শৈশব

শৈশব

চন্দ্রাণী গুপ্ত ব্যানার্জি

 

()

 

আজ সকালে  কাকার ফোনটা এল বেশ অনেক দিন পর যোগাযোগটা ক্ষীণ হয়ে গেছিল মিথ্যে বলব না যোগাযোগটা আমার তরফ থেকেই কমে গিয়েছিল প্রথম প্রথম কাকা ফোন করত আজকালকার এসএমএস কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের যুগেও চিঠি লিখত ফোনেই কথা বলতাম চিঠির উত্তর লিখতে বসাতে আমার ভীষণ আলসেমি তাই চিঠি লেখা থেকে যোজন খানেক দূরত্ব বজায় রাখতাম আমার গ্রামের বাড়ির সমস্ত খবরা খবর কাকার চিঠি মারফত জানতে পারতাম গ্রামের বাড়িতে কাকা এখনো থাকেন প্রায় পঁচাত্তরের এর কাছাকাছি ওনার বয়স কাকিমা প্রায় সময়ই অসুখে ভোগেন একমাত্র মেয়ে বুলির বিয়ে কাছাকাছি দিয়েছেন বুলিকে দেখিনি আজ কত বছর হয়ে গেল আমার সেই ছোট্ট বোনটা... নাদুস নুদুস ...গোলগাল ওই আমার খেলার পুতুল ছিল বুলির কথা মনে পড়তেই নিজের অজান্তে হেসে উঠলাম যখন আমার বিয়ে হয় তখন বুলি কত ছোট ছিল সৌমেনও বুলিকে খুব ভালোবাসতো একটা ছবিও বোধহয় আছে সৌমেনের কোলে বসা বুলি ভাবতেও অবাক লাগে সেই বুলি এখন ঘোর সংসারী দুই ছেলে-মেয়ের মা দাপিয়ে সংসার করে বেড়াচ্ছে কাকা চিঠি লেখে না আজ বহুদিন গ্রামের বাড়ির সাথে আমার যোগাযোগের মাধ্যমটা ছিল কাকার লেখা চিঠিগুলো হাতের আঙ্গুলগুলো কাকাকে আজ আর  সঙ্গ দেয় না  অবাধ্যের মতো কাঁপতে থাকে তাই লেখাগুলো হয়ে ওঠে দুর্বোধ্য থেকে দুর্বোধ্যতর ধীরে ধীরে গ্রামের ছবিগুলো আমার দৃষ্টিপট থেকে ঝাপসা হয়ে গেছে মা-বাবার থেকে কাকার আদুরে ছিলাম বেশি যত আব্দার ছিল কাকার কাছে কাকা ঘোড়া সাজত আর আমি হতাম  তার সওয়ারী ভাই একটু বড় হবার পর--- সে আর  বুলিও এর আনন্দ উপভোগ করেছে কিন্তু কাকার রাজকন্যা আমিই ছিলাম মা কিংবা কাকিমা আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে কখনো কোন তারতম্য করেননি কাকিমা নারকেলের নাড়ু বানালে সবার আগে আমি আর ভাই পেতাম তারপর বুলি আবার মায়ের হাতে বোনা সবচেয়ে সুন্দর সোয়েটারটা বুলির জন্য তোলা থাকতো আমার বাবার ছিল বিশাল ব্যবসা নিজের পরিশ্রমের বিন্দু বিন্দু দিয়ে বাবা নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন ঠাকুরদার সম্পত্তি সমান ভাগে ভাগ করে কাকাকে দেন কাকা কখনো বাবার মুখের ওপর টু শব্দটি বলেননি বিশ্বাস করতেন দাদা যা করবেন তাতে তার মঙ্গলই হবে আর বাবাও ওনাকে কখনো নিরাশ করেননি বাবা গ্রামের বাড়ির পাট চুকিয়ে ব্যবসার খাতিরে কলকাতায় চলে আসেন কিন্তু গ্রামের বাড়ির অংশটা তিনি বিক্রি করেননি বাকি অংশে কাকা কাকিমা এখনো থাকেন ছেলেবেলায় আমরা পুজোর সময় কলকাতায় থাকতাম না পঞ্চমীর দিনে একদম গ্রামের বাড়ি পৌঁছে যেতাম তারপর লক্ষ্মী পুজো সেরে কলকাতায় ফিরতাম চোখ বুজে সেই স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে গেছিলাম আমার সেই গ্রামের বাড়িতে একটা বাক্সে জমিয়ে রেখে ছিলাম কাকার লেখা সেই পুরনো চিঠিগুলো সেগুলি আমার পাশে রাখা যেই না চৌখাট পেরিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে যাব তখনই সৌমেনের গলার আওয়াজ পেলাম

---" কি হল সবু? কি ভাবছো চোখ বুজে? নতুন শাড়ি, নতুন গয়না কিনবে বুঝি ?"

 চোখ খুলতেই দেখলাম সামনে দাঁড়িয়ে  সৌমেন গলার টাইটা বাঁধার চেষ্টা করছে সৌমেন আমায় আদর করে "সবু" ডাকে আমার ভালো নাম সর্বানী যাহোক আমি একটু বিরক্তি প্রকাশ করলাম

 বললাম ---"নতুন শাড়ি নতুন গয়নার কথা কেন ভাববো আমার প্রচুর আছে"

---" তাহলে কিসের কথা চোখ বুজে ভাবা হচ্ছিল শুনি ?"

ছোট্ট করে বললাম ---"পলাশপুর"জানি সৌমেন পলাশপুরের নাম শুনে আশ্চর্য হবে তাই ছোট্ট জবাবেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলাম

---" তা হঠাৎ পলাশপুর! এত বছর পর!"

---" কাকা ফোন করেছেন আজ সকালে "

---"কেন ?"

---"পলাশপুর যেতে বলছে"

 ---"তুমি কি যেতে চাও সবু?"

একটু সময় নিলাম জবাব দিতে তারপর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম

---" তোমায় আমি কখনই কোন কিছুতে বাঁধা দিই না সবু শুধু একটা কথাই বলি তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি বিচারবুদ্ধি সম্পন্না একজন মানুষ যা করবে, মস্তিষ্কের সাথে সাথে হৃদয়েরও সাহায্য  নিওকবে যাবে আমায় বলে দিও টিকিট কাটতে হবে তো! "

 

()

 

এবারের দুর্গাপূজা টা আমাদের, বিশেষ করে আমার পলাশপুরে কাটবে তা ভাবতেই  মনে কেমন একটা শিহরণ জাগছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না মা তো আগেই চলে গেছিলেন তারপর বাবার মৃত্যুর পর পারলৌকিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন হওয়ার পর আর পলাশপুর মুখো হইনি কাকা বহুবার অনুরোধ করেছিলেন অন্তত পুজোর দিন গুলো যেন আমরা সবাই মান অভিমান ভুলে পলাশপুরে কাটাই নাহ্... আমি জেদি, একগুঁয়ে মান-অভিমান ভুলতে পারিনি শুধু কি আমি?  মান-অভিমান তো  অনিও ভুলতে পারেনি ওকে আমি কখনোই ক্ষমা করতে পারবোনা অনি মানে আমার ছোট ভাই...  অনির্বাণ বসু দিল্লিতে সপরিবারে থাকেবেশ কয়েকটা বছর অনি আর আমি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আমি আমার রাগ ভুলতে পারিনা উল্টো প্রান্তে অনিও  হিমালয় পর্বতের মত তার সিদ্ধান্তে অটল আমার ভাইফোঁটা রাখি উৎসবগুলি অনি বিহীন ভাবে কেটে গেছে বহুকাল ভবিষ্যতেও একই রকম ভাবে কেটে যাবে কই অনির ওতো কখনো আমার কথা মনে পড়ে না আমাদের একসাথে বড় হয়ে ওঠার দিনগুলো... শৈশবের দিনগুলো! সৌমেন এর সাথে আমার বিয়েটা বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছিলেন বেশ জাঁকজমক ভাবে পলাশপুরের বাড়িতেই বিয়েটা হয়েছিল কলকাতায় ব্যবসা বিস্তার করলেও বাবা কখনোই  ওনার শেকড়টা ভুলে যাননি যাইহোক, আমার বিয়েতে বাবা কোনো কিছুরই কার্পণ্য করেননি সোনার গয়নায় মুড়িয়ে দিয়েছিলেন আমায় পাত পেড়ে লোক খেয়েছিল  সে   স্মৃতিগুলো এখনো আমার মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল আমায় যেমন আমার বাবা  অঢেল দিয়েছিলেন , অনির  বউ পৃথাকেও  উনি কিছু কম দেননি কিন্তু কোথাও অনির মনে ধারণা জন্মে গিয়েছিল যে বাবা দিদিকে পক্ষপাতিত্ব করে বেশি বেশি দিয়ে গেছেন মা-বাবা যতদিন বেঁচেছিলেন মুখে সে কথা প্রকাশ করতো না কিন্তু আচার-ব্যবহারে তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠত বাবার মৃত্যুর আগে কোন  উইল করে যাননি শ্রাদ্ধশান্তি মিটে যাওয়ার পর পলাশপুর থেকে ফিরে আসার আগের দিন সন্ধ্যায় আমরা সবাই বৈঠকখানায় বসেছিলাম কাকা কাকিমা সবাই ছিলেন সেখানেই সম্পত্তি নিয়ে অনি আর আমার মধ্যে প্রচন্ড ঝামেলা হয় অনির বক্তব্য অনুযায়ী, আমি  অনিকে ঠকিয়ে বাবাকে দিয়ে অনেক ধনসম্পত্তি আমার নামে লিখে নিয়েছি অতএব আমার আর কোন কিছুতেই কোন অধিকার নেই আমিও ছেড়ে দেবার পাত্রী নই কেনই বা লাখ লাখ টাকার বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে দেব? দিলাম অনির নামে মামলা ঠুকে যতদিন না মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে ততদিন অনি জমি-জমা ,ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কিছু বিক্রি করতে পারবে না

 

()

ট্রেনে বসে  পুরনো সেই সব ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল আমি, সৌমেন আমার ছেলে বাবলু পলাশপুর যাচ্ছি কখন যে ট্রেন তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছে তা বুঝতেও পারিনি যাত্রীদের কোলাহলে ঘোর কাটল বাক্স-প্যাটরা নিয়ে স্টেশন চত্বরে নামলাম পলাশপুরের বাতাসে কেমন যেন একটা মন ভালো করা গন্ধ কতদিন যে তার স্পর্শ পাইনি আজ প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলাম স্টেশন থেকে গাড়িতে ঘন্টাখানেকের পথ কাকার বাড়ি  আমার ছোটবেলার পলাশপুর ... পথের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে, পরতে পরতে স্মৃতির ঝাঁপি একটু একটু করে খুলছে সময়ের সাথে সাথে পলাশপুর কিছুটা বদলেছে গাড়ির ড্রাইভার খুব যত্ন করে আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিল একটা সময় আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল  বারো মাসে তেরো পার্বণ আমাদের লেগেই থাকত ঠাকুরদালানে দুর্গাপূজা হত বাবা কলকাতায় ব্যবসার খাতিরে চলে যাওয়ায় আমাদের ভাগের দালানের ঘরগুলো আর সেভাবে ব্যবহৃত হতো না কাকার পরিবার তাদের  অংশের নিজের দালান ঘরে থাকতেন আজও আমাদের দালান ঘরগুলো তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে বাড়িটাতে ঢুকতেই গেটের ধারে দুটো বাঁধানো বসার জায়গা ছিল সেগুলো এখন আর নেই ভগ্নপ্রায় অবস্থা তাদের পাশের বকুল ফুলের গাছটা কিন্তু একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কত ফুল কুড়িয়েছি , তারপর মালা গাঁথতাম আমাদের আসার শব্দ পেয়ে কাকা শশব্যস্ত হয়ে গেটের কাছে চলে এলেন আজ কত বছর পর কাকাকে দেখলাম মানুষটার মুখের হাসি আন্তরিকতা আজও অমলিন আমায় দু'হাতে জড়িয়ে ধরলেন কোথাও যেন আমি আমার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে কাকার মাঝে  ফিরে পেলাম

 

()

ঘরে ঢুকতেই প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খেলাম আমার চক্ষু স্থির নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল অনিকে এখানে, পলাশপুরে দেখব তা স্বপ্নেও ভাবিনি অনির হাবেভাবে স্পষ্ট যে আমাকে এখানে দেখবে তা আশা করেনি বাক্যবিনিময় না হলেও হৃদয়ে  যে প্রচণ্ড জোরে  দামামা বাজছিল তা বুঝতে পারছিলাম অনিও সপরিবারে পলাশপুরে এসেছে  বুঝতে পারছিলাম এসব  আমার কাকার মস্তিষ্ক- প্রসূত আমার পরিবারের সঙ্গে অনির  পরিবারের টুকটাক কথাবার্তা হল অনির  মেয়ে টুবাইকে এই প্রথম দেখলাম জড়োসড়ো হয়ে পৃথার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল ট্রেনে সফর করে খুব পরিশ্রান্ত লাগছিলো তাই কাকিমা বুলি আমাদের রাতের খাবারটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিল হ্যাঁ ,বুলি তার ছেলে মেয়েরা আমরা আসবো জেনে কয়েকদিনের জন্য কাকার বাড়ি চলে এসেছে কাকার ঘরে যেন চাঁদের হাট বসেছে রান্নাঘরের পাশের বড় ঘরটায় সবাই মাটিতে খেতে বসে পড়লাম সেই ছোটবেলার মতো অনি খেতে খেতে আড়চোখে আমায় দেখছিল আমিও চশমার ফাঁক দিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করছিলাম বোঝার চেষ্টা করছিলাম ওর ভুড়িটা কতটা স্ফীতকায় হয়েছে রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে যে যার ঘরে শুয়ে পড়লাম ক্লান্ত হওয়ার দরুন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম পরী দুচোখের পাতায় নেমে এলো

আমার আবার বরাবরই ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি  রোজকার মতন প্রাতঃভ্রমণ করতে বেরিয়েছি কাকার বাগানটায় অনেক ফুলের গাছ আমরা মানে... আমি ,অনি , বুলি  আশেপাশের বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পুজোর দিন গুলোতে ফুলবাগানে ভোর বেলায় এসে  ঝুড়ি ঝুড়ি ফুল  তুলতাম  শিউলি ফুলের গাছের নিচে আগের দিন রাতে কাপড় বিছিয়ে রাখতাম পরদিন ভোর বেলায় গিয়ে দেখতাম রাশি রাশি ফুল ছেয়ে আছে এখনও দেখলাম ফুলে ফুলে  চারিদিক ছেয়ে আছে কিন্তু ফুল কুড়োবার বা তোলার লোক কোথায়?  কাল বাদে পরশু ষষ্ঠী এখন আর ঠাকুরদালানে মা সপরিবারে আসেন না শুধুমাত্র রাধাগোবিন্দর নিত্য পুজো করার জন্য ঠাকুরমশাই আসেন দুর্গাপুজার স্মৃতিটা শুধু মনে গেঁথে আছে হঠাৎ শুকনো পাতার উপর কারো হেঁটে আসার শব্দ পেলাম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম আমার পেছনে দাঁড়িয়ে অনি আমরা দুজন দুজনকে অনেক কিছু বলতে চাইছিলাম কিন্তু পারছিলাম না একটা অদৃশ্য দেয়াল আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে যে নিঃশব্দে একসাথে দুজনে বাড়ির পেছনদিককার  বাগানটায় হাঁটতে লাগলাম মনে হল অনন্ত কাল অনি ওর ভারী শরীরটা নিয়ে আর হাঁটতে পারছিল না চোখের ইশারায় কিছুটা এগিয়ে ঠাকুরদালানের সিড়িটায় ওকে বসতে বললাম  বহু বছর পর দুজনে পাশাপাশি বসলাম আমি আর আমার ছোট ভাই অনি সেই ঠাকুরদালান, সেই রাধা মাধবের বিগ্রহ কিন্তু মাঝে কতটা সময় পেরিয়ে গেছে আমরা আমাদের  অহংকার, অর্থ, লোভ, প্রতিপত্তিকে চরিতার্থ করতে গিয়ে সম্পর্কের বাঁধনটাকে আলগা করে দিয়েছিএকে অপরের থেকে কত দূরে চলে গেছি আমরা একই  পিতা-মাতার সন্তান কিন্তু আরো বেশী পাবার  লোভ আমাদের সম্পর্কটায় তিক্ততা ভরে দিয়েছে

--- "দিদি......"

আমার  কানে কে যেন অমৃত সুধা ঢেলে দিল বছরের পর বছর ওই ডাকটা শোনার জন্য অধীর হয়ে থাকতাম ভাইফোঁটার দিন কিংবা রাখি -পূর্ণিমায় যদি আমার ভাইটা একটা ফোন করে একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠলো অতিকষ্টে সেটাকে গিলে ফেললাম

---"বল ভাই "

---"শিউলি ফুল কুড়োবি?"

---" মানে ?"

---"বাগানের  শিউলি ফুলের গাছটার নিচে দেখলাম প্রচুর শিউলি ফুল ঝরে পড়ে আছে কুড়োবি?"

---"তুই ভুঁড়ি নিয়ে পারবি ভাই?"

 আমি হেসে বললাম

---"চল ছোটবেলার মতো রেস লাগাই দিদি"

---"আর দরকার নেই তুই হেরে ভূত হবি"

---" তোরা এখানে!!! তোদের আমি কখন থেকে খুঁজছি"

বুলি শশব্যস্ত হয়ে ঠাকুরদালানে আসে

---"চলে বুলি,  আমরা তিন ভাই বোনে এখন প্রাণভরে শিউলি ফুল কুড়োব  পুজোর ছোট ঝুড়িগুলো নিয়ে আয় চল দিদি"

 বুলি বাধ্য মেয়ের মত  ঝুড়ি আনতে ছুটল লাগাল

 

()

এখন প্রতিবছর  আমরা  সবাই  মিলে পলাশপুরে যাই আমার পরিবার, অনির পরিবার, বুলির পরিবার --- আমরা সবাই পুজোর দিনগুলোতে একত্রিত হয়ে হই হুল্লোড় করি শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে যাই ঠাকুরদালানে মায়ের পুজো  আমরা নতুন করে  শুরু করেছি  কাকা কাকিমাও খুব খুশি আর হ্যাঁ, আমাদের বিষয়সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমার নিষ্পত্তি হয়েছে আমি অনির নামে ঠোকা মামলা তুলে নিয়েছি পৈতৃক সম্পত্তির পুরোটাই আমরা আমাদের দুজনের সম্মতিতে বিক্রি করে দিয়েছি বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া গেছে তার সমস্তটাই  পলাশপুরের উন্নতির কাজে ব্যয় করা হয়েছে মা বাবার নামে একটি বিদ্যালয় হাসপাতাল খোলা হয়েছে আর দুর্গাপুজোর কটা দিন দিন দরিদ্র মানুষদের নারায়ন সেবা  বস্ত্র দান করা হয়

দিনের শেষে এসে আমরা এই উপলব্ধি করেছি যে অর্থ দিয়ে সম্পর্কের অমৃতসুধা কেনা যায় না যতটা অর্থ প্রয়োজন ঠিক ততটাই থাকুক না আমাদের কাছে তার বেশি নয় 

Post a Comment

Previous Post Next Post