উপন্যাস-তত্ত্ব
শংকর ব্রহ্ম
উপন্যাসের
উদ্ভব
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষের এই
আগ্রহের ফলেই কাহিনীর উদ্ভব হয়েছে। তখন প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক হিসেবে মুখে মুখে প্রচলিত গল্প-কাহিনীর বিষয় হয়ে ওঠে দেব-দেবী, পুরোহিত, গোষ্ঠীপতি ও
রাজাদের কীর্তি-কলাপ। লিপির উদ্বাবন ব্যবহার ও মুদ্রণ যন্ত্রের
আবিষ্কার হতে বহু শতাব্দী পেরিয়ে যায়। ততদিনে মানবসমাজে সর্বময় কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট,
পুরোহিত ও
ভূস্বামীদের। ফলে দেবতা ও
রাজ-রাজড়ার
কাহিনীই লিপিবদ্ধ হতে থাকে ছন্দ ও অলংকৃত ভাষায়। এভাবেই ক্রমে কাব্য, মহাকাব্য
ও নাটকের সৃষ্টি হয়।
দৈনন্দিন জীবনযাপনের ভাষায়
তথা গদ্যে কাহিনী লেখার উদ্ভব ঘটে ইতিহাসের এক
বিশেষ পর্বে। মুখে মুখে রচিত, কাহিনী যেমন রূপকথা, উপকথা, পূরাণ, জাতকের
গল্প ইত্যাদি পরে গদ্যে লিপিবদ্ধ হলেও মানুষ এবং মানুষের জীবন ওইসব কাহিনীর প্রধান বিষয় হতে পারেনি। কারণ তখনও সমাজে ব্যক্তি মানুষের অধিকার স্বীকৃতি পায়নি, গড়ে ওঠেনি তার ব্যক্তিত্ব, ফলে কাহিনীতে ব্যক্তির প্রাধান্য লাভের উপায়ও ছিল না। ইউরোপে যখন বাণিজ্য পুঁজির বিকাশ শুরু হতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে মধ্যযুগীয় চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণার অবসান ঘটতে থাকে। খ্রীষ্টীয়
চৌদ্দো-ষোলো শতকে ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁসের ফলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় জ্ঞান ও
মুক্তবুদ্ধির চর্চা শুরু হয়, বিজ্ঞান
ও যুক্তিনির্ভরতা বাড়ে, ইহ-জাগতিকতা
এবং মানবতাবাদ প্রকাশ পায়। যা ক্রমে হয়ে ওঠে শিক্ষিত সামজের সচেতন মানুষের জীবনযাপনের অঙ্গ।
রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠিত হলে বিজ্ঞান ও
দর্শনের অগ্রগতি বাধাহীন হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য
পুঁজির বিকাশ আরম্ভ হলে সমাজে বণিক শ্রেণীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং রাজা, সামন্ত-ভূস্বামী
এবং পুরোহিতদের সামাজিক
গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্যনির্ভরতা পরিহার
করে মানুষ হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী,
অধিকার-সচেতন এবং আত্মা প্রতিষ্ঠায় উন্মুখ। এভাবে ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব, রাজতন্ত্রের
উচ্ছেদ এবং আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র চর্চার পথ, খুলে দেয়। সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিমানুষ এবং ব্যক্তির জীবনই হয়ে ওঠে সাহিত্যের প্রধান বিষয়। এভাবেই
ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজ পরিবর্তনের পটভূমিকাতেই উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে উপন্যাসের।
অবশ্য এর
পূর্ববর্তী কয়েক শতকেও পৃথিবীর নানা দেশে রচিত হয়েছে বিভিন্ন কাহিনী-গ্রন্থ, যাতে ব্যক্তির জীবন, তার অভিজ্ঞতা, তার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন
ও স্বপ্নভঙ্গ,
তার আশা-হতাশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গভীর বিশ্বস্ততার সঙ্গে। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল- ‘আলিফ লায়লা
ওয়া লায়লানে’,
‘ডেকামেরন’, ‘ডন কুইকজোট’ ইত্যাদি।
আধুনিক কালের একটি বিশিষ্ট শিল্পরূপ হল উপন্যাস। উপন্যাসের আক্ষরিক অর্থ হল উপযুক্ত বা বিশেষ রূপে স্থাপন। অর্থাৎ
উপন্যাস হচ্ছে কাহিনী রূপ একটি উপাদানকে বিবৃত করার বিশেষ কৌশল, পদ্ধতি
বা রীতি। ‘উপন্যাস’ শব্দের
ইংরেজি প্রতিশব্দ
novel-এর আভিধানিক অর্থ হল : a fictitious prose narrative or tale
presenting picture of real life of the men and women portrayed. (একটি কাল্পনিক গদ্য আখ্যান বা
গল্প যা
চিত্রিত পুরুষ এবং মহিলাদের বাস্তব জীবনের চিত্র উপস্থাপন করে।)। অর্থাৎ উপন্যাস হচ্ছে গদ্যে লিখিত এমন এক বিবরণ বা কাহিনী যার ভেতর দিয়ে মানব-মানবীর জীবনযাপনের
বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
ব্যুৎপত্তিগত এবং আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে
বলা যায়,
মানব-মানবীর
জীবন যাপনের বাস্তবতা অবলম্বনে যে
কল্পিত উপাখ্যান পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য বিশেষ বিন্যাসসহ গদ্যে লিপিবদ্ধ করা হয় তাই হল উপন্যাস।
যেহেতু উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য মানুষের জীবন তাই উপন্যাসের কাহিনী হয় বিশ্লেষণাত্মক, দীর্ঘ ও সমগ্রতাসন্ধানী।
উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে উনিশ শতক খুবই তাৎপর্যময়। এ সময়ে লেখা হয়েছে পৃথিবীর বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। যেমন- ফ্রান্সের
স্তাঁদালের ‘স্কারলেট
এ্যান্ড ব্ল্যাক’,
এমিল জোলার
‘দি জারমিনাল’,
ব্রিটেনের হেনরি ফিল্ডিং-এর ‘টম জোনস’, চার্লস
ডিকেন্সের ‘এ টেল অফ
টু সিটিজ’,
রাশিয়ার লিও তলন্তয়ের ‘ওয়ার এ্যান্ড
পিস’, ফিয়োদর
দস্তয়ভস্কির ‘ক্রাইম
এ্যান্ড পানিশমেন্ট’
ইত্যাদি। উপন্যাস
শিল্পকে বিকাশের শীর্ষ স্তরে পৌছে দেয় এসব মহৎ উপন্যাস। যা
পাঠকের মনকে যুক্ত করে বৃহত্তর জগৎ ও জীবনের সঙ্গে।
উপন্যাসের
গঠন কৌশল
উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনী। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন
ও স্বপ্নভঙ্গ,
ঘৃণা-ভালোবাসা
ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও
সুবিন্যস্ত। প্লটের
মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে
বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা
বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করে এবং কাহিনীকে আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক
ও বাস্তবোচিত করে তোলে।
উপন্যাস বিশ্লেষকগণ একটি সার্থক উপন্যাসের গঠন কৌশল নিয়ে ছয়টি রীতির কথা বলেছেন।
১). প্লট বা আখ্যান
উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘ কাহিনী। যেখানে মানব-মানবীর তথা ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও
স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদি ঘটনা প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা আখ্যান হয় সুপরিকল্পিত ও
সুবিন্যস্ত। প্লটের
মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকাণ্ডকে এমনভাবে
বিন্যস্ত করা হয় যাতে তা
বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করে এবং কাহিনিকে আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক
ও বাস্তবোচিত করে তোলে।
২). চরিত্র
ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সমাজ-সম্পর্ক। এই
সম্পর্কজাত বাস্তব ঘটনাবলি নিয়েই উপন্যাসের কাহিনী নির্মিত হয়। আর, ব্যক্তির
আচরণ, ভাবনা এবং ক্রিয়াকাণ্ডই হয়ে ওঠে উপন্যাসের প্রধান বর্ণনীয় বিষয়। উপন্যাসের এই
ব্যক্তিই চরিত্র বা Character. অনেকে মনে করেন, উপন্যাসে ঘটনাই মুখ্য, চরিত্র সৃষ্টি
গৌণ। কিন্তু
প্রকৃত পক্ষে,
ঘটনা ও
চরিত্র পরস্পর নিরপেক্ষ নয়, একটি অন্যটির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। মহৎ ঔপন্যাসিক এমনভাবে চরিত্র সৃষ্টি করেন যে, তারা হয়ে ওঠে পাঠকের চেনা জগতের বাসিন্দা বা অতি পরিচিতজন। উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে একজন লেখকের অন্বিষ্ট হয় দ্বন্দ্বময় মানুষ। ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভ, সুনীতি-দুর্নীতি প্রভৃতির দ্বন্দ্বাত্মক বিন্যাসেই একজন মানুষ সমগ্রতা অর্জন করে এবং এ
ধরনের মানুষই চরিত্র হিসেবে সার্থক বলে বিবেচিত হয়।
৩). সংলাপ
বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E. M. Forster - এর মতে, কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তার মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। উপন্যাসকে এক
সুবিশাল ক্যানভাস হিসেবে ধরা যায়,
লেখক তার পরিকল্পনা মাফিক একেকটি অধ্যায়কে জায়গা করে দেন সেখানে।
স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা,
মানুষের হৃদয়ের গভীর তলদেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা—ইত্যাদি
দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য।
উপন্যাসের ঘটনা প্রাণ পায় চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সংলাপে। যে কারণে ঔপন্যাসিক সচেষ্ট থাকেন স্থান-কাল অনুযায়ী
চরিত্রের মুখে ভাষা দিতে। অনেক সময় বর্ণনার চেয়ে চরিত্রের নিজের মুখের একটি সংলাপ তার চরিত্র উপলব্ধির জন্য বহুল পরিমাণে শক্তিশালী ও অব্যর্থ হয়। সংলাপের দ্বারা ঘটনাস্রোত উপস্থাপন করে লেখক নির্লিপ্ত থাকতে পারেন এবং পাঠকের বিচার-বুদ্ধির
প্রকাশ ঘটাতে পারেন। সংলাপ চরিত্রের বৈচিত্র্যময় মনস্তত্ত্বকে প্রকাশ
করে এবং উপন্যাসের বাস্তবতাকে নিশ্চিত করে তোলে।
৪). পরিবেশ বর্ণনা
উপন্যাসের কাহিনীকে হতে হয় বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য।
ঔপন্যাসিক উপন্যাসের দেশকালগত সত্যকে পরিস্ফুটিত করার অভিপ্রায়ে পরিবেশকে নির্মাণ করেন। পরিবেশ
বর্ণনার মাধ্যমে চরিত্রের জীবনযাত্রার ছবিও কাহিনীতে ফুটিয়ে তোলা হয়। এই
পরিবেশ মানে কেবল প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়; স্থান কালের স্বাভাবিকতা, সামাজিকতা, ঔচিত্য ও
ব্যক্তি মানুষের সামগ্রিক জীবনের পরিবেশ। দেশ-কাল ও সমাজের রীতি-নীতি, আচার-আচরণ, প্রথা ইত্যাদি নিয়ে গড়ে ওঠে উপন্যাসের প্রাণময় পরিবেশ।
৫). শৈলী বা স্টাইল
শৈলী বা স্টাইল হচ্ছে উপন্যাসের ভাষাগত অবয়ব সংস্থানের ভিত্তি। লেখকের জীবনদৃষ্টি ও জীবনসৃষ্টির সঙ্গে ভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উপন্যাসের বর্ণনা,
পরিচর্যা, পটভূমিকা
উপস্থাপন ও
চরিত্রের স্বরূপ নির্ণয়ে অনিবার্য ভাষাশৈলীর প্রয়োগই যে কোনও ঔপন্যাসিকের কাম্য। উপজীব্য
বিষয় ও
ভাষার সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমেই উপন্যাস হয়ে ওঠে সমগ্র,
যথার্থ ও
সার্থক আবেদনবাহী, উপন্যাসের
লিখনশৈলী বা
স্টাইল নিঃসন্দেহে যে কোনো লেখকের শক্তি, স্বাতন্ত্র্য ও
বিশিষ্টতার পরিচায়ক। তাই চিন্তার মননশীলতার পরিচয় ও
পাওয়া যায় বটে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর হাতে বাংলাদেশের উপন্যাসের
যে শৈল্পিক সূচনা হয়েছিল, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসে এসে তা
পূর্ণতা লাভ করে। তবে বাংলাদেশের উপন্যাসের এ
গতিপ্রবাহ থেমে যায়নি। একবিংশ শতকে সম্পূর্ণ নতুন ধারার উপন্যাসের সূত্রপাত যে ঘটবে তার পূর্বাভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে।
৬). লেখকের সামগ্রিক জীবন-দর্শন
মানব জীবন-সংক্রান্ত যে
সত্যের উদ্ঘাটন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে পরিষ্ফূট হয় তাই লেখকের জীবনদর্শন। আমরা একটি উপন্যাসের মধ্যে একই সঙ্গে জীবনের চিত্র ও
জীবনের দর্শন এই দুইকেই খুঁজি। এর
ফলে সার্থক উপন্যাস পাঠ করলে পাঠক মানব জীবন-সংক্রান্ত কোনও সত্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। উপন্যাসে
জীবনদর্শনের অনিবার্যতা তাই স্বীকৃত।
উপন্যাসের শ্রেণীবিভাগ
উপন্যাস বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কখনও তা কাহিনি-নির্ভর, কখনও চরিত্র-নির্ভর, কখনও মনস্তাত্ত্বিক, কখনও বক্তব্যধর্মী। বিষয়, চরিত্র, প্রবণতা
এবং গঠনগত সৌকর্যের ভিত্তিতে উপন্যাসকে নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে।
১). সামাজিক উপন্যাস
সামাজিক উপন্যাস (social novel) উপন্যাসের একটি বিশেষ শ্রেণী। এই শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে উনিশ শতকে। এই শতকে ইংরেজি সামাজিক উপন্যাসগুলিতে সমাজের
নানা অন্যায়-অবিচার, কুপ্রথা
প্রভৃতির উদ্ঘাটন এবং তাদের সমালোচনার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ
করা হয়। ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়ান যুগের মহিলা ঔপন্যাসিক এলিজাবেথ ক্লেগহর্ন গ্যাসকেল সমাজ সংস্কারের আদর্শ নিয়ে উপন্যাস রচনায় ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি তার মেরি বার্টন (১৮৪৮) ও নর্থ অ্যান্ড সাউথ (১৮৫৫) উপন্যাস
দু'টিতে শিল্পবিপ্লবোত্তর ইংল্যান্ডের শ্রমিকসমাজের
দুঃখ-দুর্গতি, পুঁজিপতিদের শোষণ,
বেকারি ও
অনাহার, প্রতিকূল
অবস্থার চাপে নারীর গণিকাবৃত্তি গ্রহণ ইত্যাদি নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
পাদ্রি চার্লস কিংসলের (১৮১৯-৭১) উপন্যাসেও
সমাজ সংস্কারের প্রেরণা ছিল অত্যন্ত প্রবল। তার অ্যালটন লক জনৈক চার্চিস্ট শ্রমিকের কাল্পনিক আত্মজীবনী। এই
উপন্যাসে লন্ডন শহরের কোনো কোনো অঞ্চলের পঙ্কিল পরিবেশ ও শ্রমিকদের শ্রেণীসচেতনতার কথা বাস্তব ও
তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে। শেষপর্যন্ত অবশ্য কিংসলে শ্রেণীসংগ্রাম নয়, খ্রিস্টধর্মে নায়কের বিশ্বাসকেই চিত্রিত করেছেন।
চার্লস ডিকেন্সের প্রায় প্রতিটি উপন্যাসেই সমাজের অন্যায়-অত্যাচার
সজীব কল্পনায় চিত্রিত হয়েছে। তার নিজের শৈশব অত্যন্ত দুঃখ-দারিদ্র্যের
মধ্যে অতীবাহিত হয়েছিল। ডিকেন্স তার অলিভার টুইস্ট
(১৮৩৮) উপন্যাসে
অনাথ আশ্রমে শিশুদের শোচনীয় দুর্গতির কথা, নিকোলাস নিকোলবি (১৮৩৮-৩৯) উপন্যাসে শিক্ষার নামে উৎপীড়ন ও
শোষণ, ব্লেক হাউজ (১৮৫২-৫৩) উপন্যাসে
আইনব্যবস্থার জটিলতা ও শ্লথগতি এবং তার সুযোগ নিয়ে উকিলদের অসহায় মক্কেলদের নির্মম শোষণ ও বঞ্চনা, লিটল ডোরিট (১৮৫৫-৫৬) উপন্যাসে
সরকারি আমলাতন্ত্রের নির্মম
হৃদয়হীনতা ও
অবিচার ইত্যাদি চিত্রিত করেছেন। এই সব উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে দরিদ্রদের প্রতি লেখকের গভীর সহানুভূতি ব্যক্ত হয়েছে।
বাংলা ভাষায় সামাজিক উপন্যাস ধারার সার্থক রূপকার হলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
তার সামাজিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে অরক্ষণীয়া,
বামুনের মেয়ে ও পল্লীসমাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অরক্ষণীয়া
(১৯১৬) উপন্যাসে
একটি শাস্ত্রনির্দিষ্ট বয়সে কন্যার বিবাহ দিতে না পারায় কন্যা ও মাতার সামাজিক লাঞ্ছনা ও
দুর্গতি এবং বামুনের মেয়ে (১৯২০) উপন্যাসে কৌলিন্যপ্রথার বিষময়
ফল, উক্ত প্রথার অসঙ্গতিপূর্ণ ও অন্তঃসারশূন্য গর্ব এবং অসহায় মেয়েদের উপর সমাজপতিদের অত্যাচারের বাস্তবসম্মত
চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। শরৎচন্দ্রের সামাজিক
উপন্যাসগুলোর মধ্যে পল্লীসমাজ সর্বশ্রেষ্ঠ। শ্রীকুমার
বন্দ্যোপাধ্যায় এই
উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেছেন,
পল্লীসমাজ-এ আচারনিষ্ঠা ও সমাজরক্ষার অজুহাতে যে কতটা ক্রূরতা, নীচ স্বার্থপরতা ও হেয় কাপুরুষতা আমাদের সমর্থন লাভ করিয়াছে, আমাদের জীবন যে কি
পরিমাণ পঙ্গু ও অক্ষম হইয়া পড়িতেছে — ইহাই তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছেন।
২). ঐতিহাসিক
উপন্যাস
জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা বা
চরিত্রের আশ্রয়ে যখন কোনো উপন্যাস রচিত হয় তখন তাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে। ঐতিহাসিক উপন্যাসে লেখক নতুন নতুন ঘটনা বা
চরিত্র সৃজন করে কাহিনিতে গতিময়তা ও প্রাণসঞ্চার করতে পারেন কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য থেকে বিচ্যুত হতে পারেন না। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাজসিংহ’, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধর্মপাল’, মীর মশাররফ
হোসেনের ‘বিষাদ-সিন্ধু’, সত্যেন
সেনের ‘অভিশপ্ত
নগরী’ ঐতিহাসিক
উপন্যাস বলে বিবেচিত। রুশ ভাষায় লিখিত তলস্তয়ের কালজয়ী গ্রন্থ ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’,
ভাসিলি ইয়ানের
‘চেঙ্গিস খান’
বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাস।
৩). মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস
মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের
প্রধান আশ্রয় পাত্র-পাত্রীর মনোজগতের
ঘাত-সংঘাত ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; চরিত্রের
অন্তর্জগতের জটিল রহস্য উদ্ঘাটনই ঔপন্যাসিকের প্রধান
লক্ষ্য। আবার সামাজিক উপন্যাস ও মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে নৈকট্যও লক্ষ করা যায়। সামাজিক উপন্যাসে যেমন মনস্তাত্ত্বিক ঘাত-প্রতিঘাত থাকতে পারে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসেও সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত থাকতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে
কাহিনি অবলম্বন মাত্র, প্রকৃত উদ্দেশ্য
থাকে মানবমনের জটিল দিকগুলো সার্থক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। বিশ্বসাহিত্যে ফরাসি লেখক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার লিখিত ‘মাদাম বোভারি’, রুশ লেখক দস্তয়ভস্কি লিখিত ‘ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট’ এবং বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’, ‘চতুরঙ্গ’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাদের অমাবস্যা’ ‘কাঁদো নদী কাঁদো’
মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের উজ্জ্বল উদাহরণ।
৪). রাজনৈতিক উপন্যাস
সমাজ-বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি যে রাজনীতি সেই রাজনৈতিক ঘটনাবলি,
রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট
চরিত্রের কর্মকাণ্ড যে উপন্যাসে প্রাধান্য লাভ করে তাকে রাজনৈতিক উপন্যাস বলে। এ ধরনের উপন্যাসে রাজনৈতিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা
ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপুল পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক
উপন্যাসের দৃষ্টান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’, শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’, গোপাল হালদারের ‘ত্রয়ী’ উপন্যাস- ‘একদা’, ‘অন্যদিন’, ‘আর একদিন’, তারাশঙ্কর
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’,
সতীনাথ বাদুড়ীর
‘জাগরী’ ও ‘ঢোড়াই চরিত মানস’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
‘চিহ্ন’, শহীদুল্লা
কায়সারের ‘সংশপ্তক’, জহির রায়হানের
‘আরেক ফাল্গুন',
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের
‘চিলেকোঠার সেপাই’,
আহমদ ছফার
‘ওঙ্কার, সাবিত্রী
রায়-এর ‘পাকা ধানের গান’, ‘পদ্মা-মেঘনা’ প্রভৃতি।
৫). আত্মজৈবনিক উপন্যাস
ঔপন্যাসিক তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতকে যখন আন্তরিক শিল্পকুশলতায় উপন্যাসে রূপদান করেন তখন তাকে আত্মজৈবনিক উপন্যাস বলে। এ
ধরনের উপন্যাসে লেখকের ঔপন্যাসিক কল্পনার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে তার ব্যক্তি জীবনের নানা অন্তর্ময় বৈশিষ্টমণ্ডিত ঘটনাসূত্র। অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ এ ধরনের উপন্যাসের দৃষ্টান্ত।
৬). চেতনাপ্রবাহ রীতির উপন্যাস
মানুষের মনোলোকে বর্তমানের অভিজ্ঞতা, অতীতের
স্মৃতি এবং ভবিষ্যতের কল্পনা এক
সঙ্গে প্রবাহিত হয়। এই
প্রবাহের ভার্ষিক বর্ণনা দিয়ে চেতনাপ্রবাহ রীতির উপন্যাস লিখিত হয়। আইরিশ লেখক জেমস জয়েসের
‘ইউলিসিস’ এমনই একটি বিখ্যাত উপন্যাস। সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’
চেতনাপ্রবাহ রীতির উপন্যাস হিসেবে পরিচিত।
৭). রোমান্সধর্মী উপন্যাস
রোমান্স বলতে বোঝায় বীরত্বপূর্ণ এক ধরনের অবাস্তব কাল্পনিক উচ্ছ্বাসপূর্ণ ভাষাযুক্ত কাহিনী । ইউরোপীয়
রোমান্সের আদি জননী দা অ্যারাবিয়ান নাইটস । তবে বর্তমানে রোমান্স বলতে বোঝায় বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কল্পনাময় মানবিক কাহিনীকে। এতে কল্পনাভিসারী মন
ও অতীতপ্রীতির কথা বেশি ফুটে ওঠে। বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুন্ডলা, মৃণালিনী, চন্দ্রশেখর
এ ধরনের উপন্যাস।
৮). গোয়েন্দা উপন্যাস
অপরাধ ও
গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ে এ ধরনের উপন্যাস রচিত হয়। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের (১৮৫৫-১৯০৭) দারোগার
দপ্তর, বনফুলের
পঞ্চপর্ব, শরৎচন্দ্র
সরকারের গোয়েন্দাকাহিনী, অম্বিকাচারণ গুপ্তের গোয়েন্দা গল্প এবং ক্ষেত্রঘোষের 'আদরিণী' এ শ্রেণীর
উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।
তবে বাংলা গোয়েন্দা উপন্যাসের সবচাইতে স্বার্থক উদাহরণ হল সত্যজিৎ রায়ের
ফেলুদা। শরদিন্দু
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী ও কম
জনপ্রিয় নয়!তাছাড়া আছে নীহাররঞ্জন গুপ্ত-র কিরীটি
রায়।
৯). রহস্য উপন্যাস
রহস্যোপন্যাসে ঔপন্যাসিকের প্রধান
লক্ষ্য রহস্যময়তা সৃষ্টি
এবং উপন্যাসের উপাত্ত পর্যন্ত তা
ধরে রাখা। এ জাতীয় উপন্যাসে রহস্য উদঘাটনের জন্য পাঠক রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায়
থাকে। দীনেন্দ্রকুমার রায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়,
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, নীহাররঞ্জন
গুপ্ত, কাজী আনোয়ার হোসেন প্রমুখ লেখক বাংলা ভাষায় বহু রহস্যোপন্যাস লিখেছেন। ফেলুদা সিরিজ, কিরীটী অমনিবাস, মাসুদ রানা সিরিজ, কুয়াশা সিরিজ প্রভৃতি এ
জাতীয় উপন্যাসের দৃষ্টান্ত।
১০). হাস্যরসাত্মক উপন্যাস
এ
ধরণের উপন্যাসে লেখক মানবজীবনের যে-কোনো একটি অসঙ্গতিকে বিষয়বস্ত্ত করে হাস্যরসাত্মক চরিত্র সৃষ্টি করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'মুক্তির উপায়'
, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের 'রসময়ীর রসিকতা', বিভূতিভূষণ
বন্দোপাধ্যায়ের 'ওরা ও আমরা',
রাজশেখর বসুর
'চিকিৎসা সংকট',
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'প্যান্টের বোতাম' ও 'সোফা কামবেড',
ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কল্পতরু'; ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের (১৮৪৭-১৯১৯) 'কঙ্কাবতী', 'ফোকলা দিগম্বর';
চন্দ্রনাথ বসুর
'পশুপতি সম্বাদ';
কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কোষ্ঠীর ফলাফল' ইত্যাদি
এ শ্রেণির উপন্যাস।
১১). আঞ্চলিক উপন্যাস
বিশেষ কোনো অঞ্চল ও
সে অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকা ও
পরিসরের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিশ্রিত যে কাহিনী বা উপন্যাস তাই আঞ্চলিক উপন্যাস বলে পরিচিত। অঞ্চল বিশেষের মানুষ ও
তাদের যাপিত জীবন এবং স্থানিক রং ও স্থানিক
পরিবেশবিধৌত জীবনাচরণ নিয়ে যে উপন্যাস লেখা হয় তাকে আঞ্চলিক উপন্যাস বলা হয়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, অদ্বৈত মল্লবর্মনের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, শামসুদ্দীন
আবুল কালামের
‘কাঁশবনের কন্যা’
ও ‘সমুদ্রবাসর’ প্রভৃতি নাম এক্ষেত্রে স্মরণীয়।
১২). রূপক উপন্যাস
সাহিত্যের রূপকাশ্রয় কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। তবে কখনো কখনো উপন্যাসিক তার রচনায় উপস্থাপিত কাহিনি কাঠামোর অন্তরালে কোনো বিশেষ ব্যতিক্রমধর্মী রূপকাশ্রয়ী বক্তব্যের সাহায্যে উপন্যাসের শিল্পরূপ প্রদান করেন। এ ধরনের উপন্যাসকে রূপক উপন্যাস বলা হয়। প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক জর্জ অরওয়েলের রুপক উপন্যাস
‘অ্যানিমেল ফার্ম’
যেখানে পাত্রপাত্রী মানুষ নয় জন্তু-জানোয়ার। রূপক উপন্যাস সৃষ্টিতে শওকত ওসমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করেছেন। তার ‘ক্রীতদাসের
হাসি’, ‘সমাগম’ ‘রাজা উপাখ্যান’,
‘পতঙ্গ পিঞ্জর’
রূপক উপন্যাসের সার্থক দৃষ্টান্ত
১৩). কাব্যধর্মী উপন্যাস
এতে লেখকের জীবনদর্শন ও
গীতিধর্মিতা প্রাধান্য পায়। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা এ
জাতীয় একটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
১৪). পত্রোপন্যাস উপন্যাস
এ
ধরণের উপন্যাসের বক্তব্য পত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়। যেমন শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের (১৯০১-১৯৭৬) 'ক্রৌঞ্চমিথুন', বুদ্ধদেব
গুহর 'সবিনয়
নিবেদন' ইত্যাদি।
১৫). পুরাণ কাহিনীমূলক উপন্যাস
পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে এ
ধরনের উপন্যাস রচিত হয়। কাহিনীই
এ ধরনের উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। এ ক্ষেত্রে দীনেশ সেনের 'শ্যামল ও
কজ্জল', জড়ভরত
ও বেহুলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৬). বীরত্বব্যঞ্জক উপন্যাস
বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী
অবলম্বনে এ
ধরনের উপন্যাস রচিত হয়। মণীন্দ্রলাল
বসুর অজয়কুমার এ শ্রেণীভুক্ত উপন্যাস।
[ তথ্যসূত্র-
অন্তর্জাল ]