ভয়ংকর রাত
চৈতি
দিনটার কথা ভাবলেই কেঁপে ওঠে হিয়ানা। কি করে যে সব হল কিছুই যেন বোধগম্য হচ্ছিলো না তার। সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। অনেক খোঁজ করে পাওয়া গেছে জুয়েল একটা ছেলে। ইঞ্জিনিয়ার। লম্বা চওড়া। হিয়ানাকেও দেখতে দারুণ সুন্দর। বেশ মানাবে দুজনকেই। হিয়ানার মা ভীষণ খুশি। ছোটভাই সবেই বি এ পাশ করেছে। এম বি এর জন্য তৈরি হচ্ছে। ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য এমন একটা ছেলে পেয়ে খুশি তিনিও। বাইশে শ্রাবণ। দিনটা বৃষ্টি মুখর। চারিদিকটা সেজে উঠেছে নানা রঙের ফুলে, আলোয়। সবাই ছুটোছুটি করছে। হিয়ানার মনে ভীষণ একটা চিন্তা কি হচ্ছে কে জানে। বিয়ের নিয়ম রীতি সবটাই পালন হচ্ছে। হিয়ানার কিছুতেই মন নেই।
হিয়ানাকে দারুণ সুন্দর লাগছে সেজেগুজে। একেবারে রাজকন্যার মতো দেখতে। টানা টানা চোখ। লম্বা চুল। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা। ভগবান যেন সবদিক থেকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সানাই বাজছে। চারিদিক ম ম করছে। মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হিয়ানাকে। হঠাৎ একটা শব্দে সবাই একটু থমকে যায়। অপ্রত্যাশিত অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। থেমে যায় সানাই। থেমে যায় সমস্ত শব্দ। গেট খুলে যায়। স্ট্রেচারে সাদা কাপড়ে ঢেকে যে আসে সে আর কেউ নয় গতরাতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে যাকে ভর্তি করা হয়েছিলো ডাক্তার বলেছিলো আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। সে ফিরলো কিন্তু সাদা কাপড়ে ঢেকে। মুহূর্তে পুরো ছবিটাই বদলে গেল। সব তছনছ হয়ে গেল। নিঃস্তব্ধ হয়ে গেল পুরো বাড়িটাই। রাজকন্যার সাজ খুলে নিলো মৃত্যুর সাদা কাপড়। 'মা' নেই। শোকে পাথর হয়ে গেল হিয়ানার ভেতর। তাঁর জীবন যেন থেমে গেল এক ঝটকায়। অনেক বুঝিয়েও আর তাঁকে বিয়েতে রাজি করানো গেল না। ভাইকে মানুষ করার নিজের পায়ে দাঁড় করানোর দায়িত্ব যে তাঁর। কি করে মুখ ফেরাবে সে?