গ্রন্থ সমালোচনা
মেঘপরী ও ছায়াতরু -- বিদ্যাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ।। পত্রাবলী ।। মূল্য: ১০০.০০ টাকা
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যানুরাগ, কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো
কিংবা ব্যাংকে ডেবিট ক্রেডিট গণনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কর্মসূত্রে ভারতের যে প্রদেশেই
কাটাতে হয়েছে, সেই রাজ্য থেকেই ভাষা শিখে ফেলাটা মোটেই সাধারণ ব্যাপার নয়। আবার পদার্থবিদ্যার
মতো দুরূহ বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভে সক্ষম হলেই যে একাধিক ভাষা আয়ত্ত করাটাও সহজ হবে,
এমন সরল সমীকরণও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিজ্ঞানশিক্ষা সাহিত্যচর্চাকে সমৃদ্ধই করে, কিন্তু
একাধিক ভাষা শিক্ষার অনুঘটক হিসাবে কাজ করে না। দুটো দুই ধরণের কুশলতা, যার বিরল মেলবন্ধন
কারও কারও মধ্যে বিকশিত হতে দেখা যায়। বিদ্যাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তেমনই একজন।
লেখা শুরু করেছেন বছর আড়াই, করোনা লকডাউনের পর থেকে।
আলোচ্য বই “মেঘপরী ও ছায়াতরু” তাঁর প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ। প্রথাগতভাবে দুই মলাটের মধ্যে
একই শাখার সাহিত্যসৃষ্টি থাকার কথা যদি না পৃথুলাকৃতি রচনাসমগ্র হয়। কিন্তু নতুন লেখার
উচ্ছ্বাসে বোধহয় ডজনখানেক গল্প রচনা পর্যন্ত অপেক্ষা সয়নি, সেই সময়কার যাবতীয় সম্ভার
প্রথম বইয়েই ঢেলে দিতে চেয়েছিলেন। এই গ্রন্থে ৫টি গল্প ও ৫০টি পদ্য – ছড়া ও কবিতা।
সংখ্যা নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন বলেই কি এই পাঁচ-পঞ্চাশ বিন্যাস চয়ন, নাকি নিছক সমাপতন
জানি না। চলে আসি রচনাগুলির অন্দরে।
প্রথম গল্প ‘মেঘপরী ও ছায়াতরু’ আসামের চা বাগান পরিদর্শনে
যাওয়া এক আধিকারিক অনুপমের দৃষ্টিতে। অনুপম ঠিক কোন ধরণের সংস্থায় কাজ করে, তা পরিষ্কার
নয়। হয়তো লেখকের মতো ব্যাংক অফিসার। কারণ অসমীয়া ভাষা ও চা বাগান সংক্রান্ত ধ্যান ধারণা
দেখে সেটাই অনুমান করে নেওয়া যায়। গল্পে অনুপম যে উদ্দেশ্যে লুইডং টি এস্টেটে গেছে,
সেই কাজের চেয়ে অসমীয়া আতিথেয়তার বিবরণ অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। একধরণের মুগ্ধতা ঝরে পড়ে
অসমীয়া জাতি ও তার সংস্কৃতির প্রতি। সেটা পড়তে ভালোই লাগে বিশেষত ‘মেঘপরী’ যে এক অসমীয়া
সুন্দরী। সেই মুগ্ধতা আসামে ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাসের বিপরীত ছবি আঁকতেও প্রয়াসী
হয়। আসামে নাকি আগে বাংলায় পড়াশুনো করা বাধ্যতামূলক ছিল, অসমীয়ারা নিজভূমে পরবাসী ছিল,
রবীন্দ্রনাথ অসমীয়াকে বাংলারই একটি অপভ্রংশ বা উপভাষা হিসাবে সনাক্ত করে অপমান করেছেন
ইত্যাদি। তাই ১৯৬১-র ভাষা আন্দোলন নাকি ছিল অসমীয়া ভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
একজন বাঙালী হয়ে অসমীয়া দৃষ্টিভঙ্গীতে ভাষার সংঘাতকে
অসমীয়া দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও দেখানোর মধ্যে অভিনবত্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সত্যতা নিয়ে
প্রশ্ন উঠবেই। রাজ্যের নাম আসাম হলেও তা যে বাংলার একটি বৃহৎ অংশের সঙ্গে অহোম রাজ্য
জুড়ে তৈরি ও তাই আসামের আদি বাসিন্দাদের অধিকাংশই যে বাঙালী, আর অসমীয়া ভাষাকে এক ব্যাপটিস্ট
মিশনারী দম্পতি পৃথক ভাষা হিসাবে পরিচয় দেওয়ার আগে তাকে বাংলার উপভাষাই ভাবা হত এবং
তা নিয়ে অহোমদেরও কোনও অসন্তোষ ছিল না, এই ইতিহাস খুব বেশি মানুষের জানা নেই। কিন্তু
অসমীয়াদের ঈর্ষাজাত তীব্র বাঙালী বিদ্বেষ যে বারবার একক অসমীয়া ভাষাকে সরকারি ভাষা
ও শিক্ষার মাধ্যম বানাতে চেয়েছে জোর করে বাংলাভাষাকে দমন করার উদ্দেশ্যে, ১৯৪৮ থেকে
৮০-র দশক পর্যন্ত একের পর বাঙালী গণহত্যা করে গেছে, তা না জানার কথা নয়। বৈজ্ঞানিক
পরিভাষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাভাষার ওপর নির্ভরতা থেকে থাকলে সেটা ছিল অহমীয়া উপভাষার
অপারগতা, বাঙালী সাম্রাজ্যবাদ নয়। লেখক নিজেই তুলে ধরেছেন অসমীয়া স্বামীর স্ত্রীর বাংলা
সাহিত্য পাঠ নিয়ে কী পরিমাণ বিতৃষ্ণা, আসামে গিয়ে দরকারে হিন্দী বা ইংরেজীতে কাজ চালানোর
আর ভুলেও বাংলা না বলার সতর্কবার্তা। সবটাই কুশীলবদের জবানিতে। তাই অসমীয়াদের বাঙালী
বিদ্বেষের প্রতি লেখকের সমর্থন প্রতিফলিত হলেও পাঠক যা বোঝার বুঝে নিক -- এই নৈর্ব্যক্তিকতাও
রয়েছে যা লিখনশৈলীর একপ্রকার পারদর্শিতা হিসাবেই ধরা যায়।
যাইহোক, ইতিহাস সরিয়ে রেখে গল্পেই থাকি। মেঘপরীর নাম
মেঘমালা। উচ্চ পদস্থ ম্যানেজারের স্ত্রী। বরের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন তার ইঙ্গিত নেই,
তবে চা বাগান পরিদর্শক অনুপম যে তার মনে কিছুটা স্থান পেয়েছে, তার আভাস আছে। সেই মেঘমালা
বা অনুপমের মেঘপরীর কাছে গৃহকর্তা হল ছায়াতরুর মতো, যা প্রখর রোদ থেকে চা গাছের কচি
পাতাগুলিকে রক্ষা করে। মেঘমালাই বলেছিল, “আকৌ আহিব” – আবার আসবেন। কলকাতা ফিরে অনুপম
একদিন সংবাদপত্রে দেখে মেঘমালার স্বামী দুর্ঘটনায় মৃত। গল্প এখানেই শেষ।
গল্পের সূচনা, ঘটনার বিবরণ, অসমীয়া জীবনের টুকরো ছবি
পড়তে ভালো লাগলেও গল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু আলগা ভালোলাগা একজন পরিচিতার বৈধব্য
তো গল্প হতে পারে না, তাকে গল্প করে তুলতে হলে কিছু মোচড় ও বিবরণের প্রয়োজন হয়। অন্তত
‘মেঘপরী’র জীবন থেকে তার ‘ছায়াতরু’ সরে যাওয়াটা যদি ভাষাতেও উল্লেখ করতেন, তাহলে শব্দ
প্রয়োগের প্রভাবেও পাঠকের গল্পটা ধরতে সুবিধা হত। কিন্তু প্রারম্ভ ও বিস্তারে যথেষ্ট
আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় চরিত্র দুটির সম্পর্কে অস্পষ্টতা, ঘটনার মোচড় ও
উপযুক্ত ন্যারেশনের অভাব ‘মেঘপরী ও ছায়াতরু’কে প্রার্থিত গন্তব্যে পৌঁছোতে দিল না।
অথচ বিষয়টিতে সম্ভাবনা ছিল প্রচুর। হয়তো মুগ্ধতার পাশাপাশি বাস্তবের রূঢ়তাকেও গল্পে
ধারণ করতে পারলে ভালো হত।
দ্বিতীয় গল্প ‘পৌত্রের প্রতি পত্র’ হল আক্ষরিক অর্থেই
এক দাদুর তাঁর অদেখা নাতিকে লেখা চিঠি যাতে তাঁর নাতিকে দেখার আকূলতা ফুটে ওঠে। পুত্রের
সঙ্গে কিছু কারণে তৈরি হয়েছিল দূরত্ব। সেই পুত্র ও পুত্রবধূ বিগত হওয়ায় বৃদ্ধ তাঁর
পৌত্রকে পারিবারিক সম্পত্তি দিয়ে শান্তি পেতে চান – এটাই চিঠির বিষয়বস্তু ও গল্পের
নির্যাস। সাধুভাষার সাধু প্রয়োগকে সাধুবাদ। তবে এখানেও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার ততটা হয়নি।
কিছুটা অভিনবত্ব আছে ‘চিয়ার লিডার’ গল্পের বিষয়বস্তুতে,
যেখানে কেরিয়ার হিসাবে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যা পাখি প্রথাগত পেশার পরিবর্তে
বেছে নিচ্ছে চিয়ার লিডারের পেশা। বাবার মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি কাজ করলেও মা সংস্কারহীন।
সংসারে ভদ্রমহিলার দাপটও আছে, কৃচ্ছসাধনও। বাড়তি দুটো পয়সার জন্য যিনি পেয়িং গেস্ট
রাখার অতিরিক্ত পরিশ্রম নিজের কাঁধে তুলে নেন, তিনিই স্বামীকে বোঝাতে পারেন, চিয়ার
লিডার মেয়ে মানেই স্বল্পবসনা হয়ে পাশ্চাত্য অঙ্গভঙ্গী নয়, ভারতীয় ধ্রূপদী নৃত্য প্রদর্শনও
হতে পারে। চাকরি লাভ যত সহজে, প্রেমকে অঙ্কুরিত হতে দেওয়ার আগেই বিদায় নেওয়াও ততটাই
অনায়াসে। পাখির ছেড়ে যাওয়া ভালোলাগা অতনুর জীবনেও জীবিকা বা সম্পর্ক কোনও কিছু নিয়েই
টানাপোড়েন নেই। দু’জনেরই সবকিছু মসৃণ ও একেবারে সমতল। ঘটনাকে ছোটগল্প হতে হলে হয়তো
আরও কিছু বিনির্মাণ প্রয়োজন ছিল।
হিমাচলপ্রদেশের খাজিয়ার পর্যটন কেন্দ্রে ‘হঠাৎ দেখা’
মাঝবয়সী অষ্টশেখরের সঙ্গে তাঁর প্রাক্ত ছাত্রী মণিকার। একদা মাদ্রাজে দুটি বাঙালী পরিবার
পরস্পরকে আবিষ্কার করেছিল। সেইসূত্রে অঙ্কে কাঁচা মণিকাকে অঙ্ক পড়ানোর দায়িত্ব পায়
অষ্টশেখর। তারপর চাকরিতে বদলির পর মাস্টারমশাই ভুলে যায় ছাত্রীকে। ছাত্রীর মনে স্মৃতি
কিছুদিন ঠিকানা না পাওয়া চিঠি হয়ে ও তারপরেও ছত্রিশ বছর ধরে তার অবশেষ হয়ে রয়ে গেছে।
মাস্টারমশাই ঠিকানা দিতে ভুলে যাওয়ায় ছাত্রী তিন মাস অপেক্ষা করে চিঠি ছিঁড়ে ফেলার
কথা ছত্রিশ বছর পর জানায় প্রৌঢ় শিক্ষককে হঠাৎ সামনে পেয়ে। আর নিজের একমাত্র সন্তান
পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও ঘটনার বারো বছর পর সেই এক ‘হঠাৎ দেখা’ সুত্রেই উচ্চারিত
হয়। নিজেকে একা মনে করেন না মণিকা, অন্তত তেমনটাই সে দাবি করেন ‘হঠাৎ দেখা’ পাওয়া গৃহশিক্ষকের
কাছে, যিনি তাকে মনে রাখেননি। স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকা এক নারীর একাকীত্ব খুব সূক্ষ্ম
ইঙ্গিতে সার্থক হয়েছে।
পুজোর হৈহল্লা আনন্দমুখর দিনগুলির মধ্যেই হায়দরাবাদে
দুটি বাঙালী পরিবারের দেখা, দুটি তরুণ তরুণীর হৃদয় বিনিময় ও শুভ পরিণয়। যেন নিরবছিন্ন
আনন্দের দিন পার করে এসে কলকাতার সেক্টর ফাইভে দু’জনেরই বদলি ও ইএম বাইপাসের ধারে তিন
শয়নকক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাট কেনা। বিদ্যাশিসবাবুর গল্পে জীবনের ক্লেশ জটিলতাগুলো তেমন
গুরুত্ব পায় না, এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। এক টুকরো গ্রাম্য জীবনের ছবি পাওয়া গেল দম্পতির
বর্তমান কালের এক লং ড্রাইভে। কিন্তু ফেরার পথেই ক্যাঁচ্ করে ব্রেক কষার মতো এক প্রশ্নের
মুখোমুখি এনে দাঁড় করান। পুজোর আনন্দ কি শুধু ধনীদের জন্য বরাদ্দ? জীবিকাহীন শিক্ষিত
পুরুষদের কি শখ আহ্লাদ বা আপনজনেদের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকতে নেই? এতটুকু অশ্লীল ভাষা
ব্যবহার না করে শুধু তাদের দাবি করা চাঁদাটুকু আদায় করে বছর খানেকের জন্য বিরক্ত না
করার গ্যারেন্টি দেওয়া কতগুলো গুণ্ডা যেন একটা শিক্ষা দিয়ে গেল ‘বাই পাস’ গল্পে। বাই
পাস নামকরণও সার্থক তাদের বার্তায়।
ফেসবুক
পোস্টের মাধ্যমে বিদ্যাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছড়া ও কবিতা নির্দিষ্ট মহলে এত জনপ্রিয়,
আর তাঁর আত্মীয় পরিচিতরাও যে হারে কণ্ঠ দিয়ে ভিডিও করে সেগুলো মেলে ধরছেন, যে তাঁর
পদ্য নিয়ে লিখতে একটু সংকোচই হচ্ছে। কারণ বিষয় ও ছন্দ নিয়ে পরীক্ষা করতে ভালোবাসেন
বোঝা গেলেও কবিতা ও ছড়াগুলি শৈলীতে সমসময় থেকে পিছিয়েই বলা যায়, যদিও বিষয় একেবারে
আধুনিক। মূলত করোনাজনিত লকডাউনের ফলে মানুষের বন্দীদশা ও পশুপাখির স্বাধীনতার ছবি ফুটে
উঠেছে অধিকাংশ পদ্যে। শব্দচয়ন অনাধুনিক হলেও বিষয়বস্তুতে সার্থক ব্যঙ্গ ফুটে ওঠে ‘অ-মানুষ’
কবিতায়। বিশুদ্ধ রঙ্গ আছে ‘এ যুগে নন্দলাল’ ছড়ায় যার সাথে সাধুভাষা ও পুরোনো শব্দ বেশ
মানানসই। ‘সমাসের সমস্যা’ ছড়ায় ব্যকরণের একই সূত্রের যে অর্থবৈচিত্র্য বা বিভ্রাট দেখিয়েছেন,
তা বেশ অভিনব। তেলমাখা বাঁশ বেয়ে বাঁদরের ওঠানামার অঙ্ক নিয়ে ভারী উপভোগ্য ছড়া ‘পাটীগণিত’।
ভাষাজ্ঞান ও বিজ্ঞান যে পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে, তার প্রমাণ ‘গতিজাদ্য স্থিতিজাড্য’,
‘আলো আমার আলো’, ‘উত্তাপের পঞ্চপদী’, ‘তৃতীয় সূত্র’ ইত্যাদি আরও কয়েকটি পদ্য। কোনও
কোনওটির ছন্দের বুনন বেশ ভালো, কোথাও বা অন্তমিলের খাতিরে মাত্রার দিকে সজাগদৃষ্টি
থাকেনি। ভাবনায় নতুনত্ব থাকলেও সময়োচিত প্রকরণের অভাবে অধিকাংশ পদ্যের যেন উত্তোরণ
ঘটেনি। তবে এগুলি থেকে চিন্তার খোরাক নিয়ে নতুন সৃষ্টি অনুপ্রেরণা পাওয়া যেতে পারে।
বিদ্যাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা ও গদ্যের চলন সুখপাঠ্য।
অভিজ্ঞতা বহুবিচিত্র, ভাষা আহরণের ক্ষমতা তো রীতিমতো ঈর্ষণীয়। এই উপাদান নিয়ে অনেক
স্মরণীয় কাহিনী রচনা করা সম্ভব যদি জীবনের অপ্রিয় সত্যগুলিও তুলে ধরার সাহস ও জটিলতাগুলিকেও
ফুটিয়ে তোলার পরিশ্রম করা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন বাঙালী দেশভাগের অতীত স্মৃতি এড়িয়ে
যেতে পছন্দ করে, সাহিত্যসৃষ্টির জন্য অতটা সাবধানী না হলেও চলে। যেমন পর ভাষা-সংস্কৃতির
প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতার কারণে নিজেদের সংকটের ইতিহাস বিস্মৃত হওয়ার দরকার নেই।
লেখকের দ্বিতীয় গদ্য-পদ্য মিশ্র সংকলন ‘বালুকাবেলায়’-এরও আলোচনা করেছি ইতোপূর্বে। একটি
কথা দুটি গ্রন্থ সম্পর্কেই প্রযোজ্য – ভালো গল্প লেখার জন্য যে বুনন ও পরিমিতিবোধ প্রয়োজন,
তা বিদ্যাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটোই আয়ত্তে। তাই আগামীতে পাঠক আরও সমৃদ্ধ গল্পের আশায়
থাকতে পারেন।