সুপ্রিয়া মণ্ডল

 দুটি কবিতা

বাস্তবতা


চলছে গুলি, উড়ছে ধোঁয়া, ক্ষমতার এই মিথ্যে শোষণ;

যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শেষে, ক্লান্ত সবাই এখন ভীষণ।


ঝান্ডা ধ'রে মোড়ের মাথায়, উঠছে কথা কথার ফাঁকে;

কোরান, গীতা এক হয়ে যাক বিভেদ ভুলে বইয়ের তাকে। 


রহিম-রামের দ্বন্দ্ব আজও, লড়ছে তুলে আপন জাত;

বন্ধ ঘরের আগল খুলে, সবার পাতে থাকুক ভাত।

 

টান পড়েছে কোষাগারে, নড়ছে টনক জনতার;

তবুও কিছু অন্ধজন, বড়াই করে সভ্যতার।


মানুষ নামের মুখোশ প'রে, যোনির সুখে মত্ত যারা,

ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে, সমাজ বিধান লিখছে তারা।

 

শরীরজোড়া আঁচড় নিয়ে, যে মেয়েটা আজ কাঠগড়ায়, 

সেই মেয়েটাই নিজের হয়ে, প্রশ্ন ছুঁড়ুক বিচারসভায়।

 

যে ছেলেটা আটকে গেছে, দিন যাপনের ঘূর্ণিপাকে,

সেই ছেলেটাই ছুটছে ভোরে, মুছতে বেকার তকমাকে।

 

হারতে হারতে ভুলছে যারা, স্বপ্ন দেখা রোজ রাতে;

কয়েক জোড়া হাত বাড়িয়ে, ভরসা রাখুক সেই হাতে।

 

ঈদের চাঁদ হোক, বা, পূর্ণিমার; সালমা, সরমা যাক মিশে,

বহুদিনের স্বপ্ন দেখা যুদ্ধহীন এক নতুন দেশে।

 

ভালবাসার জোরেই চলুক ঘরে ঘরে পুজো, নামাজ;

মনুষ্যত্বকে সঙ্গী ক'রেই বদলে যাক এই ধূসর সমাজ।

 

সিরিয়া থেকে বলছি

 

বুলেট, বেয়নেট, বিস্ফোরণের শব্দে ভরা

সিরিয়া থেকে বলছি—

সকালের সূর্য যেখানে ঢাকা পড়ে বোমার ধোঁয়ায়,

আর বাতাসে ভাসে বারুদের টাটকা গন্ধ,

বহুদিন যেখানে যায়নি দেখা নীল রঙের আকাশ...

মেয়েদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন সেখানে

আটকে থাকে জানালার গরাদে;

প্রেম কারফিউ-এর জালে বন্দি,

যেখানে কামান, ট্যাঙ্কের চাকায় পিষ্ট হয়

ভয়হীন ভোর আর জ্যোৎস্না-রাতের অলীক ছবি।

তবুও সাহস ক'রে আশা রাখি,

একদিন বন্দুকের বদলে সবার হাতে থাকবে বই,

গুলিবৃষ্টি নয়; বৃষ্টি শেষে ইন্দ্রধনুতে সাজবে সিরিয়া।

রঙ-তুলি নিয়ে রাস্তায় বেরোবে শিশুরা—

ঘরে ঘরে শোনা যাবে সঙ্গীতের মূর্ছনা।

যুদ্ধ-দেশ ভ'রে উঠবে রঙিন ফুলের সওগাতে।

হ্যাঁ, আমি সিরিয়া থেকেই বলছি....



এই বধির প্রদেশে

 পত্রদীপ

 

প্রত্যেক ধর্ষিতার বুকে শ্রাবণের মেঘ

সুবিচারের আকুতিতে সাঁতার কাটে

পেরোতে পারে না ত্রাসের বলয়

পাশবিক মুখের কঠোর চাহনিতে

থমকে থাকে বিধ্বংসী সাইক্লোন

 

কোনো এক দুঃসাহসী টপকায় ত্রাসের আগল

চিৎকার করে সে ধর্ষিতা খটখটায় আইনের দরজা

 

এই বধির প্রদেশে চোখবাঁধা আইনের স্ট্যাচু

আঁচলের কান্না আঁচলেই থাকে

ক্ষমতার লোনা ঢেউ আছড়ায় আইনের অলিন্দে

অসহায় ধর্ষিতা দেখে গাঢ় নুনের আস্তরণে

ক্ষয়ে যাওয়া কাঠামোর অন্তর্জলি যাত্রা


Post a Comment

Previous Post Next Post