গল্প
রুটির দোকানের সামনের কুকুরটি
গোবিন্দ মোদক
রুটির দোকানের সামনে একটি কুকুর ঘুরঘুর করছিল। মনে আশা — দোকানের মালিক যদি দুই-এক
টুকরো রুটি তার দিকে ছুঁড়ে দেয় তাহলে তার ক্ষুধার কিঞ্চিৎ উপশম ঘটে। কিন্তু দোকানী
না তাকে লক্ষ্য করছিল, না তার দিকে কোনও রুটি ছুঁড়ে দিচ্ছিল। কুকুরটি কিন্তু আশা ছাড়ছিল
না।
এভাবেই
সময় বয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় কুকুরটির নজরে পড়ল – রুটির দোকানের ভেতরে একটি আরামদায়ক
সোফায় শুয়ে আছে একটি আয়েশী বিড়াল। সাদা ধবধবে লোমে ঢাকা বিড়ালটিকে দেখলেই সম্ভ্রম
জাগে। খরিদ্দাররা আসছিল যাচ্ছিল — আয়েশী বিড়ালটি অলস চোখে সেদিকে দেখছিল। কেউ কেউ
আবার যাওয়ার সময় তাকে ঈষৎ আদর করে যাচ্ছিল — এবং সেই মুহূর্তে বিড়ালটি গলায় গড়গড়
শব্দ করে আদর উপভোগ করছিল এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিল। কুকুরটি খিদে পেটে এ সমস্ত
দেখতে দেখতে অবাক হচ্ছিল এই ভেবে যে — কেউ খেতে পায় না, আর কেউ বিলাসী জীবন যাপন করে!
এমন
সময় রুটির দোকানের মালিক বিড়ালটির সামনে এসে একবাটি দুধ-রুটি দিল। বিড়ালটি এদিক
ওদিক তাকিয়ে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুধে দুই-এক চুমুক
দিল, কিন্তু রুটি খেলো না; তারপর বিড়ালটি তার মুখটি তুম্বো করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
দোকানের মালিক বোধহয় বুঝতে পারল যে তার আর খাবার কোনও ইচ্ছা নেই। অগত্যা সে না খাওয়া
খাবারটিকে নিয়ে এসে দোকানের সামনের ডাস্টবিনে ফেলে দিল। মুহূর্তকাল দেরি না করে তড়াক
করে লাফিয়ে উঠে লেজ নাড়াতে নাড়াতে কুকুরটি সেদিকে অগ্রসর হল। ঠিক সেই সময়ই বিড়ালটি
তাকে দেখছিল। বিড়ালটির চোখে ছিল একরাশ অবজ্ঞা আর অহংকার। কিন্তু কুকুরটির তখন সেদিকে
লক্ষ্য করবার সময় নেই — কেন না তার পেটে তখন জ্বলছিল সর্বগ্রাসী ক্ষুধার লেলিহান আগুন।