ক্রীড়াক্ষেত্রের শিখণ্ডীরা
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
সদ্য বিশ্বের শ্রেষ্ঠ
ও বৃহত্তম ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হল প্যারিসে। এবারের প্যারিস অলিম্পিক সম্ভবত
ক্রীড়া-বিতর্কে বিশিষ্ট হিসাবে চিরস্মরণীয় থাকবে। পুরুষদের হকিতে ভারতের বিরুদ্ধে হওয়া
আম্পায়ারিং থেকে অনেককিছু নিয়েই বিস্তর প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। কিন্তু আলজেরিয়ার
বক্সার ইমানে খেলিফকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক সবকটির বিতর্কের মধ্যে বিশিষ্টতম। হচ্ছে,
কারণ তাকে পুরুষ বা অনারী হিসাবে শনাক্ত করে তার কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিদ্বন্দী
ইতালির অ্যাঞ্জেলা ক্যারিনি ৪৬ সেকেন্ড পর এক রাউন্ডের পর খেলতে অস্বীকার করে রিং
ছাড়েন।
এখন খেলিফকে তার
মা-বাবা কন্যা জেনেই বড়ো করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি মুসলিম প্রধান দেশে খেলিফকে
মেয়েদের জন্য নির্ধারিত কিছু বিধিনিষেধের মধ্যেও কাটাতে হয়েছে। তার বাবা মেয়েদের
খেলাধূলোর বিপক্ষে বলে খেলিফের ছোটোবেলায় ফুটবল খেলা ও পরে বক্সিং শেখারও বিপক্ষে
ছিলেন।
কিন্তু কয়েকটি সূত্রমতে খেলিফ জন্ম থেকেই উভলিঙ্গ।
তার দেহে X ও Y দুটি ক্রোমোজ়োমই আছে,
কিন্তু পুরুষ অঙ্গ বিকশিত হয়নি। এদের বলা হয় DSD (Difference of Sexual
Development)। এখন তাই হয়ে থাকলে তাতে তার নিজের কোনও দোষ নেই। জন্মগত তৃতীয়
লিঙ্গ। পুরুষের প্রতি সমকামী আকর্ষণবশত ট্রান্স উওম্যান হওয়া যায়, লিঙ্গান্তরিত
না হয়েও নারীবেশ ধারণ করে হাততালি বাজিয়ে ব্যবসা যায়, কিন্তু নিজের জিন ও
ক্রোমোজ়োমের সংগঠন বদলানো যায় না। কেউ
কেউ XXY হয়। কেউ কেউ বা প্রায় নারী হলেও তাদের স্ত্রীঅঙ্গের বিকাশ হয় না।
তবে খেলিফ সত্যিই ডিএসডি কিনা তার সপক্ষে কোনও
নিশ্চিত প্রমাণ নেই। ইন্টারন্যাশনাল
বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (
কিন্তু তাই বলে কি DSD দের নারী বলে দাগানো
উচিত? কখনোই না। তারা নারী বা পুরুষ কোনওটাই নয়। অসম্পূর্ণ নারী হলে তবু নারীর
দলভুক্ত হতে পারে। কিন্তু অবিকশিত পুরুষরাও কেন সচরাচর নিজেদের নারী বলে পরিচয়
দেয়? কারণ সেটাই সুবিধাজনক। শারীরিক শক্তিতে পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা
কঠিন, মেয়েদের সঙ্গে সহজ। তাছাড়া কামসূত্র সাক্ষী, প্রাচীনকাল থেকেই তৃতীয়
লিঙ্গের মানুষদের প্রধান পেশা হল পুরুষানুরঞ্জনে দেহব্যবসা। নারীরূপীদের তো বাধ্য
করা হতোই, পুরুষরূপী তৃতীয় প্রকৃতির মানুষও পুরুষদেরই সেবা করত। এদের সঙ্গে মিশে
ছিল সমকামী পুরুষরাও যারা শারীরিক ও জেনেটিক ভাবে পরিপূর্ণ পুরুষ হয়েও নারীর
ভূমিকায় নেমে পুরুষ ভজনাকেই জীবনের মোক্ষ ধরে নিত। আর মেয়েরা তো আসল টার্গেট।
যেসব হতভাগিনীকে জনতার ভোগ্যপণ্য করার বেছে নেওয়া হত, তাদের প্রায়শ ধরেবেঁধে কচি
বয়স থেকেই গণিকাবৃত্তিতে ট্রেইনিং দেওয়া হত। এখনও সেই ট্রাডিশন বহমান। সেটা কেমন
খাজুরাহের ভাস্কর্যে তার অনেকটাই বিধৃত। সেই নারী অবমাননাকর কদর্য বিকৃতির বিশদে
নাই বা গেলাম। তার তুলনায় ক্রীড়াক্ষেত্রে বা সম্মানজনক পেশায় থাকা অনেক
কাঙ্ক্ষিত ব্যাপার। কিন্তু তাদের জন্য পৃথক ক্যাটিগোরির প্রতিযোগিতা হোক, মেয়েদের
মধ্যে কেন?
কথা হচ্ছিল ইমানে খেলিফ নামক বক্সারের। সে যে
নারী নয় এবং নারী হিসাবে তার প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্তি আপত্তিকর বা অন্তত
প্রশ্নবোধক, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাকে সুযোগসন্ধানী trans woman বলাটাও
ভীষণ অনুচিত। যারা বলছেন বা উত্তেজিত হয়ে খেলিফের মুণ্ডপাত করেছেন, তাঁরা না জেনে
করছেন। আমিও প্রথমে তাই করেছি। এই প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক, যদি শুনি একজন পুরুষ
নারী রূপে প্রতিযোগিতায় নেমে নারী প্রতিদ্বন্দীর নাক মেরে ফাটিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু খেলিফ যে ঠিক সে অর্থে সুযোগসন্ধানী নয়, তা প্রথমেই জানিয়েছি। কিন্তু
এরকম সুযোগ সন্ধানের বেশকিছু নজির ক্রীড়াক্ষেত্রে আছে, ইমানের ঘটনা যেগুলো নিয়ে
নতুন করে ভাবার অবকাশ করে দিল।
প্রসঙ্গত এ কথা নতুন
করে প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না একজন নারী তার সমতুল্য পেশা বা ক্ষেত্রের পুরুষের
তুলনায় শারীরিক বলে অনেকগুণ পিছিয়ে। যেদিন স্টিফান এডবার্গ বলেছিলেন, পুরুষদের ২০০
তম র্যাংকিং-এর টেনিস খেলোয়াড়ও মেয়েদের এক নম্বরকে সহজে হারিয়ে দিতে পারে, তখন
খুব রাগ হয়েছিল। কিন্তু মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা ও জিমি কর্নাসের ঐতিহাসিক খেলা দেখে
মন্তব্যটা খানিকটা হজম করতে হয়েছিল। জিমিকে একটি মাত্র সার্ভিস সহ কিছু বিধিতে
বেঁধে ও মার্টিনাকে বিপক্ষের কোর্টে ডাবলস্এর সীমা পর্যন্ত ব্যবহারের স্বাধীনতা দিয়েও
ফলাফল গিয়েছিল জিমির পক্ষে। প্রমাণ হয়েছিল পুরুষের ও নারীর দৈহিক বল বো বলজনিত
দক্ষতায় আকাশ-পাতাল প্রভেদের প্রাকৃতিক সত্যতা। সৃষ্টিকর্মে স্ত্রী-প্রজাতি অনেক
বেশি দায়িত্ব বহন করলেও, পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি অপরিহার্য হলেও শারীরিক সক্ষমতার
দিক দিয়ে তার অসহায়তার কথা নতুন করে প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। তাই দাবা বা খুব
বেশি হলে ক্যারামের মতো খেলাতে নারী-পুরুষ নির্বিবাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে
পারলেও অন্যান্য পেশিশক্তিনির্ভর খেলায় কোনওভাবেই সম্ভব নয়; বিশেষ করে
বডি-কনট্যাক্ট গেম তাও আবার বক্সিং বা কুস্তির মতো মারামারি খেলায় এমন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো অপরাধের শামিল।
কিন্তু কৌশলে সেটাই হচ্ছে পরোক্ষভাবে। বিগত
কয়েক দশক ধরে দেখা যাচ্ছে Gender Reassignment শুধু Gender Dysphoria দূর করতে বা
পছন্দমতো যৌনজীবন বাছার অধিকার দিতেই করা হচ্ছে না; হচ্ছে নানা খামখেয়াল মেটাতে ও
অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্যও। ক্রীড়াজগতের অনেক অসফল পুরুষ ক্রিড়াবিদ ইতিমধ্যেই
‘লিঙ্গ-পুনর্বিন্যাস’ ঘটিয়ে নারী ক্রিড়াবিদ হিসাবে অংশগ্রহণের অধিকার চাইছে এবং
পেয়েও যাচ্ছে। বলা বাহুল্য সারাজীবন নারী শরীরের নানাবিধ বিড়ম্বনাভোগ ছাড়া এবং
পুরুষ হিসাবে অতিরিক্ত শারীরিক ক্ষমতা ও সামাজিক সুবিধা ভোগ করার পর পুরুষদের
ট্রান্স-মহিলা হয়ে মহিলা ক্রীড়াবিদ রূপে নথিভুক্তি বিশেষ সুবিধা করে দিয়েছে।
পুরুষদের চেয়ে কম হিমোগ্লোবিন, ১৫ গুণ কম টেস্টোস্টেরন এবং অস্থিপেশি সংগঠনে অনেক
কম আয়তন ঘনত্ব ও শক্তি নিয়ে ঋতুর উৎপাতে জর্জরিত থেকে প্রকৃত মেয়েরা শারীরিক
সক্ষমতায় এমনিতেই পিছিয়ে থাকে। তবু ১৯৭৫ সালেই পুরুষ হিসাবে পরিপূর্ণ অস্থিকাঠামো
তথা দৈহিক বিকাশের পরেও লিঙ্গান্তরিত এক ব্যক্তির মেয়েদের দলগত খেলায় অভিষেক হওয়ার
নজির আছে। পরে টেনিস খেলোয়াড় রেনি রিকার্ড লিঙ্গান্তরিত হয়ে মেয়েদের সার্কিটে
ঢোকে।
আশ্বর্যজনকভাবে এই নিয়ে তেমন শোরগোল পড়েনি।
অথচ মেয়েদের ডোপ টেস্টে আটকানো হয়। কালো মেয়েদের দেহে স্বাভাবিক ভাবেই অন্য
মেয়েদের তুলনায় টেস্টোস্টেরন বেশি বলে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে বেশি। কিন্তু
রূপান্তরকামী পুরুষরা ট্রান্স জেন্ডার অ্যাকটিভিজ়মের সুযোগে ইচ্ছামতো নিজেদের
নারী বলে চালানোর সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আবার দেশ-কাল ভেদে পিংকি প্রামাণিক,
ইবেমুংশি দেবীদের নিয়ে বিতর্ক হলেও পশ্চিমী ছদ্মনারীদের জন্য মানবতা ও ছাড়ের বন্যা
বয়ে যায়। উদারতার স্রোতে ২০০৩ সালে কানাডার পুরুষ ফুটবোলার ঢুকে পড়ে নারী ফুটবল
দলে। ২০২০-র টোকিও অলিম্পিকে ভারোত্তলক লরেল হাভার্ড (Laurel Hubbard) প্রথম নারী
না হয়েও ট্রান্স-উওম্যান হওয়ার সৌজন্যে মেয়েদের বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে
ভার তুলতে না পারায় ও ফলত কোনও পদক না জেতায় বিতর্ক হয়নি। এরকম উদাহরণের অভাব নেই।
কিন্তু যে ঘটনায় স্তম্ভিত হতে হল সেটি হল, এক পুরুষ সাঁতারুর লিঙ্গ-পরিচয় পাল্টে
মেয়েদের সাঁতারে বিশেষ পক্ষপাতিত্ব লাভ।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে LGBT ছাপিয়ে
যখন যার যা ইচ্ছা বিচিত্র থেকে বিচিত্রতর লিঙ্গ-পরিচয় অনুমোদন করা হয়, যার ফলে
মানুষ নিজেকে চাইলে অমানুষ, ভিনগ্রহী প্রাণী বলেও দাবি করতে পারে। ওদেশের আইন
অনুযায়ী যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার না করিয়ে শুধুমাত্র হরমোন থেরাপি দ্বারা
টেস্টোস্টেরন মাত্রা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলেই একজন পুরুষ নিজেকে
ট্রান্স নারী হিসাবে দাবি করতে পারে। এই সুযোগটাই নিয়েছে টেক্সাসের পুরুষ সাঁতারু
লিয়া থমাস, যার আসল নাম কোনও ওয়েবসাইটেই খুঁজে পাইনি, Wikipedia তেও নয়।
আদ্যন্ত পুরুষালি দেহের এই পুরুষটি একটি
মেয়েদের ইভেন্টে রাইলি গেইনস নামের এক মহিলা সাঁতারুর সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রথম হয়।
কিন্তু রাইলিকে বঞ্চিত করে শুধু থমাসকেই প্রথম করা হয় ট্রান্স জেন্ডারদের প্রতি
মানবতার বার্তা দিতে! মেয়েরা এই অন্যায় অন্তর্ভুক্তি ও অন্যায় পক্ষপাতিত্ব নিয়ে
অসন্তুষ্ট হলেও ততটা সরব হয়নি। কিন্তু শৌচালয়ে ও ড্রেসিং রুমে একজন পুরুষের
উপস্থিতি ও পোশাক পরিবর্তনে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়ে। কিন্তু সেই অস্বস্তি অভিযোগ
আকারে প্রকাশ করায় আমেরিকার National Collegiate Athletic Association (NCAA)
'রিগ্রেসিভ' চিন্তার অভিযোগে মহিলা সাঁতারুদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়। এর জেরে
ঠিকঠাক নারী হওয়ার অপরাধে নারীদের প্রতিযোগিতায় বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার রাইলি
গেইনস খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। আর ওদিকে NCAA অন্যান্য পুরুষদের জন্যও পরিচয়ে
ভাঁড়িয়ে মেয়েদের প্রতিযোগিতায় নামার দরজা খুলে দেয়।
লিয়া স্ত্রী হরমোন প্রোজেস্টেরন নিয়ে শরীরে
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম করে রাখে যেটা প্রতিযোগিতার কিছুদিন আগে ডোপ টেস্টে
উতরোনোর জন্য বন্ধ করতে হয়। তখন তার শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ধারিত সীমার
মধ্যে থাকে কিনা, সেই প্রশ্ন তোলার সাহস প্রকৃত নারী প্রতিযোগিনীদের দেখানোর উপায়
নেই। ভাগ্যক্রমে ২০২২-এ প্রবল বিতর্কের পর লিয়াকে অলিম্পিক কমিটি নিষিদ্ধ করায়
২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিকে মহিলাদের সাঁতারে একই প্রহসন অভিনীত হতে হতেও হল না।
কিন্তু নিখি হিলট্জ় (Nikhi Hiltz) নামের এক নারী পরিচয়প্রাপ্ত পুরুষ মিডল
ডিসটেন্স রানার ২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে লৈঙ্গিকভাবে প্রান্তিক
LGBT-দের অধিকার রক্ষার প্রতিভূ বনে গেছে।খালেফ রহস্য উন্মোচনের পর সে সম্ভবত এখন
তার চেয়েও বড়ো তারকা।
বলা বাহুল্য ট্রান্স ম্যানরা যেহেতু নারীর
দুর্বল দৈহিক গঠন নিয়ে পুরুষে রূপান্তরিত হয়, তাই তারা এই ধরনের সুবিধা ভোগের
উদ্দেশ্যে ট্রানজ়িশন করে না। কিন্তু সারা জীবন নারীশরীর ধারণের প্রাকৃতিক কষ্ট,
শারীরিক দুর্বলতা ও সামাজিক বিধিনিষেধের বিড়ম্বনা ভোগ না করেই একজন যুবক যদি
লিঙ্গ পুনর্বিন্যাস করিয়ে খেলার জগতে নারী হিসাবে প্রতিযোগিতা করতে চায়, তখন
সেটাকে এককথায় সুযোগ সন্ধান বলে। আর যদি লিঙ্গ পরিবর্তন না ঘটিয়েই পুরুষরা নারীদের
সঙ্গে প্রতিযোগিতার অধিকার চায়, তাহলে তাকে সোজাসুজি গা জোয়ারি বলে, যার দ্বারা
ছদ্ম-নারী দ্বারা প্রকৃত নারীদের প্রতিস্থাপনের সুচতুর প্রক্রিয়া চলেছে। এভাবে
চললে ক্রীড়াজগতে প্রকৃত নারী ক্রিড়াবিদ দুর্লভ হয়ে যাবে।
নারী ও তৃতীয় লিঙ্গকে একাসনে বসানো এবং নারীবাদী আন্দোলনে এলজিবিটি মুভমেন্টের ভেজাল মেশানো আসলে মেয়েদের নিতান্ত সীমাবদ্ধ পরিসরটুকুও ছিনিয়ে নেওয়ার পুরুষবাদী চক্রান্ত। রক্ষণশীল পুরুষরা ধর্ম ও লোকাচারের দোহাই দিয়ে মেয়েদের দমিয়ে রাখে, আর তথাকথিত অতি উদারপন্থীরা নারী পুরুষের প্রাকৃতিক প্রভেদটাই গুলিয়ে দিয়ে প্রকৃত নারীদের প্রান্তিক করে দিতে চায়। এলজিবিটি একটা ব্যাপক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ শ্রেণী। এই সম্প্রদায়ভুক্তরা সিংহভাগ কোনও না কোনও ভাবে পুরুষের স্বার্থে ও সেবায় নিয়োজিত। তাই নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে এলজিবিটির সমীকরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বস্তুত আমেরিকান এই পুরুষ সাঁতারুর নারী পরিচয়ে প্রতিযোগিতায় নামাসহ অনেক ট্রান্স কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সে দেশের কিছু নারীবাদীই সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন।
তবে
ক্রীড়াক্ষেত্রে এই দ্বিচারিতার সঙ্গে ওদেশের সমাজ ও শিক্ষা ক্ষেত্রেরও বেশ সাযুজ্য।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদেরও যেখানে যৌনশিক্ষা দেওয়া হয়, ট্রান্স সেক্সুয়ালিটি বোঝানো হয়,
সেখানে মেয়েদের নিজেদের গর্ভপাত করানোর অধিকার নেই, যাতে তারা গর্ভধারণ এড়াতে শুধুমাত্র
পুরুষের তৃপ্তিবিধানে বাধ্য থাকে। কী চমৎকার লিঙ্গবিপ্লব!
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রূপান্তরিত পুরুষ
শিখণ্ডী সামনে এসেছিলেন ভীষ্মের মতো মহাযোদ্ধাকে পরাস্ত করতে। আজকের শিখণ্ডীরা দৈহিক
ভাবে নরম লক্ষ্য খুঁজে নিচ্ছে।
Picture link:
https://ukathletics.com/news/2022/07/14/riley-gaines-nominated-for-2022-ncaa-woman-of-the-year/