সম্পাদকীয়
অরবিন্দ ঘোষ, বিপিনচন্দ্র পাল এমন অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেন পরে
আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন? কারণ সমাজসেবার মানসিকতা নিয়ে সংগঠন করতে গিয়ে
সৎ মানুসকে এত ধাক্কা খেতে হয়, অসাধুতার দলভারী দেখে এত হতাশ হতে হয়, যে চরম
অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার
জন্য ভালো আত্মা নেশাভাং উচ্ছৃঙ্খলতার আশ্রয় নিতে পারে না, শান্তির সন্ধানে
আধ্যাত্মিকতা অবলম্বন করে। বিদ্যাসাগর আধ্যাত্মিক জীবনে না গেলেও
স্বেচ্ছানির্বাসনে কাটিয়েছেন কার্মাটরে। তাঁর শেষ জীবনের প্রতিটি চিঠিতেই
বিচ্ছুরিত হৃদয় নিংড়োনো অভিমান।
পরোপকারী মানুষগুলোর হঠাৎই উদাসীন হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে হয়তো এরকম নীচ
স্বার্থপরতার চাপে হারিয়ে যাওয়া অনেক অপূর্ণ সদিচ্ছা, অন্তঃসারশূন্য স্থূলতার
ভারে তলিয়ে যাওয়া অনেক উন্নত সমাজ ভাবনা, ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে পরাজিত
সমষ্টির জন্য অনেক উপহাসিত মঙ্গলচিন্তা আছে।
গত মাস ছয়-সাত একটিও গল্প লিখিনি। কবিতাও মনে পড়ছে না। শুধু বই নির্মাণের
গুরু দায়িত্ব ও পত্রিকার বইমেলা সংখ্যা বের করার বিস্বাদ দায় পালন করেছি কায়
ক্লেশে। কেউ কেউ আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলেন, লেখা নাকি ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু
ঘটনা হল, সেই প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়ে গেছে। আরও খান ৩০টির মতো পাণ্ডুলিপির গতি করতে
পারলেই ছুটি। না পারলেও ছুটোছুটি আর নয়।
সভাঘর থেকে মেলাপ্রান্তর -- এখন সবই বিদেশ বিভুঁই মনে হয়। সবই তো পাদুকা
পুরাণ।
আর লেখা ছেড়ে দিলে এই কৃত্রিম বন্ধু তালিকাও স্ফীত করে রাখার মানে হয় না।
বাংলা সাহিত্য, ভারতের ইতিহাস ও বিশ্বমানবতাকে যতটুকু দিতে চেয়েছি, সেটারই
আগে আত্তীকরণ হোক। যদি হয়, আর লেখা নিষ্প্রয়োজন, যদি না হয়, আর লেখা বৃথা।
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়