গ্রন্থালোচনা : মার্কিন মুলুকের গপ্পো (বুধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়) : শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

গ্রন্থালোচনা

মার্কিন মুলুকের গপ্পো 

বুধাদিত্য বন্দোপাধ্যায় ।। প্রকাশক: পত্রাবলী ।। মুদ্রিত মূল্য: ১০০ টাকা 

আলোচনা : শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় 

লেখক বুধাদিত্য বন্দোপাধ্যায় ইঞ্জিনিয়ারিং ও উচ্চশিক্ষার পর বাইশ বছর দেশের বাইরে। বর্তমানে আমেরিকার নিউ জার্সির বাসিন্দা ও পেশায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। কিন্তু শিকড়ের টানে লিখেছেন একগুচ্ছ বাংলা গল্প নিজের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে। মোট ১১টি গল্প আছে এই সংকলনে যেগুলোকে ঠিক গল্প না বলে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা বা কয়েকটি ক্ষেত্রে বড়জোর রম্যরচনা বলা যায়। মুক্ত গদ্য বললে বোধহয় সবচেয়ে সুবিধা, কারণ ‘মুক্ত’ বলতে কে কী বুঝবে বা বোঝাবে তা নিয়ে বিস্তর বিতর্কের অবকাশ আছে।

প্রথম গল্প ‘আমেরিকার দুর্গাপূজা’-র বিষয়বস্তু হল আমেরিকার দুর্গাপূজা হল সে দেশে বাঙালী সংগঠন, সাংস্কৃতিক কর্মসূচী কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেই রাজনীতির হালহকিকত। কিন্তু বিষয় বুঝে ওঠার আগেই বিষম হোঁচট খেলাম বানান, অনুচ্ছেদ বিভাগ, যতি এমনকি বিভক্তি চিহ্নের দুঃসাহসিক ব্যবহারে। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি। এতে পড়ার গতি প্রথম দিকে রুদ্ধ হলেও এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে একবার গল্পে ডুব দেওয়া গেলে মন্দ লাগবে না, বরং পড়ার আগ্রহ তৈরি হবে।

দমফাটা হাস্যরস না থাকলেও উপস্থাপনা সরস। লেখাটিকে সার্থক রম্যরচনা বলা যায়। ওদেশের বাঙালী সমাজ সম্বন্ধে, দুর্গাপুজো থেকে সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রচ্ছন্ন রেষারেষি সম্পর্কে এই স্বল্প পরিসরেও এক ঝলক জানা যায়। জানা যাবে উচ্চবিত্ত এই প্রবাসী বাঙালীদের স্বদেশ চিন্তা সৌরভের দলে ফেরা, রাহুলের অধিনায়কত্বের মেয়াদ, মন্দার বাজারে ডলারের বিনিময়ে বেশি টাকা না কম, স্কচ ও ইলিশের দাম বাড়বে না কমবে – এই জাতীয় অগভীর জাগতিক ভোগবাদেই সীমিত। দেশে অর্থপূর্ণ অবদান রাখা যাবে কিনা, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভারতের পক্ষে অনুকূল কিনা, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সংকট কাটবে কিনা ইত্যাদি ভেবে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা তেমন মন ভারাক্রান্ত করে না। রসিকতার ছলে লেখক এই অন্তঃসারশূন্য দেখনদারির প্রতি কটাক্ষ করেছেন প্রথম গল্প থেকেই, যার মধ্যে নিজেকেও ছাড়েননি। ‘মন্দা’ বোঝাতে ‘রিসেশন’ শব্দটি ব্যবহৃত এবং সেটাও ইংরেজী হরফে, কখনও বা ক্যাপিটাল লেটারে যেটা চোখে লাগছিল।

          দ্বিতীয় গল্প ‘বিদেশ ভোজন’। বেশ মজার। রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে গ্রাহক হয়েও লেখককে বার্গার ও চীজ় নিয়ে এতরকম প্রশ্নবাণের সম্মুখীন হতে হয়, যে দাম মেটানোর সময় সুযোগ বুঝে পেমেন্ট মোড নিয়ে অনুরূপ নানা বিকল্প দিয়ে প্রশ্ন করে বদলা নেওয়ার মজার একটা ঘটনা। বৈশিষ্ট্যে ছোটগল্প ও অণুগল্পের মাঝামাঝি, কিংবা কোনওটাই নয়। আরেকটা রম্যরচনা।

একই কথা খাটে ‘বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট’ সম্পর্কে। বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কীরকম নাকাল হতে হয়েছিল এবং সেটাও যে বন্ধুরা বিশ্বাস করেনি, তার সরস বর্ণনা। বানান ও লিখন রীতির ভুল পাঠে বিঘ্ন না ঘটালে কিন্তু গল্পটা ভালোই।

তৃতীয় গল্প ‘বাংলার মাস্টার’। এই প্রথম একটি ছোটগল্পের আভাস পাওয়া গেল এবং সেটাও ভৌতিক রহস্যের ছলেও একটি গভীর বার্তা দিয়ে। বাংলার লিখনরীতি থেকে কিছুটা বিচ্যুত হলেও বার্তা অব্যর্থ: “আমাদের ছোটবেলায় বাড়ির দেয়াল এ মনীষী মহাপুরুষদের ছবি, বসার ঘরে বইএর  আলমারি থাকতো স্টেটাস দেখানোর জন্য। আজকাল সমৃদ্ধশালী বাঙালিদের বাড়ি  এতোই ছোট যে সেখানে মনীষী মহাপুরুষদের জায়গা হয় না, বইয়ের আলমারির ও জায়গা হয় না। আমরা অর্থ উপার্জন করে আজকাল রেস্তোরাঁ গিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে খাবার খাই, সিনেমা হলে গিয়ে ১ হাজার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখি, কিন্তু তাও বাঙালিরা এতো গরিব যে ৫০০ টাকা দিয়ে একটা ভালো বই কিনতে ৫ বার ভাবি।” যাঁর জবানিতে কথাগুলো বলা তিনি সদ্যপ্রয়াত এক স্কুল শিক্ষক। পাঠকের চমক লাগবে।

‘ব্যাংক বিভ্রাট’ আমেরিকার ব্যাংকিংএ জটিল নিয়ম কানুন স্থূলবুদ্ধির কর্মীদের কাণ্ডজ্ঞানের অভাব ভ্যানতাড়া ইত্যাদির ছবি সার্থক ও সরস ভাবে তুলে ধরলেও বন্ধুর অ্যাকাউন্টে জমা না নিতে চাওয়া চেকটা শেষ পর্যন্ত কীভাবে জমা হয়ে গেল, তা একদম পরিষ্কার হল না। গল্প পড়ে মনে হল লেখক নিজের পরিচয় বন্ধুর নামে দিয়েছিলেন, কিন্তু যারা এত সাবধানী তারা বারবার লেখককে দেখে ও তার ব্যাংকে যাওয়ার কারণ জেনেও কীভাবে মেনে নিল বোঝা গেল না। আবার এও হতে পারে, অন্য শহরে অন্য ব্যাংকে বা ভিন্ন শাখায় গিয়ে জমা করেছিলেন। কিন্তু কোনওটারই ইঙ্গিতমাত্র নেই। ব্যাংক বিভ্রাটের সংবাদে বিক্ষুব্ধ বন্ধুর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করতে করতে হঠাৎই চেক জমা করার বিষয়টা বিবৃত। আরম্ভ ও বিস্তার যথেষ্ট উপভোগ্য লাগছিল, কিন্তু দুধ ঘন হতে হতেও শেষে ছানা কেটে গেল।

‘অবুঝ মা’ গল্পটিও একটি বার্তা দেয়। মা বাবার ভালোবাসা সহজলভ্য তাই মূল্য নেই, বিদেশে বহু মানুষের কাছ থেকে কষ্টার্জিত মনোযোগ বা ‘এটেনশন’(?) বেশি দামী।

‘তিনটি বিয়ের গল্প’ তুলে ধরেছে বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে সরে গিয়ে ভারতের অন্যান্য ভাষাভাষীদের আড়ম্বর নির্বিচারে গ্রহণ করাকে। এরকম আমরা প্রতিনিয়ত বাংলা টিভি ধারাবাহিকে, এমনকি স্বচ্ছল প্রতিবেশীর বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ করছি। কিন্তু এর নামই যে Big Indian Wedding, তা বুধাদিত্যের লেখায় জানলাম। বাস্তবিক এমন Designer বিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। তবে বিয়েতে আচার সংস্কারের বদলে দেখনদারির চল মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলেও পঞ্জিকা থেকে বিয়ের দিনক্ষণ তিথি খুঁজে দেখা বন্ধ হয়ে গেছে বলে এখনও জানি না। অবশ্য বিয়ের দিনগুলোতে অনুষ্ঠানগৃহগুলির একটাও ফাঁকা দেখিনি, ফলে সেইসব ‘বিয়েবাড়ি’র বুকিং না পেয়ে তিথি-লগ্ন উপেক্ষা করে ‘বিগ ইন্ডিয়ান ওয়েডিং’-এর ফটোশ্যুট চলে কিনা জানি না। পড়তে মজাই লাগে।

‘করোনা কালের কাহিনী’ গল্প নয়, গল্প অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিছু উপলব্ধি। কিছু সরস বাক্য এখানেও মিলবে।

‘প্রবাসী বাঙালীর সরস্বতী পূজা’ হল পুনরায় একটি নীতিকথা। কথোপকথনের মাধ্যমে বাঙালীর সরস্বতী পুজোর বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য, বিধেয় কী হওয়া উচিত তা নির্ধারণের চেষ্টা।

পরের গল্প ‘ফান্ডরেইসিং এর ফ্যাসাদ’। ভেবেছিলাম ত্রুটিগুলো সবশেষেই একেবারে সংক্ষেপে উল্লেখ করব। কিন্তু এই গল্পে যতি চিহ্ন ও সংলাপ সাজানো এমন ‘ফ্যাসাদে’ ফেলে দেয়, যে বেশ কষ্ট করে বুঝতে হবে কে কোন কথাটা কোন প্রসঙ্গে বলেছে। ন্যারেশনের মাঝে হঠাৎই ভিন্ন প্রসঙ্গের সংলাপ এসে বসেছে, যে বিভ্রাট ‘ব্যাংক বিভ্রাট’ গল্পেও বিস্তর। তবে সেখানে আমেরিকার ব্যাংকিং ব্যবস্থার ছবি কিছুটা পাওয়া যায়। এই গল্পের শুরুতেই ফ্যাসাদে পড়তে হল। তার ওপর মাঝে মাঝে ইংরেজি হরফে লেখা, কোনোটা আবার অযথাই ক্যাপিটাল লেটারে। আমফানকে ‘এমফান’ লেখার কারণ দুর্বোধ্য। সামাজিক কর্তব্য প্রদর্শনের জন্য ফান্ড রেইসিং যখন লেখকের বুদ্ধি নয়, বন্ধুর প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন তেমনও নয়, তখন এর জন্য বিবেকের দংশন, আর সেই দংশনে কমিউনিজ়ম ইত্যাদি টেনে আনা অপ্রাসঙ্গিক লাগছিল। কিছু নৈতিক দ্বন্দ্ব দেখানোর প্রয়াস আছে যা ভাষার ব্যকরণগত দুর্বলতায় কোনও বার্তা দিতে পারেনি। বিত্তবান প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি খোঁচা আছে, কিন্তু বিত্তহীন সমাজের কোনও প্রতিনিধিকে এক ঝলকও দেখা যায় না। এই লেখায় কেন, কোনও গল্পেই দেখা যায় না। লেখকের দেখার পরিসর সম্ভবত তাঁর এলিট বন্ধুবৃত্তেই সীমিত। তবে সমাজচিত্র হিসাবে এরও তাৎপর্য আছে।

শেষ গল্প ‘রাজবন্দী’ সাদামাটা হলেও শেষে হাল্কা চমক সহকারে একটা গল্প খাড়া করতে পেয়েছে। কিন্তু এটি পড়তে গিয়েও পূর্বানুরূপ সমস্যায় শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়েছে কার সংলাপ কোনটা তা বুঝতে গিয়ে। একই অনুচ্ছেদে পরপর কোটেশন সহ বা ছাড়াই দুই ব্যক্তির সংলাপ দিব্যি সহাবস্থান করে আছে। এই গল্পে লেখক 'আমি' করে উত্তম পুরুষে লেখেননি, প্রথম পুরুষে একটি চরিত্রের করুণ পরিণতি সঙ্গে একটা ভবিষ্যৎবাণীর সমাপতন ইঙ্গিত করেছেন। মার্কিন মুলুকে করোনার ফাঁড়া যখন কাটিয়ে উঠেছেন, তখন ঐকান্তিক কামনা, লেখক দীর্ঘজীবী হোন।

 এরপর যেটা না বললে লেখকের সৃজনী ক্ষমতা ও গল্পভাণ্ডারকে ইচ্ছাকৃত বিপথগামী হতে দেওয়া হবে, আসছি সেই আপাত অপ্রিয় প্রসঙ্গে। অজস্র বানান ভুলের পাশাপাশি বিভক্তি চিহ্নের গোলমাল লক্ষ্য করার মতো। সোমকদাকে না লিখে লেখা আছে ‘সোমকদা কে’, জামাকাপড়ের বদলে ‘জামাকাপড় এর’ লেখা। একবার হলে বুঝতাম অনবধানতা, কিন্তু আগাগোড়াই এই ভ্রান্তি বিরাজ করলে মনে হয়, বাংলার দ্বিতীয়া বিভক্তি যে হিন্দীর মতো মূল শব্দ থেকে পৃথকভাবে বসে না, একসাথে লেখা হয়, সেই ধারণা লেখকের নেই। মোবাইলে বাংলা লিখতে গেলে প্রেডিক্টিভ টেকস্টের জ্বালায় অনেক বানান ও বিভক্তির অশুদ্ধ প্রয়োগ এখন প্রায় ‘সিদ্ধ’, কারণ বাংলা ইউনিকোড সহ অধিকাংশ বাংলা সফ্‌ট্অয়্যার বাংলাদেশের অবদান, যেখানে বাংলাভাষা ও বানান অনেকটাই বাংলাভাষার মান্য ধারা থেকে বিচ্যুত। বুধাদিত্য কি এতখানি মোবাইলে লিখেছেন? তাহলে কিন্তু অবাক হতে হয়!

তবে চলভাষে লেখার কারণে এতক্ষণ ‘এতক্ষন’ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু পরাকে বারবার ‘পড়া’ লেখাটা ভীষণ চোখে লাগছিল। অ্যাক্ট, অ্যাটলিস্ট অ্যাটেনশন -- এই শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘এক্ট’, ‘এটলিস্ট’ বা ‘এটেনশন’, কিংবা দেওয়া নেওয়ার জায়গায় ‘দেয়া’ ‘নেয়া’ যদি চলভাষের নিজস্ব অভিধানে থেকেও থাকে, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী ও মান্য বাংলার চর্চাকারী হিসাবে এই বানানগুলোতে বিশেষ অস্বস্তি লাগছিল। আরবী ভাষায় ভেঙে ভেঙে বানান লেখার রীতি প্রচলিত যার দ্বারা ওপারের বাংলা প্রভাবিত; কিন্তু আমাদের উচ্চারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া পৌঁছানোর চন্দ্রবিন্দু বাদ গিয়ে ‘পৌছানো’ লেখা হয়েছে একাধিকবার। জিজ্ঞাসাকে জিজ্ঞেস বা জিগ্গেস লিখেও বোঝানো যায়, কিন্তু ‘জিগেস’ পড়তে গিয়ে একটু হোঁচট খেতে হচ্ছিল। ণত্ববিধান আগাগোড়াই উপেক্ষিত। যেমন ‘এতক্ষণ’ প্রায় সর্বত্র ণত্ববিধান অমান্য করে ‘এতক্ষন’ রূপে লিখিত। অথচ কোথাও আবার ভুলভাবে ণত্ব প্রযুক্ত; যেমন ধরনকে ‘ধরণ’ লেখা। এই ভুলগুলো বহু লেখকই করে থাকেন, প্রুফ রীডার ঠিক করে দেন।

আবার বাংলা কাহিনীতে প্রথম বোঝাতে ১ম একেবারেই অপ্রচলিত। এই সংক্ষেপীকরণ গণিত, বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রবন্ধেও চলে, কিন্তু অধ্যায় সংখ্যা বোঝানো ব্যতিরেকে ১ম ২য় ৩য় এগুলো ফিকশনাল গদ্যের দেহে একটু বেমানান লাগে। তাছাড়া অনুচ্ছেদ ভাগ ও যতিচিহ্নে অসঙ্গতির ফলে কোনটা কার উক্তি ও কোন প্রসঙ্গে বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়। বাংলা ফিকশনের প্রচলিত ধারায় ইংরেজী বা বিদেশী শব্দগুলো বাংলা লিপিতেই লেখা হয়ে থাকে। তাই এই বইয়ে অযথা কিছু শব্দ ইংরেজী ও বিশেষ করে প্রায়শ বড় হাতের অক্ষরের ব্যবহার বেশ অস্বস্তিকর লাগে। এছাড়া কোটেশন চিহ্নের অসঙ্গতিও পাঠে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল।

আমরা যারা বহু বছর ধরে লিখছি, তারাও এখনও বানান ভুল করি কখনও অজ্ঞতায়, কখনও অনিশ্চয়তায়, কখনও অনবধানতায়। বুধাদিত্যের এটাই প্রথম বাংলা বই। উপরন্তু তিনি আমেরিকা প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তির ছেলে। তাঁর পক্ষে এই জাতীয় ত্রুটি বিচ্যুতি অপ্রত্যাশিত নয়, কিন্তু প্রকাশকের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। হয়তো লেখক বইটির নির্মাণ ব্যয় বহন করেছেন। আর সেই কারণেই প্রকাশনার দায়িত্ব কিন্তু আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়। গপ্প-র বদলে ‘গপ্পো’ বা বলল-কে ‘বললো’ লেখা লেখকের পছন্দ ও নিজস্বতা বলে গৃহীত হতে পারে, কিন্তু পরব-কে ‘পড়ব’ লিখলে সেটা ভুল যা প্রকাশনার অবশ্যই সংশোধন করে দেওয়া উচিত ছিল।

উপযুক্ত তত্ত্বাবধান ও পরামর্শ পেলে এবং অবশ্যই লেখক তা খোলামনে গ্রহণ করলে মোটের ওপর একটি সম্ভাবনাময় কলম বুধাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের। তিনি চলতি প্রজন্মের মার্কিনবাসী ছেলে হয়ে বাংলায় লিখছেন। তাঁর আবেগ, উৎসাহ ও কলম থুড়ি কী বোর্ড যেন থেমে না যায়।  


Post a Comment

Previous Post Next Post