প্রণামী
কথিকা বসু
অষ্টমীর সকাল। স্নান সেরে, নতুন একখানা শাড়ি পরে, সুন্দর করে
সেজেগুজে, পুজোর ডালাটা
ভালো করে গুছিয়ে, প্যান্ডেলের দিকে
এগোলো কাজরী। ফল, ফুল, মিষ্টি তো আছেই, আর তার সাথে
মায়ের প্রণামীর শাড়ি যেটা ডালার একদম ওপরেই রেখেেছে ও। শাড়িটার খোলটা দুধসাদা, তার উপরে ছোটো
ছোটো লাল আর সোনালী রঙের জরির বুটি, সাথে চওড়া কল্কা করা পাড়। প্রথম দেখাতেই শাড়িটা ভীষণ পছন্দ হয়ে গিয়েছিল
কাজরীর। দামটা যদিও দোকানদার একটু বেশিই বললো, তবু বছরে তো এই একবারই মাকে দেওয়া, তাই আর বেশি দরদাম না করেই ও কিনে নিয়েছিলো শাড়িটা। প্যান্ডেলের সামনে
পৌঁছতেই, কাজরী দেখলো
অষ্টমীর অঞ্জলি শুরু হয়ে গেছে, তাই ভিড় আছে বেশ খানিকটা। একটু ফাঁকা হলে তারপর ও পুজো আর অঞ্জলি দেবে, ভেবে একপাশে সরে
দাঁড়ালো ও আর তখনই ওর চোখে পড়লো দৃশ্যটা। কি জানি কোথা থেকে, প্যান্ডেলের
বাইরে একটা পাগলী এসে জুটেছে, মাথায় জটা, পরনে একেবারে
ছেঁড়াখোড়া পোশাক, যা দিয়ে লজ্জা
ঢেকে রাখা দায়। আগে কখনো ওকে এ পাড়ায় দেখেনি কাজরী। টানা কয়েক মুহূর্ত ওর দিকে
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কাজরী। তারপর কি ভেবে যেন ওর দিকে এগিয়ে গেলো...
...
- পুজো হবে
বিশ্বনাথ বসু আর কাজরী বসুর নামে আর গোত্র হল গিয়ে কাশ্যপ। ঠিক আছে, ঠাকুরমশাই?
- সে তো বুঝলাম মা, কিন্তু এ বছর
মায়ের প্রণামী শাড়ি কই, আনোনি?
- ভুলে গেছি ঠাকুরমশাই। কাল বা দশমীতে আমার সাধ্যমতো একখানা শাড়ি নিয়ে আসবো, মায়ের জন্য, বাজার খরচা থেকে বাঁচিয়ে, বাঁচিয়ে কত টাকা জমেছে তার সেই হিসেব করতে করতে, ঠাকুরমশাইকে উত্তর দেয় কাজরী। প্যান্ডেলের বাইরে, পাগলীটা তখন হাসিমুখে ওর গায়ে জড়ানো নতুন শাড়িটার গন্ধ শুঁকছে ।