং তারপর ছোটকৈ নেচার ক্যাম্প। এই তিনটি ক্যাম্প কাছাকাছি। একটিতে থাকলে বাকীগুলোও গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখা যায়। নদী বা জঙ্গল যেমন ইচ্ছে সেইরকম পরিবেশে থাকা যায় ।

টিকরপাড়া, ছোটকৈ বা পূর্ণাকোট থেকে দেখে নেওয়া যায় নন্দিনী নালা । অল্প একটু জঙ্গলের পথে ট্রেক করে পাহাড়ি নদী নন্দিনী অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা সৃষ্টি করেছে। অনেকটাই বাডমূলের পূর্ণাপানী নদীর মতোয় নন্দিনী নালা।

এছাড়া গোইন্ডি বলে সাতকোশিয়া গর্জে (দুটো পাহাড় মহানদীর বুকে গর্জ সৃষ্টি করেছে) সূর্যাস্ত দর্শন সাতকোশিয়া ভ্রমণের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। বাডমূলে স্যান্ড রিসোর্টের পাশেই সূর্যাস্ত দেখা যায়। টিকরপাড়া/ছোটকৈ/পূর্ণাকোট-এ থাকলে গাড়ি করে গোইন্ডি নামক জায়গায় গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে হয় ।

টিকরপাড়াতেও বোটিং সেন্টার আছে। মহানদীর বুকে স্পিডবোটে বোটিং করা যায়। বাডমূলের মতোয় প্রচুর কুমীর, কচ্ছপ, পাখির দর্শন মেলে। এছাড়া টিকরপাড়ায় একটা মিনি জু আছে, যেখানে ঘড়িয়ালদের পালন করা হয়।

 

◆◆◆ সাতকোশিয়া ভ্রমণ শেষ করে ফেরার সময় আঙ্গুল এবং আঙ্গুলের পড়ের স্টেশন তালচেরে দেখে নেওয়া যায়:

১) আঙ্গুল জগন্নাথ মন্দির

২) আঙ্গুলে দারজং ড্যাম,

৩) তালচের রাজবাড়ী

৪) তালচেরে ব্রাহ্মণী নদীর ধারে অপরূপ সূর্যাস্ত

৫) তালচেরে ব্রাহ্মণী নদীর ধারে অনন্তশয্যায় বিষ্ণুর পাথরের শায়িত মূর্তি।

 

■■■ সাতকোশিয়া ভ্রমণের আদর্শ সময়:

শীতকাল হলো সাতকোশিয়া ভ্রমণের আদর্শ সময় । মোটামুটি দুর্গাপুজোর পর থেকেই সাতকোশিয়া পর্যটন শুরু হয়ে যায় এবং দোল পর্যন্ত চালু থাকে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি হলো সাতকোশিয়া ভ্রমণের আদর্শ সময় ।

 

◆◆◆ যোগাযোগ:

ওড়িশা বনদপ্তরের ওয়েবসাইট ইকো ট্যুর ওড়িশার মাধ্যমে অনলাইনে বুকিং করতে হয়।

 বাডমূল স্যান্ড রিসোর্টের ম্যানেজারের নাম্বার: ৮৯১৭৫৩৮৮৩৩ ।

 বাডমূল স্যান্ড রিসোর্টের গাড়ি (উইঙ্গার) ড্রাইভার সন্তোষ কুমার বেহারা ৮২৪৯৯৬২৮১২ ।

সাতকোশিয়া ভ্রমন

Post a Comment

Previous Post Next Post