পোস্ট-মর্টেম

 পোস্ট-মর্টেম

 

প্রবীর মজুমদার

 


 

উফ্ কী ভীষণ শীত! আকাশের মনে হল, সে একরাশ বরফের মধ্যে শুয়ে আছে সারা শরীরে অপার্থিব যন্ত্রণা যন্ত্রণা মাথাতেও যেন একরাশ অন্ধকার অসীম আক্রোশে তাকে জাপটে ধরে আছে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে দুর্গন্ধ এসে ছিন্ন ভিন্ন করছে তার মস্তিস্কের স্নায়ু

সমস্ত মনের জোরকে কেন্দ্রীভূত করে ধীরে ধীরে চোখ মেলল আকাশ না অন্ধকার গেল না তা যেন আরো কয়েক পোচ কালি মেখে আবির্ভূত হল দুচোখের সামনে হঠাৎ একটা আশংকায় শিউরে উঠল আকাশ সে কী অন্ধ হয়ে হয়ে গেছে? উঠে বসার চেষ্টা করল সে কিন্তু মাথাটা একটু উঁচু করতেই ঠাণ্ডা ধাতব কোনও কিছুর সংগে মাথাটা ঠুকে গেল প্রতিবর্তক্রিয়ায় হাত আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে আসার চেষ্টা করল, কিন্তু এবারও হাত সেই ঠাণ্ডা ধাতব বস্তুতে বাধাপ্রাপ্ত হল আকাশ হাত দিয়ে ছুঁয়ে জিনিসটা কী তা বোঝার চেষ্টা করল সমতল, মসৃণ জিনিসটা শরীরের সংগে সমান্তরাল যেন ছাদটা নীচে নেমে এসেছে পাশের দিকে হাত বাড়াল আকাশ শরীরের দুই পাশেই ঠাণ্ডা মসৃণ ধাতব দেওয়াল দেওয়াল দুটো উপরের সেই ধাতব পাটাতনের সংগে মিশেছে জায়গাটা অপরিসর একটা মানুষ কোন রকমে শুয়ে থাকতে পারে কিন্তু আকাশ এখানে এল কী করে? কেউ কি তাকে এখানে বন্দি করে রেখেছে?পরিবেশ এতো ঠাণ্ডা অথচ তার গায়ে কোন গরম পোশাক--বা নেই কেন? 

আমি কে?সারা শরীরে এত যন্ত্রণা কেন? নানা রকম প্রশ্ন বিক্ষিপ্ত ভাবে উদিত হতে লাগল আকাশের অপসৃয়মান স্মৃতিতে না ভাল করে কিছুই মনে পড়ছে না টুকরো টুকরো কিছু দৃশ্য ক্ষণিকের জন্যে আসছে  আবার মিলিয়ে যাচ্ছে পরক্ষণেই যেমন, এই মুহূর্তে সে দেখতে পাচ্ছে, হাই পাওয়ার বালবের তীব্র আলোর নীচে একটা চেয়েরে কে যেন বসে আছে, আর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকজন সাদা পোশাক পরা পুলিশ পুলিশগুলো একটার পর একটা প্রশ্ন করে চলেছ লোকটার উত্তরে পুলিশগুলো সন্তুষ্ট হতে পারছে না দৃশ্যটা মিলিয়ে যেতেই স্মৃতিতে একটা শূণ্যস্থান তৈরী হল সেই শূণ্যস্থানে ধীরে ধীরে আবির্ভুত হল একটা টেবিলের আবয়ব সেই টেবিলের উপর কম শুইয়ে দেওয়া হয়েছে সেই বন্দী লোকটাকে এক পুলিশ রুলার দিয়ে নির্দয়ভাবে প্রহার করছে তাকে প্রহারের তালে তালে লোকটা কঁকিয়ে উঠছে যন্ত্রণায় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে লোকটা এক সময় জ্ঞান হারাল জ্ঞানই আলো, অজ্ঞানতাই অন্ধকার অন্ধকার মহুয়া মদের মতো চেতনাকে গ্রাস করে ক্রমাগত জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে আকাশের মন উন্মন হয়ে ওঠে তাই দার্শণিকের মত সে বলতে চায়, অন্ধকার দাও, আরো অন্ধকার দাও... পরাজয়ের গ্লানিটাকে ঢাকি কিন্তু কাঙ্খিত অন্ধকার আসে না এত সহজে বরং তার জায়গায় একটা দড়ি ভাস্মর হয়ে ওঠে দড়িটা দিয়ে পা দুটো বেঁধে সেই লোকটাকে এখনহেঁট মুণ্ড উর্দ্ধ পাদকরে শূণ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দড়িটার অন্য প্রান্ত একটা পুলিশের হাতে মাথার ঠিক নীচে জলপূর্ণ একটা বড় বালতি রাখা দড়ির টান হালকা করে দিলে লোকটার মাথা জলে ডুবে যাচ্ছে শ্বাস কষ্টে লোকটা ছটফট করছে লোকটা ভাবছে এত যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যু ভাল কিন্তু মৃত্যুর আগেই দড়িতে টান পড়ছে, আর লোকটার শরীর উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছে লোকটা, কিন্তু প্রাণবায়ুতে ফুসফুস ভরে ওঠার আগেই লোকটার মাথা আবার জলে নিমজ্জিত হচ্ছে 

ছটপফট করে উঠল আকাশ ছুরির এক কোপে দড়িটাকে কেটে লোকটাকে মুক্ত করতে ইচ্ছে হল কিন্তু আকাশ নিজেই তো মুক্ত নয় মুক্তির পক্ষে বিদ্রোহ করবে কী করে সে? বন্দীত্ব যেন ভারী পাথর হয়ে বুকে চেপে বসে আছে পাথরটাকে ঠেলে সরাবার চেষ্টা করল আকাশ কিন্তু শরীর ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়ছে একটা ভয় অজগর সাপের মতন যেন তাকে জাপটে ধরেল এটাই কী মৃত্যুভয়? এমন ভয় এর আগে কখনও আকাশকে এমন আচ্ছন্ন করেনি আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময়েও তার মনে মৃত্যুর কোন ছায়া পড়েছিল না ধরা পড়ার সময়ে কিংবা জেরার সম্মুখীন হয়েও কখনও মন এতটা দুর্বল হয়নি দুর্বলতাই মৃত্যু কে যেন বলেছিল, জো ডর গয়া মর গয়া? কোনও একটা সিনেমাতে কি?কি জানি? এই মুহূর্তে স্মৃতি আবছা হয়ে গেছে! স্মৃতি যেন স্বচ্ছাচারী! নিজের থেকে ধরা না দিলে তার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না 

সেবার, আকাশ যখন কনস্টেবল স্বপন দাসের মাথায় রিভলভার ঠেকিয়েছিল, তখন স্বপনের চোখে একটা ভয়ের অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছিল স্বপনও কি শিরদাঁড়াতে বরফের স্পর্শ অনুভব করেছিল? পুলিশের চোখে মৃত্যুর ছায়া দেখে অট্টহাস্যে ফেটে পড়েছিল আকাশ তীব্র ঘৃণার অভিব্যক্তি সহ ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল সে,  'তোর মতো প্রশাসনের কুত্তাদের গুলি খেয়েই মরতে হবে'

স্বপণ বলেছিল, 'আমি তো হুকুম দাস আপনাদের সংগে আমার কোন শত্রুতা নেই'

প্রত্যুত্তরে আকাশ পার্টিক্লাসে শেখা শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্ব আউড়েছিল, 'শ্রেণী শত্রুর বেতনভুক দাসেরাও শ্রেণি সংগ্রামের অন্তরায়'

স্বপণ আকাশের পা ধরে বলেছিল, 'আমার স্ত্রী আছে, ছোট ছোট দুটো বাচ্চা আছে অসুস্থ মা আছে আমি গরিব মানুষ চাকরী করে কোন রকমে সংসার চালাই আমাকে খুন করলে তারা অসহায় হয়ে পড়বে'

আকাশের মন গলেনি পাথরের মত কঠিন বিশ্বাস নিয়ে সে বলেছিল, 'সে দায় আমার নয় সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেককেই আত্মবলিদান করতে হয় ধরে নে তোর পরিবার সেই লক্ষ্যেই আত্মবলিদান করল' এই বলেই আকাশ ট্রিগার টিপে দিয়েছিল তারপর, একটা অস্ফুট আর্তনাদ, রক্তের লাল, ঘিলুর ধুষরতা... 

আকাশের মনে সেদিন মৃত্যুর বিভৎসতা কোন রেখাপাত করেনি বরং স্বপনের রক্তের লাল রঙে সে মুক্তির সূর্য দেখতে পেয়েছিল অথচ আজ এতদিন পর একটা করুন আবেদন আকাশের কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছে, 'আমাকে মারবেন না, মারবেন না আমি চাকরি ছেড়ে দেব'

স্বপনের কাকুতি-মিনতি আকাশকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি আকাশ নির্বিকার ভাবে বলেছিল, 'ছেড়ে দেবার জন্যে তোকে এখানে ধরে আনা হয়নি তুই উপরওয়ালার নির্দেশে নিরিহ জমি দিতে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীদের উপর গুলি চালিয়েছিলি সুতরাং শাস্তি তোকে পেতেই হবে' 

শাস্তি! এই শব্দটা এখন আকাশের মনে কাঁটার মত বিঁধছে সত্যিই কি স্বপন শাস্তির উপযুক্ত ছিল?স্বপনের মত একটা অকিঞ্চিতকর কনস্টেবলকে হত্যা করা কতটা যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল? না, আকাশের মনে আগে কখনই এই প্রশ্নের উদয় হয়নি নেতৃত্বের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করাকেই বিপ্লবীর প্রধানতম কর্তব্য বলে জেনে এসেছে সে কোন প্রশ্ন করা চলবে না চলবে না কোন তর্ক তর্ক-বিতর্ক-গণতন্ত্র -সব বুর্জোয়াসুলভ আচরণ দলের মধ্যে এই আচরণ যে করবে সেও শাস্তিযোগ্য পরিমল মুর্মু দলের বিধান লঙ্ঘন করে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল অহেতুক খুন খারাপিতে সে আস্থা হারিয়েছিল কমাণ্ডার মহাদেব রেড্ডি তার প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, 'হেতুর তুমি কী বোঝ হে? মার্কস, লেনিন, মাওএসব পড়েছ কখনো? যোদ্ধা হিসেবে কমাণ্ডারের নির্দেশ পালন করে যাও' এই উত্তর পরিমলকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিল না দল ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিল সে কিন্তু এই রাস্তা একমখী আসা যায় খুব সহজে কিন্তু বেরয় শুধু মৃতদেহ পুলিশের বুলেটেও সেই মৃত্যু আসতে পারে, আবার গদ্দারির অপরাধেও আসতে পারে গণ-আদালতে কমাণ্ডার তাঁর সিদ্ধান্ত জানালেন ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখোমুখি করা হয়েছিল পরিমলকে স্কোয়াডের একজন ফায়ারার হিসেবে কমরেড পরিমল মুর্মুর বুকে বুলেট গেঁথে দিতে হয়েছিল আকাশকেও পরিমলের চোখে কি কোন ভয় ছিল? আকাশ তা জানে না আজ পরিমলের সেই শান্ত কালো চোখদুটো আকাশের অশান্ত মনের ক্যানভাসে কেন যেন ফুটে উঠছে সেই চোখে কী আছে?বিদ্রুপ?না কী ঘৃণা?না কি নিছক করুণা? যাই থাক সেই চোখে, এখন সেই চোখদুটো অসহ্য লাগছে আকাশের 'হিংসা শুধু হিংসাই বাড়ায় হিংসার কানাগলি কখনও রাজপথ নয়, তাই না কমরেড?' কানের কাছে কে যেন ফিসফিস করে বলল গদ্দার পরিমল এই কথাই বলেছিল না? না বিপ্লবই মুক্তির একমাত্র পথ রক্তপাত আর হিংসা ছাড়া বিপ্লব হয় নাচিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হল আকাশের কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হল না ভয়ানক ব্যাথা হচ্ছে গলায় একজন পুলিশ জেরা করার সময় গলা নির্মমভাবে টিপে ধরে বলেছিল, 'বল শালা, মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের রাস্তায় যারা মাইন বিছিয়েছিল, তাদের সব কটার নাম বল'

আকাশ থার্ড ডিগ্রি সহ্য করেছে প্রাণপণে কমরেডদের নাম তার মুখ দিয়ে বেরয়নি বেরিয়েছে শুধুই গোঙানি সেই রকম গোঙানি এখনও বেরচ্ছে তার মুখদিয়ে আঃ কী যন্ত্রণা হিংস্র কোনো যন্তু যেন থাবা দিয়ে গভীর ক্ষত করে দিয়েছে তার পিঠে ক্ষতস্থান ছুঁতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কিভাবে সেটা ছোঁয়া যাবে তা মাথায় আসছে না কিছুক্ষণ আগেও মাথা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছিল যন্ত্রণায় কিন্তু এখন সেই যন্ত্রণা যেন কমে আসছে অসাড় হয়ে আসছে চেতনা শুধু একটা কথাই মনে পড়ছে এই মুহূর্তে... শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব 

 

ডাক্তার হরিহর ঘোষাল লাস বের করে টেবিলে রাখতে বলেছেন সেই মত ফ্রিজার থেকে লাস টেনে বের করছে ডোম নন্দলাল কিন্তু লাস বের করার সময় খটকা লাগল তার মৃতদেহ -রকম নরম নরম হবার তো কথা নয়! মারা যাবার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই তো শরীর একদম কাঠের মত শক্ত হয়ে যায়শরীরে কোনও ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে না এই মড়াটা কেমন যেন অন্যরকম ঠেকছে 

নন্দ মৃতদেহটাকে তুলে টেবিলার উপর রাখল কেমন যেন একটা সন্দেহ হল তার লোকটা কি সত্যিই মরেছে?নাকি অসাড় হয়ে আছে? নন্দ লোকটার ঠান্ডা বুকের উপর কান পেতে বুকের ধুকপুকুনি শোনার চেষ্টা করল অনেক্ষণ পরপর মৃদুভাবে দুটো অস্বাভাবিক শব্দ চক্রাকারে আবর্তিত হতে হতে যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসছে  

'কী ব্যাপার?হচ্ছে কী?' 

ডাক্তার ঘোষালের কণ্ঠস্বর শুনেই নন্দ চকিতে মৃতদেহের কাছ থেকে সরে এল আর চোখে মুখে আতংক রুদ্ধশ্বাসে বলল সে, 'স্যার মড়াটা মনে হয় বেঁচে আছে'

'ধুর ব্যাটা!মড়া কখনও বেঁচে থাকে? মরে গেলেই মড়া হয়'

'না স্যার, আমি ধুকপুকুনি শুনেছি এখনো জান আছে আপনি নিজেই দেখুন স্যার'

'কয় পেগ চড়িয়েছিস?'

'আপনি নিজেই চেক করে দেখুন স্যার লোকটা বেঁচে আছে'

নন্দ এত আত্মবিশ্বাসের সংগে কথাটা বলল যে ডাক্তার ঘোষাল কথাটাকে উড়িয়ে দিতে পারলেন না তিনি স্টেথোস্কোপ মড়াটার বুকের উপর চেপে ধরলেন মড়া পরীক্ষা করে তাঁর ভ্রু কুঁচকে গেল মোবাইল ফোন থেকে মর্গ সুপারিন্টেনডেন্টকে ফোন করলেন মর্গ সুপারিন্টেনডেন্টও কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেলেন বললেন, 'বলেন কী মশাই? এতো সাংঘাতিক ব্যাপার! জ্যান্ত মানুষকে মর্গে পাঠিয়েছে? ডেথ সার্টিফিকেট কে দিয়েছে রে বাবা! ঠিক আছে আপনি লোকটার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখুন আমি ওকে হসপিটালে পাঠাবার ব্যহস্থা করছি কী কাণ্ডরে বাবা!'

মিনিট দশেক পর ডাক্তার ঘোষালের মোবাইল ফোন বেজে উঠল না মর্গ সুপারিন্টেনডেন্ট নন একটা অপরিচিত স্বর নিজের পরিচয় জানিয়ে বলল, 'পুলিশি এনকাউন্টারে কেউ বাঁচে না মশাই লোকটা সাংঘাতিক ক্রিমিনাল প্রশাসনের চোখে লোকটা মৃত আপনাকে লাসের পোষ্টমর্টেম করতে বলা হয়েছে তাই করুন কর্তব্যে গাফিলতি করলে কী হয় জানেন তো? এই বয়সে যদি চাকরি যায় আর প্রাইভেট প্রাক্টসেরও সুযোগ যদি না থাকে কী হবে বলুন তো? যান পোষ্ট মর্টেম করুন রিপোর্টে কী লিখতে হবে আপনার সুপারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে'

ডাক্তার ঘোষালের মুখটা লাল হয়ে গেল সেটা রাগে না অপমানবোধে, না কি দুটোতেই, তা বোঝা গেল না খানিক্ষণ কী সব ভাবলেন তিনি লোকটাকে এনকাউন্টার করা হয়েছেকিন্তু গুলি তো মনে হচ্ছে পয়েন্ট ব্ল্যংক রেঞ্জ থেকে করা হয়েছে কিন্তু কেন? তাহলে কি লোকটা থার্ডডিগ্রী সইতে না পেরে কোমায় চলে গিয়েছিল?লোকটাকে মৃত মনে করে পুলিশ এনকাউন্টারের গল্প বানানোর পিঠে বুলেট গেঁথে দিয়েছে? না, এসব অনর্থক ভাবনা হুকুমদাসের এই সব ভাবার অধিকার নেই ডাক্তার ঘোষালের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল 

 

অনেকদিন পর আজ শুঁড়িখানায় পা রাখল নন্দ আজ সে আকণ্ঠ পান করবে একটা পাপ বোধ তার মস্তিস্ককে আচ্ছন্ন করে আছে সে দেখতে চায় এই পাপবোধের ক্ষমতা বেশি, না কি চোলাইয়ের ক্ষমতা বেশি 

নেশা বাড়ছে, দুনিয়া টলমল করছে, তবু তার কানে হাতুড়ি পেটার মত একটা ধুকপুক আওয়াজ ভেসে আসছে সেই আওয়াজে কানে যেন তালা লেগে যাচ্ছে প্রবল অস্বস্তিতে সে চিৎকার করে বলতে লাগল, 'লোকটা বেঁচে আছে স্যার, জ্যান্ত মানুষের পোষ্টমর্টেম হয় না' কিন্তু যতই সে চিৎকার করে বলতে লাগল, 'আমি জ্যান্তমানুষের পোষ্ট মর্টেম করব না' ততই একটা কণ্ঠস্বর তাকে বলতে লাগল, 'তোমাকে যা করতে বলা হচ্ছে তাই কর এটাই প্রশাসনের নির্দেশ'

গভীর রাতে বাড়ি টলতে টলতে বাড়ি ফিরল নন্দ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরলে অন্যদিন যেমন হয় আজও সেই রকমভাবে বৌয়ের কটুকথা ভেসে এলো কিন্তু সেই সব নন্দর কানে পৌঁছালেও অন্তঃকরণে কোনও রেখাপাত করল না সে বিছানায় এসে সটান শুয়ে পড়ল বৌ খেয়ে নেবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল, কিন্তু নন্দ উঠল না 

রাত আরো গভীর হলে একটা গাড়ি এসে থামল নন্দর বাড়ির সামনে চার পাঁচ জন উর্দিপরা লোক নামল গাড়ি থেকে নন্দর বাড়ির দরজায় টোকা পড়ল নন্দর বৌ দরজা খোলার সাহস পেল না তার দরকারও পড়ল না উপর্যুপরি ধাক্কাতে দুর্বল সস্তা কাঠের দরজা ভেঙ্গে পড়ল লোকগুলো ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নন্দকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এল নন্দর বৌকে কাঁদতে দেখে একজন দয়াপরবশ হয়ে জানিয়ে গেল, 'তোর মরদ পাগল হয়ে গেছে ওকে পাগলাগারদে নিয়ে যাচ্ছি'

Post a Comment

Previous Post Next Post