একান্ত আলাপচারিতায় ডোনা গাঙ্গুলী -- শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

 


সাক্ষাৎকার : ডোনা গাঙ্গুলী

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে ফোনটা করেই ফেললাম। ভেবেছিলাম সরাসরি চলভাষে ফোন করলে হয়তো প্রশ্ন আসবে, “নম্বর কোথায় পেলেন? কে দিল?” তাই চার-পাঁচ দিন ধরে যথেষ্ট ইতস্তত করছিলাম। মনে হচ্ছিল কেন রাজি হলাম। একে তো নিজের লেখার বিকট চাপ, লেখা নিয়ে মনে আরও চাপ, তার সাথে আছে সঙ্গের সাথী সর্বাঙ্গ জুড়ে নানা আধিব্যাধি। তার ওপর এই বয়সে আবার পাত্তা চেয়ে গোঁত্তা খাওয়ার ঝুঁকি নিই কেন? দু’বার ‘দাদাগিরি’তে গিয়ে ‘দাদা’কেই তো একবারও সৌরভের সঙ্গে গৌরব মিলিয়ে পদ্য শোনানোর চেষ্টা করিনি। প্রেস্টিজ বড় বালাই।

দেখলাম বার দুই রিং হতে না হতেই ওপার থেকে ভেসে এল, “হ্যালো”। উদ্দেশ্য জানালাম। ডোনা জানালেন, কয়েকদিনের মধ্যে বাইরে চলে যাচ্ছেন, ২৫শে এপ্রিল ফিরবেন। তাড়াহুড়ো না করে ফেরার পর যোগাযোগ করাই প্রশস্ত মনে হল। সাক্ষাৎকার মুখোমুখি না ফোনে নেব, এই বিষয়টাও অমীমাংসিত রইল। টিটাগড় থেকে বেহালা – দূরত্ব তো কম নয়, তাই ভাবছিলাম ফোনে কথা সারতে চাইলেও মন্দ কী।

২৫শে এপ্রিল অতিক্রম করতেই আবার চিন্তা – ফোন করব? সেবার ধরেছিলেন, এবার যদি না ধরেন? ঠিক তাই। ফোন বেজে বেজে স্তব্ধ হয়ে গেল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই রিং ব্যাক। চলভাষে অসুবিধা হবে কিনা জানতে চাওয়ায় বলেছিলাম, “যেটা আপনি চান। আপনি বাড়ি যেতে না করলে আমার পক্ষে ইনসিস্ট করা খুব এমব্যারেসিং। আপনার সুবিধাজনক সময়ে ফোনেই না্য়…”

“না না, আসতে না করছি না। আপনি বুধবার একবার ফোন করে বৃহস্পতিবার চলে আসুন। কতক্ষণ লাগবে?”

“আধ ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা আনুমানিক।”

“ঠিক আছে, সকাল এগারোটা থেকে বারোটা। একবার আগের দিন কনফার্ম করে নেবেন।”

বরকে অফিস কামাই করিয়ে নিয়ে চললাম আমার ক্যামেরাম্যান ও ওয়াচম্যান দুটো ভূমিকায় অবতীর্ণ করে। ‘মা মঙ্গলচণ্ডী ভবন’ লেখা প্রশস্ত ফটকে সময়ের আগেই পৌঁছে গিয়ে আবার ডোনাকে ফোন করতে হল সুরক্ষাকর্মীদের ছাড়পত্র পেতে। তৃতীয়বার ধরলেন। তারপর মালীকে অনুসরণ করে অতিথিকক্ষে। লক্ষ্য করলাম, আমাদের জন্য মিষ্টি শরবৎ আনার সময় ঘরের বাইরে দাঁড়ানো সুরক্ষাকর্মী মেয়েটিকেও সেসব দেওয়া হল। 

সাদা ধবধবে চুড়িদার কামিজের ওপর লাল ওড়না জড়িয়ে ডোনা ঘরে ঢুকেই বললেন, “আপনারা মিষ্টি খেয়ে নিন। নাহলে ও কিন্তু ছাড়বে না।”

‘ও’ মানে একটি তাগড়া সারমেয়। বকাঝকা দিয়ে তাকে শান্ত করে কার্পেটে বসানোর পর প্রাথমিক আলাপচারিতায় আমার রক্তে শর্করা আছে জেনে নিজে থেকেই যেভাবে পরামর্শ ও ডাক্তারের হদিশ পর্যন্ত দিবে দিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল পূর্বপরিচিত কোনও প্রতিবেশী। যেটুকু আড়ষ্টতা ছিল, তাও উবে গেল।

এরপর আরম্ভ হল আনুষ্ঠানিক প্রশ্নোত্তর পর্ব। কিছু প্রশ্ন লিখে নিয়েই গিয়েছিলাম। তবে বেশকিছু প্রশ্ন কথা প্রসঙ্গে উঠে এল, পেলাম তাদের তাৎক্ষণিক উত্তরও।  সাক্ষাৎকারের বদলে ঘণ্টাখানেকের আড্ডাও বলা যায়।

 



শ্রীপর্ণা: বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটারের জীবনসঙ্গিনী হওয়া ছাড়াও আপনার নিজের একটা পরিচয় আছে। আমি সেই নৃত্যশিল্পী ডোনার কাছেই কিছু প্রশ্ন রাখছি। নাচের শিক্ষা কোন বয়স থেকে নিচ্ছেন? সেটা কি নিজে শিখতে চেয়ে নাকি বাড়ির কারো আগ্রহে?

ডোনা: নাচ শেখাটা মা ছোটবেলায় দিয়েছিল। তখন আমার অত জ্ঞান ছিল না। অমলা শঙ্করের কাছে ক্রিয়েটিভ নাচ শিখতাম। ওখানেই কথক, ওড়িশী, কথাকলি এগুলোও শেখানো হত। একটু যখন বড় হলাম মা আরছান মহারাজের ছাত্র রাজেন বোসের কাছে কত্থক শেখানো শুরু করল। ইচ্ছা ছিল বিরজু মহারাজের কাছে কথক শিখব। কিন্তু যেটা ডেস্টিনি, ইউ নো। আই ওয়াজ় সাপোজ় টু বি আ ওড়িশী ডান্সার। তখন পদাতিকে বিরজু মহারাজের একটা ওয়ার্কশপ হবার কথা ছিল। তিনি কোনো কারণে আসতে পারেননি, কেলুচরণ মহাপাত্র এলেন। ওড়িশী তো কিছুটা শিখেইছিলাম। আর ওয়ার্কশপের জন্য সময় রেখেছিলাম। মা বলল, তাহলে ওড়িশীটাই করো। তারপর গুরুজীর বাড়ি যাওয়া, গুরুজী কলকাতায় এলে আমাদের বাড়িতে আসা। সেই আমার ওড়িশী শেখা শুরু, আর তারপর ওড়িশী ছাড়া আর কোনও কিছুর দিকে তাকাইনি।  

 

শ্রীপর্ণা: আপনি কিন্তু আমার তিনটে প্রশ্নের একসাথে উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল কেলুচরণ মহাপাত্র কি আপনার একমাত্র গুরু, নাকি আর কারো কাছে শিখেছেন? আর কারও কাছে শ কেলুচরণ মহাপাত্রের কথা তো জানতাম, আপনার কাছে অন্য নামগুলিও শুনলাম।

ডোনা: হ্যাঁ, উনিই আমার মেইন গুরু। তার আগে অফকোর্স অমলা শঙ্করের কাছে শিখতাম। ঐ খানে মুরলীধর মাঝি ওড়িশী শেখাত, তারপর উনি সরে গিয়ে গুরুজীর স্টুডেন্ট গিরিধারী নায়েক শেখানো শুরু করেন। ওনার কাছে শিখতে শিখতে গুরুজীর ওয়ার্কশপ করতে করতে পরে গুরুজীর ছাত্রী হয়ে যাই।

 

শ্রীপর্ণা: তার মানে ইউ আর ডায়রেক্ট ডিসাইপল ওফ গুরু কেলুচররণ মহাপাত্র?

ডোনা: হ্যাঁ। গিরিধারী নায়েক যিনি আমার গুরু ছিলেন, তিনি পরে আমার গুরুভাই হয়ে যান অ্যাজ আই শিফটেড টু গুরু কেলু মহাপাত্র।

 

শ্রীপর্ণা: থার্ড প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে গেছি। । ধ্রূপদী নৃত্যের মধ্যে আপনি কি শুধুই ওড়িশী শিখেছেন নাকি অন্য কোনও ধ্রূপদী নাচও শিখেছেন? মানে শুরু হয়েছিল অমলাশঙ্করের স্কুলে ক্রিয়েটিভ, কথক, কথকলি অল্প অল্প দিয়ে। তারপর পুরোপুরি ওড়িশী। আচ্ছা, সংযুক্তা পানিগ্রাহীর সঙ্গে কি কোনও যোগাযোগ…?

ডোনা: হ্যাঁ। আমাদের বাড়িতেই ... মানে আমি গুরুজীর বাড়িতে যেতাম, উনি আসতেন। আমার প্রতিটি সামার ভেকেশন আমাদের ভুবনেশ্বরে কাটত। ক্লাস সিক্স-সেভেন থেকে প্রায় প্রতিটি সামারে স্কুল বন্ধ হলে তখন গাড়ি নিয়ে ভুবনেশ্বর চলে যেতাম। তখন ভুবনেশ্বর অত ডেভেলপড ছিল না। ট্যাক্সি ইত্যাদি পাওয়া যেত না। গুরুজীর বাড়ি হোটেল সব কী করব? তাই নিজেদের গাড়িতে যেতে হত। এক মাস থাকতাম ওখানে। স্কুল খোলার ৫-৬ দিন আগে ফিরতাম। ওখানে নাচটা শিখতাম। আর এখানে কোনো প্রোগ্রাম হলে বা গুরুজী কোনও ওয়ার্কশপ নিলে আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। গুরুজীর অন্যান্য অনুষ্ঠান হলেও আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। আমার মা বাবা সবাই এই গানবাজনা এসবের ভেতরে ছিল। কুমকুম মোহান্তি বা সংযুক্তাদি যখন প্রোগ্রাম থাকত, রিহার্সাল আমাদের বাড়িতেই করত। অনেকেই তখন অন্য কোথাও না উঠে আমাদের বাড়িতেই থাকত। কারণ গুরুজীর টাইমিং অফ রিহার্সাল ভীষণ রাত্তিরে ছিল। যেমন হয়তো শুরুই করলেন রাত আটটা থেকে। চলত রাত বারোটা একটা অব্দি। তখন কে আর কোথায় যাবে? আমাদের বাড়িতেই থেকে যেত সবাই। তারপর গুরুজীর ঘর ছিল; গুরুজীর জিনিস থাকত। আরও একটা দুটো এক্সট্রা ঘর ছিল যেখানে অন্যান্যরা থাকত। সব মিউজ়িশিয়ানরা হয়তো হলেই থেকে গেল।

আমার সামহাও গুরুজীর বাজনাটা খুব ভালো লাগে। আই ফীল ভেরি কমফর্টেবল। আর গুরুজী সবকিছুর কেসেট দিয়ে দেন। আমরা এখন কেসেটেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আবার মিউজ়িশিয়ান ডাকো, প্র্যাকটিস করো, যদিও কিছু কিছু ফেস্টিভ্যাল আছে, যেমন কোনারক যেখানে দে ওয়ান্ট লাইভ মিউজ়িশিয়ান। সঙ্গে নাচ হয়, যেমন মুক্তেশ্বর ফেস্টিভ্যাল লাইভ মিউজিক। তখন আমাদের মিউজ়িশিয়ান দিতে হয়। এমনও হয়েছে, মাঝে মাঝে মিউজ়িশিয়ানদের  যখন সঙ্গে কথা বলি, হয়তো চিনিও না, প্রথমবার দেখছি, এখন অবশ্য অনেককে চিনে গেছি, কারণ এখন অনেক বছর নাচ করছি, কিন্তু কিছু বছর আগেও যখন ছোট ছিলাম বা বয়স কম ছিল, যখন বয়স কম ছিল, তখন হয়তো কোনো প্রোগ্রামে গেছি রিহার্সাল করছি, আমাকে কেউ বললেন, আমাকে চিনতে পারছ না, তোমাদের বাড়িতে গেছি থেকেছি খেয়ে এসেছি। সংযুক্তাদির প্রোগ্রাম করে এসেছি, কুমকুম মহান্তির সঙ্গেও গেছিলাম। এরকম একটা পরিবেশ আমার বাড়িতে ছিল।

 

শ্রীপর্ণা: আপনার বাড়িটা তো অ্যাডজাসেন্ট, কাছাকাছি?

ডোনা: (আঙুল দেখিয়ে) ও দিকে আমার বাপের বাড়ি, এদিকে শ্বশুরবাড়ি। একেবারে পাশাপাশি। বাপের শ্বশুরবাড়ির সেম অ্যাড্রেস। হলুদ রঙের বাড়িটা আমার বাপের বাড়ি।

 

শ্রীপর্ণা: এই নিয়ে পরে একটা মজার প্রশ্ন করব। এখন জানতে চাই, নাচ নিয়ে তো অনেকরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে ও হচ্ছে। তাই অনেকরকম ক্রিয়েটিভ ডান্স ফর্ম-ও আছে। আপনার নিজস্ব কোনও ঘরানা বা নৃত্যশৈলী আছে যাকে আপনার সৃজন বলা যায়? যেমন ধরুন উদয় শঙ্কর স্টাইল আছে। তেমন কিছু ডোনা গাঙ্গুলীর নামে দেখা যাবে?

 

ডোনা: না। আমি পিওর ওড়িশী করি। ইনিশিয়ালি কত্থক আর কথকলিতে সামান্য ট্রেইনড আছি, মানে একটা দুটো আইটেম শিখেছি। আর উদয়শঙ্করজী ইজ় আ জিনিয়াস। যেমন ভি বালসারাজী। দে আর ভেরি জিনিয়াস লেভেলের। একজনের একটা ইনস্ট্রুমেন্ট শিখতেই সারা জীবন কেটে যায়। উনি যারা একটা যন্ত্র বাজায় তাদের চেয়ে ভালো অজস্র ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে পারতেন। উদয়শঙ্করজীর যে কোন কত্থক শিল্পীর চেয়ে কত্থক ভালো গ্রিপে ছিল, একজন ভারতনাট্যম শিল্পীর চেয়ে ভারতনাট্যম ভালো পারতেন, একজন মণিপুরী ডান্সারের চেয়ে হয়তো মণিপুরী ভালো পারতেন। ওডিশী ইজ় সামহোয়াট নিউ ফর্ম অফ ডান্স। ইট হ্যাজ় কাম আপ উইথ গুরুজী অ্যান্ড সংযুক্তাদি।

 

শ্রীপর্ণা: মানে পরে রিভাইভ করা হয়েছে?

ডোনা: হ্যাঁ। আপনি যখন রবীন্দ্রনাথ দেখবেন, দেখবেন তাতে কথকলি মণিপুরী ভারতনাট্যম কুচিপুরী এসবের মেনশন আছে, ওড়িশী নেই। ওড়িশীর অত পাবলিসিটি ছিল না, মানে শেখানোর লোক ছিল না। কারণ এটাকে পপুলার করে ছড়িয়েইছে সংযুক্তাদি। অবভিয়াসলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংযুক্তা পানিগ্রাহীর চেয়ে অনেক অনেক আগেকার। কিন্তু আমার মনে হয়, যেহেতু এটা পাশাপাশি স্টেট, তাই ওড়িশী গোজ় ভেরি ওয়েল উইথ রবীন্দ্রসঙ্গীত, খুব ভালো ব্লেন্ড হয়, বিকজ় ওড়িশী ইজ় ভেরি গ্রেসফুল ডান্স।

 

শ্রীপর্ণা: ক্রিয়েটিভে তো ওড়িশীর অনেক প্রভাব আছে।

ডোনা: হ্যাঁ। বাট ক্রিয়েটিভ ইজ় সসামথিং দ্যাট ইউ ক্রিয়েট। সেটা তুমি যেই ভাবেই ক্রিয়েট করো। যে কোনও জায়গা থেকে স্টেপ নিয়ে এসে তুমি ক্রিয়েট করলে। ওনার (উদয়শঙ্কর) অনেক বেশি জ্ঞান ছিল দ্যান প্রপার ভারতনাট্যম ডান্সার, প্রপার মণিপুরী ডান্সার, প্রপার ওডিশী না ওডিশীটা বলব না, প্রপার কত্থক ডান্সার। দে আর অফ ভেরি ডিফারেন্ট ব্রীড, ওনারা যেভাবে ব্যাপারটাকে সাজিয়েছেন --। লোকেরা বলে আমি ক্রিয়েটিভ করব, কিন্তু প্রবলেমটা হচ্ছে, তোমার তো ওনার মতো জ্ঞান নেই। ইউ সী। মানে যেমন ফিউশন মিউজ়িক, যেমন সিলসিলার মিউজ়িক করেছেন হরি-শিব। হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া ও শিবকুমার শর্মা। তাঁদের জ্ঞান দিয়ে ঐ মিউজ়িক কম্পোজ় করা মানে ইট গিভস আ ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেল টু ইট। সো উদয়শঙ্করজী ইজ় আ ডিফারেন্ট লীগ অলটুগেদার যার সঙ্গে অন্য কারো কম্পেয়ার করা যায় না।

 

শ্রীপর্ণা: আবার মঞ্জুশ্রী চাকি সরকার, তাঁরও একটা নিজস্ব স্টাইল রয়েছে।

ডোনা: হ্যাঁ, এইবার নিজেরা নিজেরা কোন বেসটা রেখে ক্রিয়েটিভ করবে, সেটা তার ব্যাপার। আমরা কি রবীন্দ্রনাথ করি না? করি কিন্তু ওডিশী বেসে করি। আমার মনে হয়, একটা জিনিষের যদি অনেকটা ভেতরে ঢোকেন, তাহলে দেখবেন যেমন এখনও আমার গুরুজীর কাছে বেশ ২০-২৫ বছর শিখেও মনে হয় ওডিশী আমার এখনও অনেক শেখা বাকি। ইউ নো। নলেজ ইজ় লাইক সমুদ্র। মে বি কিছুটা আমরা গেছি, কিছুটা পাড়ে এসেছি। অনেকে যারা অনেক নাচ শেখে, বাচ্চারা আমাকে এসে বলে, আমার না কত্থকটা শেষ হয়ে গেছে, এখন আপনার কাছে ওডিশি শিখতে চাই। আমি বলি কত্থক শেষ হয়ে গেছে? বিকজ় ইট ক্যাননট বী। এটা বোকার মতো কথা, যে কোনো কিছু শেষ হয়ে গেছে। হয়তো কোনও একটা স্কুল যেমন চণ্ডীগড় বা প্রভাকর কোনো একটা জায়গার কিছুটা সিলেবাস তুমি কভার করেছ, কিন্তু কেউ কিছু শেষ করতে পারে না। আমাদের যতগুলো রাগ আছে, তার ওপর আমরা পল্লবী ক্রিয়েট করতে পারি। খাম্বাজ, বেহাগ, বিলারী, কিরবাণী যতগুলো মনে আসছে মানে ততগুলো করতেই তো জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। থাটাই বোকা বোকা লাগে। গুরুজীর কাছে শিখেছি 10-15টা পল্লবী, যেমন আগা মোহনা, আরবী, সাবেরী, শঙ্করা, বেহাগ, গতিবেদ, হংসধ্বনী মানে নাম সব মনে আসছে না...

 

শ্রীপর্ণা: পল্লবীটা কী? ভারতনাট্যমের আডাউ জাতীয় কিছু?

ডোনা: না, ভারতনাট্যমটা আমার অতখানি গ্রিপে নেই। আমার মনে হয় তিলহানাম যাকে বলে। পল্লবী হল পিওর ডান্স আইটেম। মানে কোনও মানে নেই। আমি ঠিক জানি না, তিলহানামে মানে আছে কিনা। পল্লবী মানে রাগ আর তালে কম্পোজ় যেটা হচ্ছে কম লয়ে শুরু হয়ে দ্রুত লয়ে শেষ হয়। একটা রাগই ডিফারেন্ট ভাবে আমরা বলতে থাকি। যেমন ধরুন (সুর করে) তা না ধী রে না। এটাই আমরা করতে থাকব, মানে পনেরো মিনিট ধরে ....

 

শ্রীপর্ণা: অনেকটা কি ধ্রূপদী সঙ্গীতে খেয়ালের মতো? ধীর লয় আরম্ভ করে তারপর মধ্য লয় ও শেষে দ্রুত লয়ে নানাভাবে বিস্তার?

 

ডোনা: একজ়্যাক্টলি। একজ়্যাক্টলি। বিভিন্ন মন্দির থেকে নানান স্কাপচারাল পোজগুলো নিই। অ্যাজ সাচ কোনও মীনিং নেই। শুধু কতগুলো বিউটিফুল স্টেপস্ দিয়ে করা। আমাদের নাচটা অভিনয় ও পিওর ডান্স পোরশনে ডিভাইডেড। পিওর ডান্সের মানে থাকে না। আর অভিনয় মানে এনিথিং দ্যাট হ্যাজ় আ মীনিং। সেটা রামায়ণ হতে পারে, দুর্গা কিংবা রবীন্দ্রসঙ্গীত। যার অর্থ আছে, স্টোরি আছে। গীতগোবিন্দ থেকে নাও, বা ধরো শাপমোচন করছ, বা রামায়ণ করছ বা দুর্গা করছ। সো বেসিক্যালি আওয়ার ডান্স হ্যাজ় টু পোরশন -- পিওর ডান্স অর পল্লবী আর অভিনয়।

 

শ্রীপর্ণা: আপনার নিজের পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

ডোনা: মানে?

 

শ্রীপর্ণা: মানে নেটে সার্চ করলে তো জেনেই যাব আপনার মা বাবা ও অন্যান্যদের কথা। তবু আপনার মুখে একটু শুনতে চাই।

ডোনা: আমার বাবা সঞ্জীব রায়, মায়ের নাম স্বপ্না রায়। আমি তাদের ওয়ান অ্যান্ড ওনলি চাইল্ড। আমার হবু বর অবভিয়াসলি আমার পাশের বাড়িতে থাকত, তার নাম সৌরভ গাঙ্গুলী। তার সঙ্গে আমার ছোটবেলা থেকে আলাপ। আমার শ্বশুর মশাইয়ের নাম চণ্ডী গাঙ্গুলী, শাশুড়ীর নাম নিরূপা গাঙ্গুলী। আমার একটা ছোট মেয়ে আছে। তার নাম সানা গাঙ্গুলী, আর একটা ডগি আছে যার নাম সুগার গাঙ্গুলী।

 

শ্রীপর্ণা: হা হা হা। আমি অবশ্য আপনার বাপের বাড়ির কথাই আরেকটু জানতে চেয়েছিলাম। যেমন বললেন, গানবাজনার একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আপনার বাড়িতেই ছিল। এইরকম। যাইহোক পরের প্রশ্ন।

 

শ্রীপর্ণা: নেটে দেখলাম আপনার 2000এর মতো ছাত্রী। নাচের স্কুলে নাচ ছাড়াও ক্যারাটে, যোগব্যয়াম, সুইমিং ইত্যাদিও শেখানো হয়। নাচটা কি আপনি নিজেও শেখান?

ডোনা: নাচ আমি নিজেই শেখাই। আর কে শেখাবে?

 

শ্রীপর্ণা: আরও টিচার নিশ্চয়ই আছে।

ডোনা: হ্যাঁ। আমাদের টিচার আমরা নিজেরাই তৈরি করি। আমার অনেক স্টুডেন্ট যারা নাচটাকে পেশা হিসাবে নেয়, তারা আমি যখন থাকি না আমার ক্লাস নেয়। কিন্তু আমি যখন কলকাতায় থাকি তখন আমার ক্লাস আমিই নিই। ইটস্ মাই প্যাশন। শনি রবিবার আমার কোনও সময় থাকে না। শনিরবিই সবার সুবিধা। কারণ অন্যদিন স্কুল চাকরি টিউশন নানা ব্যস্ততা থাকে। রবিবারেও সকাল দশটায় ক্লাসে ঢুকি, মাঝে আড়াইটে তিনটে নাগাদ একটা ব্রেক, আবার চারটে সাড়ে চারটেয় ক্লাসে ঢুকি, রাত নটা-দশটা অবদি ক্লাস চলে। কলকাতায় থাকলে শনি রবিবার জাস্ট ক্লাসেই থাকি। অনেক দূর থেকে বর্ধমান মেদিনীপুর বিভিন্ন জায়গা থেকে অতখানি পরিশ্রম করে আমার ক্লাসে আসছে, তারা তো আমার কাছেই শিখতে আসছে। তখন অন্য কেউ কেন আমার ক্লাস নেবে? আমার নাচ শেখাতে ভালো লাগে। স্কুলটা তো খুলেছি আমি নিজে শেখাব বলেই।  

 

শ্রীপর্ণা: আরও টিচারও তো আছে। আমার মেয়েকে এক জায়গায় নাচ শেখাতে গিয়ে দেখেছি ছোটদের সিনিয়র স্টুডেন্টরা দেখিয়ে দিচ্ছে।

ডোনা: হ্যাঁ। সেটা একটা টেম্পোরারি ফেজ় হতে পারে। ধরুন আমি ইংল্যান্ডে গেলাম মেয়ের কাছে, তখন সিনিয়র স্টুডেন্টরা আমার ক্লাস নিল।

 

শ্রীপর্ণা: শুনে খুব ভালো লাগল। কারণ নামী শিল্পীরা প্রায়ই শোনা যায় নিজেরা ক্লাস নেন না।

ডোনা: ইন ফ্যাক্ট আমার সিনিয়র স্টুডেন্টরা অনেকে এখন আমার চাইতেও ভালো নাচে। আমার ক্লাস যাদের নিতে দিই, তারা অভবিয়াসলি আমার সঙ্গে ২৫-৩০ বছর ধরে আছে, যেমন রঘুনাথ দাস, তারা এখন আমার চেয়েও ভালো নাচে। হয়তো আমার এক্সপিরিয়েন্স বেশি, কিন্তু ভালো শেখায়ও। আমার যতজন সিনিয়র স্টুডেন্ট আছে, দে আর অল ভেরি গুড। জানি না, আপনি আমাদের কোনও প্রোগ্রাম দেখেছেন কিনা, তাহলে বুঝতেন তাদের ক্যাটিগোরি একেবারে আলাদা।

 

শ্রীপর্ণা: ইউটিউবে দেখেছি, লাইভ দেখার সৌভাগ্য হয়নি এখনও।

ডোনা: ইয়া। দে আর ডিফারেন্ট, ভেরি ডিফারেন্ট। আর ওরা তো আমার কাছেই শিখেছে। আর ওদের কাছে থাকলেও কী হয়, অনেক টাইম জোন, অত ক্লাস একসাথে নেওয়া সম্ভব নয়, তখন একটু ভাগ ভাগ করে নিতে হয়। কেউ চৌথ শিখে গেছে আমার কাছে আসে। আমি সেটা কারেক্ট করে যদি দেখি ভালো শিখেছে, তাহলে ত্রিভঙ্গী শেখাব। তারপর ত্রিভঙ্গী কারেকশন হয়। যদি দেখি ভালো শিখেছে, তাহলে একটা ক্রিয়েটিভ নাচ বা রবীন্দ্রনাথ শিখিয়ে ব্যাপারটা ভালো ভেতরে ঢোকাই। তারপর মঙ্গলাচরণে যাই। যেহেতু নাচটা আমার প্যাশন। দেখুন যদি যেটা প্যাশন সেটা প্রফেশন না হয়, টাকা না আসে, তাহলে লোকেরা আপনার কাজটাকে কদর দেয় না।

 

শ্রীপর্ণা: একদম ঠিক কথা।

ডোনা: দেখুন, নাচটা বেসিকালি ছোটবেলা থেকে আমার শখ। আর বেসিক্যালি আমার সংসার আমার নাচের টাকায় চলেও না।

 

শ্রীপর্ণা: (হাসি) বলা বাহুল্য।

ডোনা: হ্যাঁ। নাচটা মূলত প্যাশন বলে নাচের দিকে ফুল মাইন্ড দিই, ফুল ফ্লেজেড মনোযোগ। যারা প্রফেশনাল ডান্সার, যাদের নাচের টাকায় সংসার চালাতে হয়, তাদের চেয়ে আই ক্যান কনসেন্ট্রেট মোর অন কস্টিউম,মোর অন লাক্সারি অফ মাই ডান্সারস্, অন্যরা যেখানে ট্রেনে নিয়ে যাচ্ছে আমি আমার পারফরমারদের ফ্লাইটে নিয়ে যেতে পারি। জগন্নাথের নাচ করি, তাই জগন্নাথ আমাকে ভালো জায়গায় রেখেছে। সো আওয়ার স্ট্যান্ডার্ড আরও বেটার বেটার হতে থাকে।

 

শ্রীপর্ণা: সানার নাচের ভিডিও আমরা দেখেছি। বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

ডোনা: সানা বলছি। সানা খুব ভালো নাচে। ছোটবেলায় যখন শেখানো হত ওকে, তাও একটা দুটো প্রোগ্রামে যখন বলতাম আজকে নাচবি? ও বলত হ্যাঁ। আগের দিন আমরা বলছিলাম জানিস তো, পুজোয় সময় অনেকগুলো প্রোগ্রাম এসেছে লন্ডন থেকে। ম্যানচেস্টার, লিভারপুল, ক্যাম্বেলের 60 ইয়ার আছে, একজন স্লাওয়ের থেকে ফোন করেছিল, বার্মিংহামে প্রোগ্রাম আছে। জানি না লন্ডনে এবার যাব কিনা। কিন্তু অনেকগুলো প্রোগ্রাম আছে। জিজ্ঞেস করলাম যদি হয় নাচবি? তাহলে ছ-সাত ডান্সার নিয়ে যাব, তুই একটি পোরশন করবি। ও বলল হ্যাঁ। এই গেলবার তো হোলিতে প্রোগ্রাম করেছিলাম ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে করেছিলাম, এর আগের বছর কোভিড ছিল, তখন লন্ডনে করেছিলাম, আমার কিছু স্টুডেন্ট এখন জার্মানিতে পড়াশুনো করছে। কোভিডের ফলে অনেকদিন পরস্পরকে দেখেনি, ফলে ওরা খুব এক্সাইটেড ছিল নাচব নাচব করে। আসলে নাচগানটা হল নেশার মতো, কিছুদিন না করলে মনে হবে কী একটা করছি না, দেখুন আপনি অনেকদিন না লিখলে আপনার মনে হবে কিছু মিসিং, কী একটা করছি না...

 

শ্রীপর্ণা: অস্থির অস্থির লাগে।

ডোনা: হ্যাঁ। আমাদেরও সেরকম কোভিডের পর মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের লন্ডনের সেই প্রোগ্রাম ও একদিনও দেখতেও এল না। পুরোপুরিই মুডি। ও একটা জায়গা অবদি রিচ করে গেছে। ও যদি চায়, নার্চার করে তাহলে করতে পারবে। শি ইজ় আ ফ্যান্টাস্টিক ডান্সার। যেসব জায়গাগুলো আমাকে অন্যদের শেখাতে হয়, ধরো পা তুলে -- বা একটা স্টেপ যদি আমি আর ও করি, ওরটা বেশি সুন্দর লাগবে। নাচটা তো দেখার জিনিস। মানে যেহেতু ও রোগা, নাচটা সুন্দর লাগে। অনেক লোককে শেখাতে হয়, ওকে শেখাতে হয় না। নাচটা ইনবর্ন আছে।

 

শ্রীপর্ণা: তাহলে তো বলা যায় ও বাবার চেয়ে মায়ের লিগ্যাসিটাই বেশি পেয়েছি।

ডোনা: না, ও খুব ভালো দৌড়োত ছোটবেলায়। ভেরি স্পোর্টি। কিন্তু স্পোর্টসেও গেল না। নাচও করল না। পড়াশুনো নিয়ে আছে। আমি ভাবি কি ভেতর থেকে যেটা তোমার করতে ইচ্ছা করে, সেটাই করা উচিত। এই না যে আমি ফোর্সফুলি ডান্সার বানাব, টেনিস খেলাব,

 

শ্রীপর্ণা: কি ও আপনার ইচ্ছায় শিখছে নাকি নিজের আগ্রহে?

ডোনা: আগে, ছোটবেলায় আগ্রহে শিখত। তারপর বড় হয়ে আসতে আসতে আমি বলায় করতে করতে-- তারপর আর কত বলব? ছেড়ে দিয়েছি।

 

শ্রীপর্ণা: হা। আমার মেয়ের মতো।

ডোনা: হ্যাঁ। যখন ওর ইচ্ছা হয়, তখন নাচে। বিকজ শিব ইজ সো গুড শি ক্যান ইনকর্পোরেট হার হোয়ের এভার উই ওয়ান্ট। যখন ইচ্ছে হয় না, করে না, আমরাও ফোর্স করি না।

 

শ্রীপর্ণা: সৌরভকে দাদাগিরির একটি অনুষ্ঠানে বলতে শুনেছিলাম সানা জিমন্যাসটিক শিখছে। নাচের উল্লেখ করেননি। ও জিমন্যাসটিক নাচে সরে এল কবে ও কীভাবে? নাকি দুটোই সমান্তরাল ভাবে চলছিল। জিমন্যাসটিকসের দক্ষতা তো নাচেও কাজে লাগে।

ডোনা: কিছুদিন। সবকিছুই খুব শখে। কিছুদিন জিমন্যাসটিক কিছুদিন করাটে কিছুদিন যোগা। সবই একটু একটু করে ছেড়ে দেয়।

 

শ্রীপর্ণা: দীক্ষামঞ্জরীতেই কি জিমন্যাসটিক শেখানো হয় নাকি পার্সোন্যালি শিখিয়েছেন?

ডোনা: না, জিমন্যাসটিক পার্সোনালি শেখানো হয়েছিল। দীক্ষামঞ্জরীতে করাটে শেখানো হয়, ড্রয়িং শেখানো হয়, গান শেখানো হত। ভারতনাট্যম, ক্রিয়েটিভ নাচ, কত্থক, ওডিশি শেখানো হয়। সুইমিং আছে।

 

শ্রীপর্ণা: এটাও আমার একটা কৌতুহল ছিল জানা হয়ে গেল। আর সানা ইংল্যান্ডে সানা ইংল্যান্ডে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে? কী নিয়ে পড়ছে?

ডোনা: ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন, ইউসিএল এ পড়ছে। এবার ওর ফাইনাল ইয়ার। মে মাসের 15-16 তারিখে কমপ্লিট হয়ে যাবে।

 

শ্রীপর্ণা: কী নিয়ে পড়ছে?

ডোনা: ইকনোমিক্স নিয়ে।

 

শ্রীপর্ণা: ওর ফিউচার প্ল্যান কী?

ডোনা: এখনও আমরা জানি না। ও নিজে জানে কিনা সন্দেহ।

 

শ্রীপর্ণা: হাহা। ওর মধ্যে কার প্রভাবটা বেশি। দুজন বিখ্যাত মানুষের বাবার সন্তান। দুজনেই প্রচণ্ড ব্যস্ত।

ডোনা: ওর মধ্যে কারো প্রভাব নেই। ও নিজের মতো চলে।

 

শ্রীপর্ণা: তবু সোশাল মিডিয়ায় বা ইউটিউবে ভিডিও যা দেখেছি, তাতে মনে হয়, বাবার চেয়ে মায়ের উত্তরাধিকার বেশি বহন করছে।

ডোনা: হ্যাঁ। কারণ স্পোর্টসে সেরকম ভাবে এক্সপোজড হয়নি। ওটা ও ইন্টারন্যালি কোপ করত। বাট ও যখন ছোটবেলায় স্কুলে স্পোর্টস টোর্টস করত বেশ ভালোই করত। ভালোই দৌড়োত। মানে হাউসে ফার্স্ট আসত (হত)। অনেক ছোটবেলায় সৌরভ একবার ওদের স্কুলে জুনিয়ার স্পোর্টসে একবার চীফ গেস্ট হয়ে গিয়েছিল। সৌরভই লজ্জায় পড়ে যায়। বলে এই তুই আর ডাকবি না। আমি তো সব প্রাইজ় তোকেই দিয়ে দিচ্ছি। এরকম ব্যাপার। মানে ও ভালোই ছিল। কিন্তু করে না। মানে কোনওটাই খুব একটা এক্সেল করেনি। এখন মাঝেমাঝে জিমে যায় বা দৌড়োতে যায়। কিন্তু ও পড়াশুনো নিয়েই আছে। হোয়াটেভার শি ফীলস্ লাইক।

 

শ্রীপর্ণা: তুমি নিজে একটা মস্ত বড় প্রতিষ্ঠান। এত বড় নাচে স্কুল সারা বিশ্বজুড়ে যার শাখা বা ছাত্রছাত্রী। তা সত্ত্বেও ডোনা গাঙ্গুলী বলতেই অধিকাংশ মানুষের মাথায় সৌরভের বৌ কথাটাই প্রথমেই আসে। তুমি নিজেও হয়তো দেখেছ বা শুনেওছ। কেমন লাগে?

ডোনা: খারাপ লাগে না অ্যাকচুয়ালি। কারণ…

 

শ্রীপর্ণা: এর কোনও অ্যাডভান্টেজ আছে নাকি...?

ডোনা: অ্যাডভান্টেজও আছে ডিসঅ্যাডভান্টেজও আছে। ঠিক আছে লেটস টক অ্যাবাউট অ্যাডভান্টেজ। সেটা আমার খুব একটা খারাপ লাগে না। কারণ কী হয়-- যখন ছোট ছিলাম তখন পাশের বাড়ির ছেলেটাকে লাইক ভালোবেসেছিলাম। এখন কী হয়, ও যে এত বড় হতে পেরেছে, সেটাও তো একটা বিশাল ব্যাপার। আমরা জীবনে ভাবিনি ও ইন্ডিয়ান টীমের ক্যাপ্টেন হবে, তাও এত সাকসেসফুল ক্যাপ্টেন হবে, নাম্বার ওয়ান তো ইন্ডিয়ান টীমে খেলবে, তারপর হি উইল বিকাম আ লেজেন্ড, দেন বিকাম ক্যাপ্টেন, দেন সাচ আ সাকসেসফুল ক্যাপ্টেন, দেন প্রেসিডেন্ট অফ সিএজি, তারপর বিসিসিআই --- মানে কিছুটা স্বপ্নেরও উর্ধ্বে চলে গেছে। এরজন্য অবশ্যই আমার খুবই খুবই খুবই গর্ববোধ হয়। এরজন্য খুব একটা অ্যাফেক্ট হয় না। বরং লোকেরা দাদা বৌ বলে খুব যত্নআত্তি করে, তখন আমার আরও ভালো লাগে, বেশি যত্ন পাই---

 

শ্রীপর্ণা: সো ইউ আর প্যাম্পার্ড।

ডোনা: ইয়েস, আই অ্যাম প্যাম্পার্ড। সো ইটস ভেরি নাইস। আর নাচটা কী হয়, আমি এত বড়ো গুরুর কাছে শিখেছি। যখন লোকেদের নাচ দেখি, আমি রিয়েলাইজ করি, ওদের কোথাও একটা ডিসিপ্লিন, বা কিছুকিছু জিনিস হয়তো ওরা জানে না। বেসিক জিনিস যেগুলো হয়তো একটা বড়ো কোনও গুরুর কাছে শিখলেই পাওয়া যায়। ধরুন (ভঙ্গী করে) আমি এই দিকে যাচ্ছি, আমি এই পা দিয়েই শুরু করব। ঐ দিকে যাচ্ছি, ঐ পা দিয়েই শুরু করব। আমি দেখেছি অনেকে উল্টো পা দিয়ে শুরু করছে। কেমন একটা অড লাগে। আমার মনে হয়, নাম্বার ওয়ান লোকেদের স্ট্যান্ডার্ড দেখে মনে হয়, এদের চেয়ে আমার স্ট্যান্ডার্ড অনেক বেটার। তাই আমার আরও বেশি নাচ করা উচিত। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, সৌরভ ভীষণই ব্যস্ত থাকে, আর ট্যুরে ট্যুরে থাকে। যখন ও খেলত, তখন অবভিয়াসলি বৌয়েরার সব জায়গায় যেতে পেত না। তখন একটা ইয়ে ছিল -- মানে এই সময় বৌ থাকবে, এই সময় থাকবে না, ক্রিকেটাররা শুনতও। এখন হয়তো যেকোনও সময় বৌ অ্যালাউড হয়, বা আয়াম নট শিওর বোর্ডের কতখানি হাত আছে এ ব্যাপারে, বাট তখন ছিল। তাই যখন আমি ফিরে আসতাম আমার কিছুই ছিল না করার। তো যেহেতু আমি নাচটা শিখেছি, সেটা বাড়ির ভেতরেই হয়, আর আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছিল, গুরুজী আমার বাড়িতেই ওয়ার্কশপ নিত, বাড়িতে হল আছে, নাচের ই (পরিবেশ) আছে, তখন নাচের স্কুল যেটা গুরুজীর ইচ্ছা ছিল, করলাম। ওটা বড়ো হল। গুরুজীর সঙ্গে তো প্রোগ্রাম করতামই, গুরুজীর পরের লোকেরা আমাকে ডিফারেন্ট জায়গায় ডাকত। সো ইট বিকেম মোর লাইক আ পাসটাইম। যখন আমার কিছু করার থাকত না তখন দেয়ার ইজ় ডান্স অলওয়েজ়। এখন দ্য স্কুল হ্যাজ় বিকাম আ ফুল ফ্লেজেড একাডেমি টাইপ। যেমন অনেকে বলে কোভিড খারাপ ছিল। কিন্তু কোভিডের একটা প্লাস পয়েন্ট হল, এখন সবকিছুই অনলাইন হয়ে গেছে।

 

শ্রীপর্ণা: অনেক সুবিধা হয়েছে। অনলাইন ক্লাস তো বিশেষ করে।

ডোনা: হ্যাঁ। ফলে উই হ্যাভ স্টুডেন্টস ইন দোহা, লন্ডন, উই হ্যাভ স্টুডেন্টস ইন ইওরোপ, আমেরিকা, বিকজ এখন তো সবাই অনলাইন ইউজ়ড টু। আর অনেকে কলকাতায় বাড়ি বা কাছাকাছি যখন আসে, তখন সবাই এসে আমার বাড়িতে একটু প্রাকটিসও করে নিতে পারে। ইটস ভেরি কমফর্টেবল। ফলে এখন আমাদের একাডেমি সব জায়গাতে ছড়িয়ে গেছে। উই হ্যাভ স্টুডেন্টস এভরিহয়্যার।

 

শ্রীপর্ণা: কোথায় নাচ শিখিয়ে বা অনুষ্ঠান করে তোমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে? আমি বিদেশের কথা বলছি।

ডোনা: ওরকম ঠিক বলা যায় না।

 

শ্রীপর্ণা: শেয়ার করার মতো অভিজ্ঞতা নেই?

ডোনা: অফকোর্স আছে। কিন্তু প্রতিটি জায়গার অনুষ্ঠান ইজ় ভেরি ইউনিক অফ ইটস ওউন।  যেমন এবার দিদি আমাদের এআইএফ-এ নাচ করতে দিল ইনঅগুরাল আইটেম মিস্টার বচ্চনের গণেশ বন্দনার সাথে, তখন ইউ ক্যান সী ইন দ্য ডিডিও, ওনার স্তোত্রপাঠের সাথে, ওনার নাম অ্যানাউন্স করা হল, জয়া বচ্চন বলল, কী করেছ? আমি ভাবলাম আমি তো কিছু করিনি। তারপর আমরা যখন গণেশ বন্দনার সঙ্গে নাচ করে যখন বেরোই,   ক্যামেরায় ওদের ধরেছিল, দেখলাম বোথ আর ক্ল্যাপিং উইথ দেয়ার হার্ট আউট। সে হি ওয়াজ় ভেরি হ্যাপি উইথ দ্য গণেশ বন্দনা উই হ্যাভ পুট ইট।

তারপর প্রত্যেকবার আমরা রথের সামনে নাচি। একটা আলাদা আলাদা অনুভূতি।

 

শ্রীপর্ণা: হ্যাঁ, রথের সামনে তোমাকে সিম্বলিক ঝাঁটা দিতে দেখেছি।

ডোনা: একজ়্যাক্টলি। আমরা প্রত্যেকবার নাচিও ইস্কনের রথের সামনে। এখন আর অনেক বছর আমি ঝাঁটা দিই না, ওটা এখন দিদিই ইনঅগরেট করেন।

 

শ্রীপর্ণা: আমার ছবিটা মনে আছে কারণ ইনসিডেন্টালি ওরকম একটা বোমকাই শাড়ি আমারও আছে।

ডোনা: আচ্ছা। ওটা আমি সৌরভের বৌ মানে সৌরভ ছিলাম, মানে যখন ইন্ডিয়ান টীমের ক্যাপ্টেন ছিল, দিদি ছিল না, বুদ্ধবাবু ছিল, তখন আমি রথ ইনগরেটও করতাম। একবার সৌরভও গিয়েছিল, সৌরভ আর হেমা মালিনী। এখন দিদি উদ্বোধন করে আমরা নাচি। এখন তো ---

 

শ্রীপর্ণা: চেঞ্জ হয়ে গেছে।

 

চেঞ্জ হয়ে গেছে। তারপর ধরো, আমরা যখন দেশকে রিপ্রেজেন্ট করি, ধরো চায়না যাই, ইজিপ্টে যাই, এবার যেমন মায়ার খেলা নিয়ে ডাবলিন সুইজারল্যান্ড বা লন্ডনে গেলাম, হল ভর্তি থাকে। খুবই ভালো লাগে। যেমন চায়নায় যখন গিয়েছিলাম ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে, সেখানে প্রতিটি দেশের একেকটা করে প্যাভিলিয়ন ছিল। ওরা বলল, 'যদিও ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল টীম পাঠিয়েছে, বাট ডু ইউ থিংক ইউ অল ক্যান ম্যানেজ বলিউড? আমি বললাম, হোয়াই বলিউড? উই আর ডুইং ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল? ইটস্ সামথিং দ্যাট উই অল ইন্ডিয়ানস আর ভেরি প্রাউড অফ অ্যান্ড উই ডু ইট ইন আ ভেরি প্রপার ওয়ে। তখন বলল, কিন্তু এখানকার লোকেরা কি নেবে? আমি বললাম, নেবে না মানে? উই উইল ট্রাই। যদি না নেয় দেন উই উইল কম্পোজ়। আর আইসিসিআর এর ট্যুরে গিয়ে কেউ বলিউড করে জানা ছিল না, এখন যদিও অনেক বলিউড গ্রুপ পাঠানো হচ্ছে। আমরা ওডিশি ক্লাসিকাল করি, লেটস ডু ইট। তারপর আমরা প্রতিদিন আলাদা কস্টিউম পরতাম। আমাদের যা ভিড় হত। মানে উই অয়্যার ওনলি সাপোজ় টু ডু ওয়ান আওয়ার শো। মানে আইসিসিআর পেউড ফর দ্যাট ওয়ান আওয়ার শো। এইবার আমরা প্রোগ্রাম করে চলে যেতাম লোকে আবার এসে বসে থাকত, যে আবার একটা হবে। তারপর আবার লোক এসে বসে থাকত। মানে ওখানকার যে ইন চার্জ ছিল আই রিমেম্বার হিজ় নেম, মিস্টার ন্যাংগিয়া, মাঝে মাঝে এখনও আমাকে এস এস এস করে, এখনও বলে ডোনা ইউ প্রুভড আস রং। ওরা তখন মধ্যিখানে আগের যে ভিডিওটা হয়েছিল সেটা আবার চালিয়ে দিত। বাট দে ওয়ান্টেড টু সি লাইভ পারফরম্যান্স। তখন আমরা দেখলাম যেহেতু সেখানে প্রথম বার এবং উই অয়্যার দেয়ার টু স্প্রেড আওয়ার কালচার, সো হোয়াই নট। তখন আমরা কী করতাম, 45 মিনিটস অর এক ঘণ্টার প্রোগ্রাম একসাথে না করে 20 মিনিটস অর হাফ অ্যান আওয়ারের প্রোগ্রাম তিন চার বার করে দিতাম। আধ ঘণ্টা করে চলে যেতাম, আবার হল ভরত, আবার আধ ঘণ্টার অনুষ্ঠান করতাম। পরে এত পপুলার হয়ে গিয়েছিল যে বিকেলেও চাইত। আমাদের সকালে টাইম ছিল, বিকেলটা সবাই চাইত, প্রথম বার চায়না গেছে, চায়না দেখবে। আমি তখন আমার গ্রুপটাকে দু ভাগে ভাগ করে দিলাম। সকালে এরা নাচবে বিকেলে ওরা নাচবে, যাতে সকালে ওরা ঘুরতে বিকেলে এরা। আর একটা পারফরম্যান্স সবাই মিলে করব আইসিসিআর যেটার জন্য আমাদের টাকা দেবে অর হোয়াটেভার। ইটস ডিফারেন্ট নেশা অলটুগেদার। যেমন তখন পঁচিশে বৈশাখ ছিল। মে মাসে পড়েছিল। আমাদের বলা হল, তোমরা কি রবীন্দ্রনাথ করবে? আমি বললাম কেন করব না? কারণ চায়নায় রবীন্দ্রনাথ ইজ় ভেরি পপুলার।

 

শ্রীপর্ণা: আচ্ছা, জানা ছিল না।

ডোনা: ভেরি পপুলার। তো আমরা সেদিনটা পুরো দিনটাই রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর নেচেছিলাম। মানে ডিফারেন্ট প্রোগ্রাম ইজ়...

 

শ্রীপর্ণা: মানে চায়নার অভিজ্ঞতাটাকেই কি স্পেশাল বলা যেতে পারে?

ডোনা: না। ইংল্যান্ডে যখন নাচলাম বা সুইজারল্যান্ডে --- মানে প্রতিটি প্রোগ্রাম ইজ় ইউনিক অন দেয়ার ওউন ওয়ে। যেমন আমরা 2010-এ কোনারক ফেস্টিভ্যালে চিত্রাঙ্গদা উড়িয়া ভাষায় কনভার্ট করে নেচেছিলাম। 2010 ছিল রবীন্দ্রনাথের স্পেশাল ইয়ার। তাই ওড়িশি যেহেতু করি, ওটাকে উড়িয়াতে কনভার্ট করে নেচেছিলাম। সো এভরিথিং ইজ় স্পেশাল।

 

শ্রীপর্ণা: এবারে মজার প্রশ্নটা করি। মহারাজকে নিয়ে একটা জিজ্ঞাসা। কোথাও যেন শুনেছিলাম বা পড়েছিলাম, সৌরভকে বিয়ের প্রস্তাব আপনিই দিয়েছিলেন। কথাটা কি সত্যি? কখন কীভাবে সেই গল্প যদি একটু বলেন। যদি উল্টোটাও হয়ে থাকে, তাহলেও গল্পটা জানার কৌতুহল রইল। 

ডোনা: (ভেবে) ব্যাপারটা ঠিক ওরকম ছিল না। আসলে পাশাপাশি বাড়ি তো। দুজন দুজনকে ছোটবেলা থেকেই চিনতাম। ইট জাস্ট হ্যাপেনড যে জানতাম, সৌরভ এসট্যাবলিশড হয়ে গেলেই আমরা বিয়ে করব। মানে অপেক্ষা করতাম কখন এসট্যাবলিশড হবে। ব্যাপারটা এরকম ব্যাপার ছিল।

 

শ্রীপর্ণা: সৌরভের সঙ্গেও নিশ্চয়ই বেড়াতে হয়েছে। কোনও স্মরণীয় ঘটনা? (ডোনা ভাবছেন দেখে) অজস্রই আছে হয়তো। তার মধ্যে

ডোনা: একজ়্যাক্টলি, অজস্রই আছে। বলা ভারী ডিফিকাল্ট।

 

শ্রীপর্ণা: সব জায়গাতেই সৌরভের বৌ হিসাবে সম্মান খাতির প্যাম্পার এসব তো আছেই। কখনও সৌরভের সঙ্গে ট্যুরে গিয়েও কি নাচ দেখাতে হয়েছে?

ডোনা: না।

 

শ্রীপর্ণা: সেখানে একজন ফ্যামিলি মেম্বার হিসাবেই তোমার উপস্থিতি?

ডোনা: হ্যাঁ

 

শ্রীপর্ণা: সৌরভের ক্রিকেট জীবনে সাফল্য নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু খেলোয়াড় হিসাবে অবসর গ্রহণের আগে যে ব্যবহার তিনি দলের কাছে, কোচ ও সতীর্থদের কাছে পেলেন, যেকোনও অজুহাতে বাদ দেওয়া। ফ্যান হিসাবে আমরাই নিতে পারিনি। তোমার তখন কেমন লাগত?

ডোনা: এভরিবাডি হ্যাজ় আ স্ট্রাগলিং পিরিয়েড ইন আ ডিফারেন্ট ওয়ে। সো ইট ওয়াজ় হিজ় স্ট্রাগলিং। উই কানট ডু এনিথিং।

 

শ্রীপর্ণা: বাট বাই দ্যাট টাইম হি প্রুভড হিমসেলফ। দশ বছর ক্যাপ্টেনসি করা হয়ে গেছে

ডোনা: ইনিশিয়ালি ইট ওয়াজ় -- ও ঠিক আছে। দশ বছর পর মানে যেটা গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে হল তো?

 

শ্রীপর্ণা: শুধু চ্যাপেল কেন? ধোনিও কি ঠিক ব্যবহার করেছে? রাহুল দ্রাবিড়ও কি ভালো আচরণ করেছিল? আমাদের পক্ষেই ব্যাপারগুলো নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। অফ কোর্স তারপর বিসিসিআই চেয়ারম্যান হয়ে এসব অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলো সব ওয়াশড আউট হয়ে গেছে। কিন্তু সেই সময় কি কোনও খারাপ লাগা কাজ করেনি?

ডোনা: খারাপ হয়তো লেগে ছিল। তবে হি হ্যাজ় মেড আ কামব্যাক। সো ঠিক আছে।

 

শ্রীপর্ণা: আজ তো সে বিসিসিআই চেয়ারম্যান হিসাবেও পাঁচ বছর কাটানো হয়ে গেছে। কেন দ্বিতীয়বার বোর্ড শীর্ষে বসলেন না, কেন আইসিসিআর চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে শামিল হতে পারলেন না, তা নিয়ে আপনার কোনও ক্ষোভ আছে?

ডোনা: নাহ্।

 

শ্রীপর্ণা: এমন একজন অর্থ যশ সম্মানের শীর্ষে পৌঁছানোর পর সৌরভের এত বিজ্ঞাপন করার প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইছি না। টাকার তো দরকার নেই

ডোনা: ও মা, এ কী! রোজগার করতে হবে তো। খেতে হবে তো। খরচা আছে তো।

 

শ্রীপর্ণা: এটা দারুণ রসিকতা হয়ে গেল। [হাসি] ওর সব বিজ্ঞাপন ভালোই লাগে। প্রথম দিকে কেমন আনস্মার্ট লাগলেও এখন ভীষণ ইমপ্রসিভ। কিন্তু মোনা ডার্লিংএর সঙ্গে বিজ্ঞাপন দেখে ডোনা ডার্লিংএর কেমন লাগে? মানে ফ্যান হিসাবে অনেকেই ঠিক স্বস্তি বোধ করিনি। কারণ চরিত্রটি ভিলেন হিসাবেও ঠিক প্রথম সারির বলা যায় না। তার অনুকরণ তাও অজানা অচেনা মোনাকে ওভাবে পাশে নিয়ে। কী মনে হয়, তোমার মহারাজকে শোভা পায়?

ডোনা: অনেকের তো ঐ অ্যাডটা ফাটাফাটি লেগেছে। অনেকের ভীষণ ভালো লেগেছে। মানে ইটস আ মিক্সড কালচার। চয়েস।

 

শ্রীপর্ণা: তোমার কেমন লেগেছে? ওভাবে চেয়ারের হাতলে বসিয়ে?

ডোনা: আমি--। ইট ডাজ়নট রিয়েলি ম্যাটার ইউ নো। ইটস অ্যান অ্যাড। বিস্কুটের অ্যাড।

 

শ্রীপর্ণা: বিস্কুটের অ্যাড। আর, আপনি যেমন নিজের শিল্প জগতে বহু বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। তেমনি ক্রীড়াজগতেরও বহু বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। যদি তাদের মধ্যে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্বের নাম যদি করতে বলি, তাহলে কার নাম সবার আগে নেবেন। অবশ্যই সৌরভ গাঙ্গুলী ছাড়া।

ডোনা: আমার সৌরভ সচীনের ব্যাটিংএর জুটিটা খুবই ভালো লাগে। সচীনের পরিবারের সঙ্গে এখনও আলাপ আছে। সৌরভের ফিফটিয়েথ বার্থডেতে এসেছিল। সারা অ্যাকচুয়ালি সানারই কলেছে পড়ে। মাস্টার্সে। আমরা যখন নভেম্বরে গিয়েছিলাম তখন আমরা একদিন সারা আর সানাকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলাম। মানে সচীনের পরিবারের সঙ্গে ইন অ্যান্ড আউট

 

শ্রীপর্ণা: বেশি ঘনিষ্ঠতা?

ডোনা: বেশি বলব না। তবে ইন অ্যান্ড আউট আমাদের টাচ আছে। অ্যাট দ্য সেম টাইম লছমনের সঙ্গে আছে। সৌরভ কলকাতায় কী একটা খুলেছিল। সেখানে কোচিং করাতে এলে আমাদের বাড়িতে খেতে আসত। আমরাও যেতাম। অনীলের মেয়েও বাইরে পড়ে। তো আমরা যখন লন্ডনে থাকি তখন বাই চান্স অনীলের সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গেও খাই। আমাদের সঙ্গে সবারই বেশ ভালো আলাপ ভালো রিলেশন আছে। এমনি নয় যে কারোর সঙ্গে কোনও---। হরভজন বলো, শেওয়াগ বলো যখন মহারাজ কমেন্ট্রি করত শেওয়াগের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তার সাথেও। মানে আমাদের সঙ্গে সবার সাথেই ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক আছে।

 

শ্রীপর্ণা: ক্রীড়া সাহিত্য কি পড়া হয়?

ডোনা: না না।

 

শ্রীপর্ণা: তবু জানাই, যদিও আমাকে ততটা চেনার কথা নয় হয়তো, তবু জানাই আমি কিন্তু থ্রু শারদীয়া খেলা, থ্রু ক্রিকট ইয়ার বুক আমি কিন্তু তোমার বাড়িতে আজ বছর দশেক ধরে আসছি। এবারে তো ক্রিকেট ইয়ার বুক সন্দীপ পাটিল এসে উদ্বোধন করলেন। যেবার 20 বছরের অনুষ্ঠান হয়েছিল সেবার সৌরভ গিয়েছিল।

ডোনা: সত্যমদার একাডেমি মানে টেকনো ইন্ডিয়া করে না বইটা?

 

শ্রীপর্ণা: হ্যাঁ। এবার তো পঁচিশ বছরে শেষ সংখ্যা ঘোষণা করা হয়ে গেছে, জানি না আর হবে কিনা। কিন্তু তুমি কখনও উল্টেও দেখো না?

ডোনা: একদমই না। একে ক্রিকেটারদের সঙ্গে অনেক বছর হয়ে গিয়েছে -- সবাই মানে

 

শ্রীপর্ণা: মানে ফিকশনও পড়া হয় না?

ডোনা: না-- না। সবাই এই আইপিএল আর এইসব কী বলো তো, মানে ফাইনাল ওভারগুলো দেখতে সবার ভালো লাগে। কেউ ছয় মারছে, উইকেট পড়ছে, কেউ আউট হচ্ছে, কোনও টিম জিতছে কোনও টিম হারছে। ঐ জায়গাগুলো ভালোই লাগে। মানে গতকালও লাস্ট টেন ওভার দেখলাম। আমি খুব একটা এনগ্রসড হয়ে দেখি না। যখন সৌরভ খেলত তখন দেখতাম। তারপর ক্রিকেটের খবর রাখতাম যেহেতু মাই হাজ়ব্যান্ড ওয়াজ অ্যাটাচড। কিন্তু কখনোই খুব একটা গ্লুউড হয়ে দেখি না আর কী। মানে টিভির সামনে বসে খবর রাখছি কে টিম থেকে বাইরে গেল, কে এল, ওরকম না। রাদার পুরো টেস্ট টিমের নামও বলতে পারতাম না। কোভিডের পরে লর্ডসে যে খেলাটা হয়েছিল, তখন সৌরভ গিয়েছিল, কারণ কোভিডের পরে সবার বাড়ি থেকে বেরোনোর ইচ্ছা ছিল, দু বছর দু বছর আটকে -- আর আমাদের যেতেই হত কারণ সানাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছি, সানা সেপ্টেম্বরে চলে যাচ্ছিল, দু-তিন বছর আগে যখন কোভিডটা তখন সবে খুলল অগস্ট মাসে সৌরভের সাথে লর্ডসে খেলা দেখতে গিয়েছিলাম, তখন আমি পরপর সব টিমের নাম জানলাম। নইলে রিসেন্ট টিমের আমি নামও জানতাম না। বাল্টিমোরের নামও জানতাম না।

 

শ্রীপর্ণা: তাহলে একটা প্রশ্ন করি। এখন তুমি কাকে সাপোর্ট করবে। দিল্লী ডেয়ার ডেভিল না কলকাতা নাইট রাইডার্স?

ডোনা: দুজনেই তো বাজে খেলছে। গুজরাত সবথেকে ভালো খেলছে।

 

শ্রীপর্ণা: হাসি

ডোনা: দিল্লীর টিমটা বাজে নয় বাট হোয়াটেভার --

 

শ্রীপর্ণা: তবু নিজের শহর না বরের কোচিং করা টিম?

ডোনা: দুজনেই তো ডাউন দ্য টেবিল। ভালো খেলছে গুজরাত আর চেন্নাই আর আর কে আছে?

 

শুভঙ্কর: লক্ষ্ণৌ [শুভঙ্কর ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন]

ডোনা:  হ্যাঁ লক্ষ্ণৌ। এরা ভালো খেলছে। দে আর দ্য বেস্ট টীম। ডিপেন্ড করে দেয়ার পারমুটেশন কম্বিনেশন। কোন টীম কবে খেলেছে। যেদিনকে বিরাট কোহলির টীমকে হারাল সেদিন তো টীমটাকে খুব স্ট্রং লাগছিল। জানি না, বাট হেরে গেলে কিছু করার নেই।

 

শ্রীপর্ণা: অনেক ধন্যবাদ। এই মুহূর্তে এই কটা প্রশ্নই করলাম। একটা ছোট্ট উপহার আছে। আনফরচুনেটলি আমি যেহেতু লেখিকা, তাই দিতে পারলে একটি বইই উপহার দিতে পারি। এটা আমার কাছে একটা গিফট হল তোমার সঙ্গে এই লাইভ কনভারসেশনটা যেটা আমার ওয়েবসাইটে যাবে। এটা সেই স্বয়ংসিদ্ধা ত্রৈমাসিক মানে আমার ব্লগজিনের বার্ষিক সংকলন। আগামী বছরে তোমার এই সাক্ষাৎকারটাও অবশ্যই থাকবে। তবে তার আগে এটা আমার ইউটিউব চ্যানেলে যাবে। আর শ্যামলদার সাক্ষাৎকার সংকলনের জন্য এই ইন্টারভিউ নেওয়া যেটা পুজোর আগেই প্রকাশ পাবে। তাই সেখানে তো থাকবেই।

আরেকটা খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস লক্ষ করলাম, তোমায় ফোন করে দেখেছি একবার রিং হলেই ধরো। নট লাইক স্টার বলে যে এয়ারটা--

ডোনা: না না

 

শ্রীপর্ণা: হয়তো স্টুডেন্টদের সঙ্গে ইন্টার‍্যাক্ট করতে গিয়ে হয়তো

ডোনা: হতে হয়। আপনার হয়তো টাইমিংটা ম্যাচ করেছিল। ডোন্ট গিভ দ্য রং ইনফরমেশন যে আমি ফোন করলেই ধরি। যখন ক্লাস নিই বা  রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন যদি দুপুরে বা বিকেলে ফোন করতেন আমাকে পেতেন না। ফোন বেজেই যেত।  কারণ তখন আমি নাচছিলাম স্টেজে। আপনার হয়তো টাইমিংটা ক্লিক করে গেছে। এই যে এতক্ষণ আপনার সঙ্গে কথা কথা বলছি বলে ফোন সায়লেন্টে আছে। এখন যারা করল তারা কিন্তু পেল না। যখন আমি থাকি তখন ধরে ফেলি।

 

শ্রীপর্ণা: রিং ব্যাকটাও পাওয়া যায়। আসলে আমাকে যখন এই ইন্টারভিউ নিতে বলল শ্যামলদা, নম্বরটাও দিয়ে দিল, তখন একটা আড়ষ্টতা কাজ করছিল। আই ডিড আ লট অফ হেজিটেশন যে ডোনাকে ফোনটা করব? তোমার নিজের তো একটা বিশাল ব্যাপার রয়েইছে, তার ওপর সৌরভস ওয়াইফ। সৌরভ মে বি ডার্লিং অফ এনটায়ার ইন্ডিয়া অ্যান্ড স্পেশালি অফ বেঙ্গল, স্টিল একটা তো আড়ষ্টতা --

ডোনা: একটা কথা বলি যেহেতু আপনি এত কথা বললেন। উই শুড বি ভেরি হাম্বল টু -- দ্যাট গড হ্যাজ় গিভেন আস সো মাচ। তাই না? এতে অহংকার থাকার তো কোনও দরকার নেই। ইউ গট সো মাচ, অহংকার থাকার তো দরকার নেই। এভরিবাডি নোজ় দ্যাট ইউ হ্যাভ গট সো মাচ। ইটস ফাইন। ইউ শুড বি ভেরি হ্যাপি, ইউ শুড ফীল ব্লেসড অ্যান্ড গুড অ্যাবাউট ইট দ্যাট ইউ আর দ্য চোজেন ওয়ান হুম গড ওয়ান্টস টু ব্লেস। আই উড রাদার সে যাদের অহংকার আছে তাদের থাকা উচিত নয়। আমি অনেক বড়ো বড়ো লোক ক্রিয়েট জগতে বা নাচগানের জগতে দেখেছি যাদের অ্যাবসোলিউটলি কোনও অহংকার নেই। যেমন আমার গুরুজীর তো জাস্ট জাস্ট কোনও অহংকার ছিল না। কিন্তু উনি যখন স্টেজে অভিনয় করতেন তখন উনি যেভাবে রাধা সাজতেন, মেয়েরাও অত সুন্দর সাজতে পারে না। মানে হি ওয়াজ় গড গিফটেড ইউ নো। ধরো সচীন, বা আমার স্কুল ওয়াজ় ইনগরেটেড বাই লতা মঙ্গেশকার, লতাজী ওয়াজ় সো ডাউন টু আর্থ সো ডাউন টু আর্থ মানুষ, মানে ইউ উইল নট আন্ডারস্ট্যান্ড মানে সো ডাউন টু আর্থ। আনবিলিভেবল। সো এভরিবডি ইজ় ভেরি নাইস। হ্যাঁ, একটা কী হয়, হয়তো একটা লেভেলের পরে ওদের এত লোক হ্যারাস করে, যে ওরা পেরে না।

 

শ্রীপর্ণা: মবড হয়ে গেলে।

ডোনা: হ্যাঁ মবড হয়ে গেলে তখন একটা ব্যরিকেড চাই। কারণ লোকেদের তো নিজের কাজ, নিজের চান, নিজের খাওয়া দাওয়ার জন্য টাইম রাখতে হবে। সারাদিনই তো যে যার টাইমে চলে এলে হবে না। লোকেদের তো নিজস্ব একটা জীবন আছে। এ ছাড়াও আমার মনে হয় না লোকেদের অত গর্ব করার কিছু আছে, মানে আপনি যেটা বলার চেষ্টা করেছেন

 

শ্রীপর্ণা: মানে আনন্দ, স্যাটিসফ্যাকশন বা পরিতৃপ্তির জায়গা আছে। কিন্তু স্নবারির নেই

ডোনা: একজ়্যাক্টলি। স্নবিশ হওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। থাকা উচিতও না।

 

শ্রীপর্ণা: আরেকটা কথা। যদিও তোমাদের যা লাইফস্টাইল তার সঙ্গে মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চ মধ্যবিত্তদেরও কোনও তুলনা চলে না। হয়তো বার্তাও পেতে পারে না, তবু পেরেন্টিং নিয়ে একটু শুনতে চাই। কারণ দুজনেই সেলেব্রিটি দুজনেই অত্যন্ত ব্যস্ত, তারপরেও একটা মেয়েকে সুন্দর ভাবে মানুষ করছ। তাই পেরেন্টিং নিয়ে কোনও পরামর্শ--

ডোনা: সানা যখন স্কুলে পড়ত, তখন অন্যান্য মা বাবারা জানে, সাধারণ মাবাবারা মানে সাধারণ বাড়ির বৌ থাকত, আমিও বাড়ির বৌ প্লাস আমি নাচ করি, আমি ওকে টিউশন নিয়ে যেতাম খাওয়া দাওয়া নিয়ে, যারা নর্ম্যাল ঘরের বৌ তারা সময় খুঁজে পেত না, কিন্তু আমি রেগুলার করতাম। মানে সানাকে রেগুলার স্কুলে ড্রপ করতাম, সানা একদিন বলল মা আমি বড়ো হয়ে গেছি, আর স্কুলে ড্রপ কোরো না। তারপরেও নিয়ে আসতাম। আমার ভালো লাগত করতে। তারপর টিউশন থাকলে খাবার দাবার নিয়ে যেতাম। যেদিন বাড়ির খাবার চাইত বাড়ির খাবার বাইরের চাইলে বাইরে থেকে, ওর সঙ্গে দু তিন জন যেত তারা আর্ধেক দিন আসত, আর্ধেক দিন আসত না। মাঝেমাঝে আমাকে এসএমএস করত, ডোনা আজকে আমি ব্যস্ত, যেতে পারব না। কিন্তু আমার প্রোগ্রাম না থাকলে আমি মোটামুটি প্রত্যেকদিন যেতাম। ওকে তুলে নিয়ে এসে বাড়িতে রেস্ট করতাম। মানে আমার টাইমটা আমি ওর সাথেই অ্যাডজাস্ট করতাম। সানা যখন ছোট ছিল তখন আমি পুরোটাই ওর সাথে, মানে আই ইউজ়ড টু এনজয় হার চাইল্ডহুড। রাদার ও কলেজেও প্রথমবার যখন গেল, তখন পুরো ইয়ারটাই আমি সঙ্গে ছিলাম। কারণ মহারাজ ভাবত, একা মেয়ে কীভাবে থাকবে। তাই পুরো ইয়ারটাই একটু ছেড়ে সানার সঙ্গে ছিলাম। দ্বিতীয় বছর সানা এসেছিল নভেম্বর না অক্টোবরে, আমি আর সৌরভ নভেম্বরে গেলাম, সানা তারপর ডিসেম্বরে ফেরত এসেছিল। সানা বলল, মা ফার্স্ট ইয়ার তো কোভিডে গেল, দ্বিতীয় বছরটা মোটামুটি তুমি সঙ্গে ছিলে, থার্ড ইয়ার তুমি আর বাবা এখানে হলিডে করেছ আর আমি ডিসেম্বরে চলে গেছি, এখন আমার ইউনিট শেষ হতে আর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ এপ্রিল মাত্র চার মাস আছে। তুমি আর বাবা প্লীজ় ইন্ডিয়ায় থাকো আমার কাছে এখানে এসো না, গিভ মি সাম মি টাইম। কিন্তু আমরা সেটাও শুনিনি। রাদার সৌরভ একবার সপ্তাহের জন্য ফেব্রুয়ারিতে চলে গিয়েছিল, আর আমি সানাকে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চে মিস করে আমিও মার্চের এন্ডে এপ্রিলে চলে গিয়েছিলাম। আমি এপ্রিল এন্ডে দু সপ্তাহ আগে জাস্ট এই সবে ফিরেছি। মানে ওকে পুরোপুরি ছাড়া হয়নি।

 

শ্রীপর্ণা: মাঝে যে ছিলে না, সেটা কি--

ডোনা: লন্ডনে গিয়েছিলাম সানার কাছে। ইস্টার ভেকেশনে ওর কাছেই ছিলাম।

 

শ্রীপর্ণা: অনেক ধন্যবাদ। তোমার নাচের স্কুলটা একবার দেখব। আমি তো শিল্পী ডোনার কাছেই এসেছি।

ডোনা: হ্যাঁ, দেখাচ্ছি চলো।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে আমার আগ্রহে ঘুরিয়ে দেখালেন নিজের নাচের স্কুল, যদিও তখন  দু'জন ছাত্রী পড়েছিল। ডোনার দুই বাড়ির মাঝখানে প্রমাণাকার সুইমিং পুল। এখানেই সাঁতার শেখানো হয়। সাঁতারের পুল ও নাচের হলঘর বাপের বাড়ির অংশ। প্রশস্ত সেই কামরায় বলভদ্র ও সুভদ্রাসহ স্বয়ং জগন্নাথের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। ওড়িশী নৃত্যকে শুধু শখ বা পেশা নয়, নিজের অন্তরাত্মায় প্রোথিত করেছেন।

মাপা সময়েও আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারের বাইরেও যে কথাবার্তা হল, তা সম্ভব হল ডোনার সহজ নিরহঙ্ককার স্বভাবের জন্যই। সসংকোচে আধ ঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু শেষটায় ফিরলাম সোয়া ঘণ্টা নিখাদ গল্প করার অভিজ্ঞতা নিয়ে।




 

Post a Comment

Previous Post Next Post